• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০২:৪৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১৭, ২০২১, ০২:৪৬ পিএম

গাইবান্ধায় কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ!

গাইবান্ধায় কিশোরীকে পালাক্রমে ধর্ষণ ও ভিডিও ধারণ!
গ্রেফতারকৃত দুই আসামী মাহবুব (২১) ও পলাশ (২০) ছবি- জাগরণ।

প্রেমিক মাহবুরের সাথে নিজের তোলা কিছু ছবি ফেরত চাইতে গিয়ে প্রেমিক মাহবুবসহ তার আরেক বন্ধু পলাশের নির্মম পাশবিকতার শিকার হয়েছে এক কিশোরী। গাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার যমুনা নদীর দুর্গম চরাঞ্চলের কাশবনে এ ঘটনা ঘটে।  এ ঘটনায় অভিযুক্ত মাহবুব (২১) ও পলাশ (২০) নামে দুই বখাটে যুবককে গ্রেফতার করেছে ফুলছড়ি থানা পুলিশ।

আটক মাহবুব সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গা মোড় এলাকার রসুল হাওলাদারের ছেলে এবং পলাশ একই এলাকার সাখাওয়াত হাওলাদার এর ছেলে।

ভুক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা যায় , বোনের বাড়ি সাঘাটা উপজেলার ভাঙ্গা মোড় এলাকায় হওয়ার সেখানে নিয়মিত যাতায়াত করত শহরের ব্রীজ রোডের বাসিন্দা ভুক্তভোগী ওই কিশোরী (১৫)। সেখানেই পিকআপ ভ্যানের হেলপার মাহবুব হোসেন নামের এক বখাটের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। সম্পর্কের কারণে একদিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করতে চায় মাহাবুব। এরপর মাহাবুবের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের কারণে ছয়-সাত মাসের সম্পর্কের ইতি টানে ওই কিশোরী। সম্পর্ক শেষ হলেও তাদের দুজনের কিছু ছবি প্রেমিক মাহবুবের কাছে থেকে যায়। গত রমজান মাসে তোলা ওই ছবিগুলো ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার ভয় দেখিয়ে প্রায়ই দেখা করার জন্য চাপ দিত এবং দেখা করলে ওই ছবিগুলো ফেরত দিবে বলেও আশ্বাস দিত মাহবুব। এরই প্রেক্ষিতে শুক্রবার (১৫ অক্টোবর) দুপুরে ছবিগুলো মুছে ফেলাসহ বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে বখাটে মাহবুব ও তার বন্ধু পলাশ ভুক্তভোগী ওই কিশোরীকে নিয়ে গাইবান্ধার বড় মসজিদের সামনে থেকে প্রথমে বাদিয়াখালি ও পরে ফুলছড়ি ঘাটে আসে। তারপর বিয়ের প্রলোভনে ফুসলিয়ে বিকেল ৩টার দিকে মেয়েটিকে নিয়ে নৌকাযোগে যমুনা নদী পার হয়ে ফুলছড়ির একটি চরের নিভৃত কাশবেনে নিয়ে যায়। সেখানেই তারা দুজন মিলে মেয়েটিকে ধর্ষণ করে পালিয়ে যায়।

এ ব্যাপারে ফুলছড়ি থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কাওসার আলী বলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আবু লাইচ মো. ইলিয়াস জিকু স্যার এর নির্দেশনায় খুব দ্রুতই অভিযুক্তদেরকে গ্রেফতার করেছি। এ সময় মামলার গুরুত্বপূর্ণ আলামত তাদের মোবাইল দুটো জব্দ করা হয়েছে। মামলা (মামলা নং-৬) দায়ের করা হয়েছে। আগামীকাল ভিকটিমের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে এবং ভিকটিমকে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে রাখা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, 'গল্পের ফাঁদে ফেলে মেয়েটিকে কাশবনের গহীনে নিয়ে গিয়ে প্রথমে প্রেমিক মাহবুব ও পরে মাহবুবের বন্ধু পলাশ পালাক্রমে ধর্ষণ করে। এসময় তারা একে অপরের ধর্ষণের ছবি ও ভিডিও ধারণ করে মোবাইলে। তারপর তাকে অসুস্থ অবস্থায় কাশবনে রেখে দুই বখাটে যমুনা নদী পার হয়ে দ্রুত সটকে পড়ে'।পরে ভুক্তভোগী ওই কিশোরী অসুস্থ অবস্থায় বিভিন্ন লোকের সাহায্যে সন্ধ্যা ৭টার দিকে  ব্রীজরোডের নিজ বাড়িতে এসে পরিবারের কাছে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে।

 শনিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে মেয়েটি অসুস্থ হয়ে পরলে তার মা তাকে গাইবান্ধা জেলা হাসপাতালে ভর্তি করেন। বিকেলে সাংবাদিকদের সহায়তায় মেয়েটির মা বাদি হয়ে ফুলছড়ি থানায় গিয়ে ঘটনার বিস্তারিত জানিয়ে অভিযোগ করেন। পুলিশ ঘটনা শুনে দ্রুত অভিযান চালিয়ে ধর্ষক দুই বখাটে মাহবুব ও পলাশকে তাদের নিজ এলাকা সাঘাটা থানাধীন ভাঙ্গা মোড় থেকে গ্রেফতার করে।

এ ব্যাপারে ভুক্তভোগী ওই কিশোরীর মা কান্না জড়িত কন্ঠে এ প্রতিবেদককে জানান, দেশে আরও অনেক মায়ের অনেক মেয়ে সন্তান রয়েছে। আমার মেয়ের মতো আর কোনও মেয়ের যাতে এমন ঘটনা না ঘটে, সেজন্য আমি এই লম্পটদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। এমন বিপদের দিনে সাংবাদিক এবং পুলিশ অফিসার যে সাহায্য করেছে, তা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সারাজীবন মনে রাখবো।

ভুক্তভোগী ওই কিশোরী বলেন, 'ওরা আমার যে ক্ষতি করেছে, তা কোনদিনই পূরণ হবে না। আমি পলাশ ভাইকে বড়ভাইয়ের মতো বিশ্বাস করতাম। তিনিও আমার সাথে.... বারবার তাদের পা ধরে অনুরোধ করেছি, তবুও শোনেনি। আমি ওদের কঠিন শাস্তি চাই।

এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশ সুপার মুহাম্মদ তৌহিদুল ইসলাম জাগরণের প্রতিবেদককে বলেন, এ ধরনের ঘটনা খুব সেনসিটিভ। আমরা দ্রুত আসামিদের গ্রেফতার করেছি। খুব গুরুত্বের সাথে আমরা এই বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছি। তদন্ত সাপেক্ষে আরও কারা কারা এই নিকৃষ্ট ঘটনার সাথে জড়িত, তা খুঁজে বের করা হবে এবং শাস্তির মুখোমুখি করা হবে। ভিকটিমকে পুলিশ সাপোর্টসহ সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে বলেও তিনি জানান। 

 

জাগরণ/এসকেএইচ