• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০১৮, ০৯:০৪ এএম

রাজনৈতিক যেকোনো পরিস্থিতিতে বই বিতরণে বিকল্প পরিকল্পনা

রাজনৈতিক যেকোনো পরিস্থিতিতে বই বিতরণে বিকল্প পরিকল্পনা

 

একাদশ সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছানোর বিষয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  তাই যেকোনো রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বই বিতরণে বিকল্প পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষে সারাদেশের প্রাক-প্রাথমিক থেকে শুরু করে নবম শ্রেণি পর্যন্ত ৪ কোটি ২৬ লাখ ১৯ হাজার ৮৬৫ জন শিক্ষার্থীর মধ্যে ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ কপি বই বিরতণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।  এ লক্ষে প্রায় সব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) অধীনে এরইমধ্যে সব বই ছাপা, বাঁধাই সম্পন্ন হয়েছে।  ভারতে কাজ পাওয়া প্রতিষ্ঠানও তাদের বই দেশে পাঠিয়ে দিয়েছে।  জেলা-উপজেলা পর্যায়ে বই পাঠাতে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন এনসিটিবির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

বছরের শেষে নির্বাচন থাকায় সুষ্ঠুভাবে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানোর বিষয়ে কিছুটা শঙ্কা তৈরি হয়েছে।  নির্বাচন পেছানোসহ ৭ দফা নিয়ে সরকারের সঙ্গে সংলাপের পর জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়টি শঙ্কা আরো ঘনীভূত করছে।  জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট যে কোনো সময় আন্দোলন ঘোষণা করতে পারে; যা শেষ মুহূর্তে সহিংসতায় রূপ নিতে পারে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন।

এরইমধ্যে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি)।  আগামী ২৩ ডিসেম্বর ( রোবববার) ভোট অনুষ্ঠিত হবে।  
তবে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচন ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কর্মসূচির মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিতে কোনো সমস্যা হবে না।  আর যদি রাজনৈতিক আন্দোলনে কোনো সহিংস পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় তাহলে বই বিতরণে বিকল্প পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে।

এনসিটিবির কর্মকর্তারা বলছেন, তারা এরইমধ্যে বিভিন্ন উপজেলায় বই পাঠিয়ে দিয়েছেন।  আগামী ৯ ডিসেম্বরের মধ্যে এ বই পাঠানোর কাজ শেষ হয়ে যাবে। কোনো রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টির আশঙ্কা থাকলে নতুন বছরের আগেই বই বিতরণ করা হতে পারে।

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার এনসিটিবিতে এক অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেছেন, নির্বাচনের বছর হওয়ায় এ বছরটা ব্যতিক্রমী।  এবছরও যেন জানুয়ারির এক তারিখে শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দেয়া যায়, সেজন্য আমরা আগে থেকেই পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করেছি।  সময়মতো বই তৈরি, ছাপানো ও পাঠানো বেশ ঝুঁকিপূর্ণ কাজ ছিল।  এ পরিকল্পনা অনুযায়ী এনসিটিবি সাফল্যের সঙ্গে তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়ন করেছে।’

শিক্ষামন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, বই বিতরণে কেউ বাধা সৃষ্টি করবে না।

এনসিটিবি জানিয়েছে, ২০১৯ শিক্ষাবর্ষের জন্য ৩৫ কোটি ২১ লাখ ৯৭ হাজার ৮৮২ বই ছাপানো হয়েছে।  এর মধ্যে ১ কোটি কপি বই ভারতে ছাপাতে দেওয়া হয়েছিল।
এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে ৬৮ লাখ ৫৬ হাজার ২০ কপি, প্রাথমিকে ৯ কোটি ৮৮ লাখ ২ হাজার ৮৯৯ কপি, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা (এমএলই) প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণির পাঠ্যপুস্তক ২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ কপি, ইবতেদায়িতে দুই কোটি ২৫ লাখ ৩১ হাজার ২৮৩ কপি, দাখিলে তিন কোটি ৭৯ লাখ ৫৮ হাজার ৫৩৪ কোটি কপি, মাধ্যমিকে (বাংলা ভার্সন) ১৮ কোটি ৫৩ হাজার ১২২ কপি, মাধ্যমিকে (ইংরেজি ভার্সন) ১২ লাখ ৪৭ হাজার ৮২৬ কপি, কারিগরিতে ১২ লাখ ৩৫ হাজার ৯৪৮ কপি, এসএসসি ভোকেশনালে ২৮ লাখ ৮১ হাজার ৪৭৩ কপি, দাখিল ভোকেশনালে এক লাখ ৪৩ হাজার ৮৭৫ কপি, ব্রেইল পাঠ্যপুস্তক ৫ হাজার ৮৫৭ কপি এবং সম্পূরক কৃষি শিক্ষা (ষষ্ঠ থেকে নবম) ১ লাখ ২৪ হাজার ২৬১ কপি বই প্রকাশ করা হয়েছে।

২০১৯ শিক্ষাবর্ষে প্রাক-প্রাথমিকে ৩ কোটি ৪২ লাখ ৮ হাজার ১০ জন, প্রথমিকে ২ কোটি ৩ লাখ ৭৭ হাজার একজন, ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ভাষা (এমএলই) প্রাক-প্রাথমিক ও প্রাথমিক শ্রেণির ৯৮ হাজার ১৪৪ জন, ইবতেদায়িতে ৩১ লাখ ৫১ হাজার ৯৮৪ জন, দাখিলে ২৫ লাখ ৯৯ হাজার ১৪৮ জন, মাধ্যমিকে (বাংলা ভার্সন) ১ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ৬০৮ জন, মাধ্যমিকে (ইংরেজি ভার্সন) ৭৬ লাখ ৮০০, কারিগরিতে ২ লাখ ৩১ হাজার ৩১৩ জন, এসএসসি ভোকেশনালে ২ লাখ ৩৯ হাজার ১২ জন, দাখিল ভোকেশনালে ১০ হাজার ৯৫ জন, ব্রেইলে ৭৫০ এবং সম্পূরক কৃষি শিক্ষায় (ষষ্ঠ থেকে নবম) ৭৫০ জন শিক্ষার্থীকে নতুন বই দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে এনসিটিবির সদস্য প্রফেসর ডা. রতন সিদ্দিকী বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।  ইতিমধ্যে আমরা বিভিন্ন উপজেলায় বই পাঠানো শুরু করেছি। আশা করছি নির্ধারিত তারিখের মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাতে বিনামূল্যে নতুন বই তুলে দিতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘সামনে নির্বাচন,আবার রাজনৈতিক আন্দোলনও হতে পারে।  তাই বিষয়টি নিয়ে আমাদের বাড়তি পরিকল্পনা রয়েছে।  তবে আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না। ’

প্রসঙ্গত, ২০১০ শিক্ষাবর্ষ থেকে বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণ শুরু করেছিল বর্তমান সরকার।

এএন / জেডএস