• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:৪২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৩১, ২০২১, ১২:৪২ পিএম

ঝুঁকি নিয়ে এখনও পাহাড়েই, আইনগত ব্যবস্থা নেবে মেয়র 

ঝুঁকি নিয়ে এখনও পাহাড়েই, আইনগত ব্যবস্থা নেবে মেয়র 

চট্টগ্রামে অবৈধভাবে প্রচুর পরিমাণ পাহাড় কাটার ফলে বর্ষা মৌসুমে পাহাড় ধসে অনেক প্রাণহাণির ঘটনা ঘটছে। তবে জান মালের সুরক্ষায় পাহাড়ি বসবাসকারীদের সরিয়ে নিলেও আবারও ফিরে আসে। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী পাহাড় ধস রোধে নগরীর সব পাহাড় ঘেঁষে পরিকল্পিত রিটানিং দেয়াল নির্মাণের প্রস্তাব করেন। এমন দেয়াল ছাড়া কোনো পাহাড়ের আশেপাশে কোনো ধরনের স্থাপনার নকশা অনুমোদন না করতে সিডিএর প্রতি অনুরোধ করেন মেয়র।

তিনি বলেন, এতে পাহাড়ের সুরক্ষা হবে এবং অতিবৃষ্টিতে পাহাড় থেকে মাটি নেমে খাল-নালা-নদর্মা ভরাট হওয়া বন্ধ হবে। প্রশাসনসহ নগর উন্নয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট সকল সংস্থাকে পরিবেশ ও পহাড় সুরক্ষায় সব ধরনের কৌশলগত পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি। তিনি পরিবেশ অধিদপ্তর পরিচালককে ব্যক্তিগত পাহাড়ের সুরক্ষা দেয়াল না দিলে আইনগত ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন। 
এছাড়া নগরীর গুরুত্বপূর্ণ পাহাড়গুলোতে সুরক্ষা দেয়াল দিতে সিটি করপোরেশন একটি প্রকল্প নেবে বলেও জানিয়েছেন। 
পাহাড় পরিদর্শনে মেয়র রেজাউল বলেন, মৃত্যুভয়কে পরোয়া না করে যারা পাহাড়ের গায়ে বা পাদদেশে বসতি গড়েছেন, জনস্বার্থে ও জানমাল রক্ষার স্বার্থেই এসব গুড়িয়ে দেওয়া হবে।

অন্যদিকে গ্যাস, ওয়াসা, পিডিবিসহ বিভিন্ন সেবামূলক প্রতিষ্ঠাগুলোর সংযোগ সব সময় অব্যাহত আছে। এ কারণেই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থান থেকে সরতে চায় না বসবাসকারীরা। আবার পাহাড় কাটলেও পরিবেশ অধিদফতরের মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু বর্ষা আসার পূর্বে পাহাড় থেকে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাসরতদের সরাতে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা শুরু হয়।
বিভিন্ন সময়ে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে মাইকিং ও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসরতদের সরিয়ে নিয়ে আশ্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হলেও পাহাড় ছেড়ে যেতে চায় না কেউ।  গত বৃহস্পতিবার রাতের বৃষ্টিতে খুলশী থানাধীন গরীবুল্লাহ শাহ মাজার সংলগ্ন কুসুমবাগ আবাসিক এলাকায় পাহাড়ের মাটি ধসের ঘটনা ঘটেছে। তবে স্থানীয়দের অভিযোগ বৃষ্টি হলেই পাহাড় কাটে ভূমিদস্যুরা।
পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস ঠেকাতে পারছে না জেলা প্রশাসন। টানা কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণের কারণে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ের মাটি ধসে আবারও মৃত্যুর রেকর্ড গড়তে পারে চট্টগ্রাম। তাই মৃত্যুকূপ থেকে বাঁচাতে জেলা প্রশাসনের বিভিন্ন টিম ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে মাইকিং অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু যাদের কারণে পাহাড় ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেসব ভূমিদস্যুদের আইনের আওতায় আনছে না পরিবেশ অধিদফতর। এমন অভিযোগ চট্টগ্রামে ২০০৭ সালে রেকর্ডসংখ্যক মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই।

ঝুঁকিপূর্ণ এসব পাহাড়ি এলাকার মধ্যে রয়েছে ফয়েস লেকস্থ রেলওয়ের মালিকানাধীন ও কনকর্ড গ্রুপকে লিজ দেয়া পাহাড়। ফিরোজশাহর সী ওয়ার্ল্ড সংলগ্ন পাহাড় যেমন ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি শান্তিনগর, জিয়ানগর, মধ্যমনগর ও মুজিবনগর এলাকায়ও পাহাড় কাটা হয়েছে। মতিঝর্ণা এলাকায় ওয়াসার ট্যাংকির পাহাড়, রেলের পাহাড়, আকশাহ এলাকায় রেলের পাহাড়, জাকির হোসেন রোড সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের মরা ঝর্ণার পাহাড়েও ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাস করছে হত দরিদ্র অনেক পরিবার। ফয়স লেনের মধুশাহ পাহাড়, বায়েজিদের মিয়ার পাহাড়সহ জালালাবাদ মৌজায় জেলা প্রশাসনের খাস জমিগুলোও পাহাড়ের কাটা অংশে রয়েছে।

মতিঝর্ণার বাটালি হিল, পোড়া কলোনী, একে খানের পাহাড়, আতুরার ডিপো এলাকায় আমিন জুটমিল সংলগ্ন পাহাড়, ভেড়াফকিরের পাহাড়সহ বেশকিছু ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় রয়েছে। খুলশী এলাকায় মধুশাহ পাহাড় এমনভাবে কাটা হয়েছে যে কোন মুহূর্তে খাড়াভাবে ধসে পড়ে প্রাণহানির আশঙ্কা করছে জেলা প্রশাসন।

অবাধে পাহাড় কাটলেও পরিবেশ অধিদফতরের তৎপরতা না থাকায় এমনকি সহযোগিতা থাকায় চট্টগ্রামের ভারসাম্য যেমন নষ্ট হচ্ছে, তেমনি ভূমিদস্যুরা ভাড়া ও প্লট বাণিজ্যে মেতে উঠেছে। পাহাড়ের মাটি ধসে পড়ছে অবৈধভাবে মাটি কেটে ভূমিদস্যুদের প্লট বাণিজ্য করার কারণে। বিভিন্ন পদ্ধতিতে বিশেষ করে বর্ষায় পাহাড়ের চূড়ায় গর্ত করে পানি জমিয়ে মাটি ধসের ঘটনা ঘটানো হচ্ছে। গত কয়েকদিনের ভারী বর্ষণে পাহাড়ের মাটি ধসের ঘটনা চট্টগ্রামের বেশিরভাগ এলাকায় ঘটেছে।

পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস সরিয়ে নেয়া প্রসঙ্গে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ওমর ফারুক বলেন, পরিবেশ অধিদফতরও পদক্ষেপ না নেয়ায় বৃষ্টি হলে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড় থেকে বসবাসকারীদের সরাতে দৌড়াতে হয় জেলা প্রশাসনকে। তবে পাহাড় খেকোদের আইনের আওতায় নিয়ে আসলে ভূমিদস্যুদের রোধ করা সম্ভব হত। প্রভাবশালীরা পাহাড় কেটে অবৈধ দখল নিশ্চিত করছে। চালাচ্ছে প্লট ও ভাড়া বাণিজ্য। ফয়স লেকের পাহাড় কেটে চৌচির করলেও রেল কিংবা কনকর্ড গ্রুপের কোন নজরদারি নেই। তবে জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সম্মিলিতভাবে চট্টগ্রামের সতেরটি ঝুঁকিপূর্ণ এলাকায় মাইকিং অব্যাহত রেখেছেন। এসবঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়ে অবস্থানরতদের অতি বৃষ্টিতে সরিয়ে নিতে মাইকিং যেমন করা হয়, তেমনি আশ্রয় কেন্দ্রও গড়ে তোলা হয়েছে।

নগরীতে ১৭টি ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়সহ নতুন করে রেলওয়ের মালিকানাধীন ফয়’স লেকের পাহাড়ও ভূমিদস্যুরা কেটে ফেলছে রাতের আঁধারে। বায়েজিদ ফৌজদারহাট লিংক রোডে এশিয়ান উইমেন ইউনির্ভাসিটি সংলগ্ন এলাকায় কেটে চৌচির করে ফেলা হয়েছে পাহাড়। রাস্তা নির্মাণের নামে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রকল্প পরিচালক পাহাড় কাটায় ১০ কোটি টাকা জরিমানা গুণতে হয়েছে। গত বছরের ফেব্রুয়ারীতে পরিবেশ মন্ত্রীর পরিদর্শনের কারণেই এ সড়কে দেদারছে পাহাড় কাটার অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। প্রকাশ্য দিবালোকে পাহাড় কাটার কারণে এমন বার্তায় হস্তক্ষেপ করেছে পরিবেশ অধিদফতর।

জাগরণ/এমআর