• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৯, ২০২১, ০২:৫৭ পিএম

মুখোমুখি মেয়র ও সিডিএ চেয়ারম্যান 

চট্টগ্রামে খাল-নালাগুলো এখন মৃত্যুকূপ

চট্টগ্রামে খাল-নালাগুলো এখন মৃত্যুকূপ

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম 
চট্টগ্রামে খাল এবং নালাগুলো মৃত্যুকূপ হয়ে উঠছে। মাত্র চার মাসে চারজনের প্রাণহানির ঘটনা নগরবাসীর বিবেককে নাড়া দিয়েছে। বিষয়টিকে দুর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ নগরবাসী। তারা বলেছেন, এ ধরনের ঘটনা স্রেফ মার্ডার। এই দায় কেউ এড়াতে পারেন না। যেভাবে একের পর এক ঘটনা ঘটছে তাতে এরপর দুর্ভাগ্য কার, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা।এদিকে নালার পড়ে মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থান নিয়েছে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ তারা এই ঘটনা একে অপরকে দায়ী করেছেন 

এদিকে আগ্রাবাদ বাদামতলী মোড়ে নালায় পড়ে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মৃত্যুর জন্য এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠানের অবহেলাকে দায়ী করেছেন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। তিনি বলেন, আগ্রাবাদে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ করছে সিডিএ। তাই সেখানে মেইনটেনেন্সসহ অন্যান্য দায়িত্ব তাদের। দুর্ঘটনার পর আমি নিজেও সেখানে পরিদর্শন করেছি। দেখেছি, ফুটপাত কেটে খাল বরাবর দেড় ফুটে নিয়ে আসা হয়েছে। সেখানে নিরাপত্তার কোনো ব্যবস্থা করা হয়নি। এ অবস্থায় রাতে না, দিনেও যে কেউ পড়ে মারা যেতে পারে। যারা সেখানে কনস্ট্রাকশনের কাজ করছে এবং সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল প্রকৌশলীদের অবহেলায় দুর্ঘটনা ঘটেছে।

গত মাসে মুরাদপুরের নালায় পড়ে প্রাণহানি প্রসঙ্গে মেয়র বলেন, মুরাদপুরে সিডিএর খাল খনন প্রকল্প চলছে। সেখানে তারা ব্যারিয়ার বা অন্য কোনো প্রতিবন্ধক দেয়নি। সেজন্য পানিতে খাল-নালা একাকার হয়ে দুর্ঘটনা ঘটে। একটা লাল পতাকা দিয়ে বাঁশের খুঁটি দিলেও দুর্ঘটনা ঘটত না। তাই আমার আহ্বান থাকবে, যে কোনো সেবা সংস্থাকে উন্নয়ন কাজ করার সময় অবশ্যই নিরাপত্তা নিশ্চিত করে কাজ করতে হবে। মানুষের জীবন বাঁচানোর জন্য যা করা দরকার তার ব্যবস্থা নিতে হবে।

ভবিষ্যতে দুর্ঘটনা এড়াতে অতিরিক্ত ঝুঁকি আছে এমন স্থানগুলোর তালিকা তৈরি করে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে মেয়র বলেন, সিটি কর্পোরেশনের যেসব ড্রেন আছে তার তালিকা করার জন্য প্রকৌশলীদের নির্দেশনা দিয়েছি। যেখানে দরকার সেখানে স্ল্যাব বা গ্রিল লাগাতে বলে দিয়েছি।

এদিকে গতকাল সকালে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মেয়র। এ সময় তিনি বলেন, আধুনিক নগর গড়তে উন্নয়ন করতে হবে। উন্নয়ন কর্মকাণ্ড যেই করুক, নাগরিক দুর্ভোগ ও ভোগান্তি করা যাবে না। সিটি কর্পোরেশনসহ যেসব সেবা প্রতিষ্ঠান উন্নয়ন কাজ করছে তাদের সবার মধ্যে সমন্বয় না হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আরো ঘটবে। সাদিয়ার মৃত্যু অনাকাক্সিক্ষত উল্লেখ করে এজন্য তিনি দুঃখ প্রকাশ করেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে মেয়র বলেন, ড্রেন ময়লায় ভর্তি ছিল, এটা সত্য। যেহেতু কাজ চলছে, সমস্ত ময়লা তো ওখানে গিয়ে পড়ছে। এখানে মেইনটেনেন্সের সব দায়িত্ব তো সিডিএর। ড্রেনে ময়লা আছে, কিন্তু ড্রেনের পাশে ঘেরা ছিল না, রেলিং ছিল না, সেগুলো থাকলে তো এই দুর্ঘটনাটা ঘটত না। এত বড় এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ চলছে, ময়লা পড়বেই এখানে। কিন্তু আমাদের রেলিং ছিল, স্ল্যাবও ছিল, এগুলো তো সব কাজ করতে গিয়ে নষ্ট করে ফেলেছে।
অপর দিকে সিডিএ চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষ  বলেছেন, তারা (চসিক) নালা পরিষ্কার করবে না, আবার কিছু ঘটলেই সিডিএর দোষ দেয়। সিডিএর দোষ ধরা ছাড়া মনে হয় সিটি কর্পোরেশনের আর কোনো কাজ নাই। তিনি বলেন, ময়লা পরিষ্কার না করার কারণে সেখানে পানি কতটুকু ছিল বোঝা সম্ভব হয়নি। ভালোমতো পরিষ্কার করলে দুর্ঘটনা ঘটত না। তারপরও যে ঘটনা ঘটেছে সেটা অনাকাক্ষিত। এটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি। নিহতের আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি এবং পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

‘চশমা খালের মুরাদপুর অংশে ব্যবসায়ী নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে স্ল্যাব বা ব্যারিয়ার না থাকার কারণে। এজন্যও সিডিএকে দায়ী করা হয়েছিল’। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সিডিএ চেয়ারম্যান বলেন, সিডিএ তো মাত্র দুই বছর ধরে কাজ করছে। এর আগে ৩০ বছর ধরে তো সিটি করপোরেশন কাজ করেছে

সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানায়, নগরীর বহু খালেরই কোন অস্তিত্ব নেই। বহু খালই দখল হয়ে গেছে। খাল-নালা হয়ে গেছে সংকীর্ণ। নগরীর অধিকাংশ নালা ময়লা আবর্জনায় ভরাট হয়ে গেছে। বেহাল অবস্থায় থাকা এসব খাল-নালায় একের পর এক মানুষের প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে গত ২৫ আগস্ট মুরাদপুর মোড়ে নালায় পড়ে নিখোঁজ হওয়া ব্যবসায়ী সালেহ আহমদের কোন হদিশ একমাসেও মেলেনি। সালেহ আহমদ যেদিন নালায় পড়ে নিখোঁজ হন, ওইদিনই সিটি কর্পোরেশন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল যে, উন্মুক্ত খাল ও নালা স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেয়া হবে। কিন্তু গত এক মাসেরও বেশি সময় পার হলেও নগরীর অন্যান্য স্থান তো দূরের কথা মুরাদপুরের সেই দুর্ঘটনাস্থলেও ব্যারিয়ার নির্মিত হয়নি। রশি দিয়ে ঘিরে স্থানটিকে চিহ্নিত করে রাখা হয়েছে।

নগরীর কয়েকশ’ কিলোমিটার খাল, নালা অরক্ষিত অবস্থায় রয়েছে। বর্ষাকালে বৃষ্টির সময় এসব খাল-নালা একাকার হয়ে যায়। গত ৩০ জুন চশমা খালে যাত্রীবোঝাই সিএনজি টেক্সি পড়ে দুইজন নিহত হয়। এরপর ২৫ আগস্ট মুরাদপুরে ব্যবসায়ী সালেহ আহমদ নিখোঁজ হন। তার লাশ পাওয়ার জন্য যখন পরিবার আকুতি জানাচ্ছে তখনি গত সোমবার রাতে আগ্রাবাদে নালায় পড়ে নিহত হন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রী সাদিয়া। এর আগে মোহাম্মদ আলী রোডে নালায় পড়ে মারা গিয়েছিলেন একজন। গত বছর হালিশহর ইসলামিয়া ব্রিক ফিল্ড এলাকায় মহেশখালে পড়ে দুই কিশোরীর মৃত্যু হয়। শহরের বুকে একের পর এক এ ধরনের ঘটনা নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে নগরবাসী। তারা বলেছেন, কোন বাসযোগ্য শহরে এভাবে নালায় পড়ে এভাবে একের পর এক মৃত্যু হতে পারে না। এটি মেনে নেয়া যায় না।

জাগরণ/এমআর