• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৬, ২০২১, ১০:০৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৬, ২০২১, ০৪:১১ পিএম

শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে মোংলা উপকূলের হাজারও জেলের সমুদ্র যাত্রা

শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণে মোংলা উপকূলের হাজারও জেলের সমুদ্র যাত্রা
ছবি- জাগরণ।

ঝড়-জলোচ্ছ্বাস আর ভিনদেশী জেলেদের আগ্রাসনের শঙ্কা মাথায় নিয়ে সুন্দরবনের দুবলার চরাঞ্চলে শুটকী মৌসুমকে ঘিরে সমুদ্র যাত্রা শুরু করেছে সমুদ্রগামী জেলেরা।মঙ্গলবার (২৫ অক্টোবর) মধ্যরাতে হাজারও জেলে মোংলার পশুর নদীর চিলা মোহনা থেকে একত্রে জাল-নৌকা ও শুটকী তৈরির উপকরণ নিয়ে সাগর পাড়ের দুর্গম চরাঞ্চল ও সমুদ্রের উদ্দেশে রওয়ান হয়। 

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন  বলেন, এবার দুবলার শুটকিসহ পুরো সুন্দরবন বিভাগ থেকে ছয় কোটি টাকা রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য এরই মধ্যে বঙ্গোপসাগরের দুবলা, আলোরকোল, মেহের আলী এবং শ্যালার চরসহ বেশকয়েকটি চরে তারা পরিদর্শন সহ স্থান নির্ধারণ করেছেন তারা।

এদিকে সুন্দরবন এলাকায় ইলিশসহ সব ধরনের মাছ আহরণ নিষিদ্ধ থাকায় এবার কিছুটা সময় পিছিয়ে শুরু হয়েছে সামুদ্রিক মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের মৌসুম। আগামী চার মাস মোংলা, রামপাল, খুলনা, সাতক্ষীরা, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশালসহ সুন্দরবন উপকূলের  হাজারও জেলে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরির জন্য সাগরপাড়ে অস্থায়ী বসতি গড়ে তুলবে। এছাড়া বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জেলে ও মৎস্যজীবীরাও পৌছাবেন দুবলার চরাঞ্চলে। মৌসুমের শুরুতেই রাজস্ব আয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে নানামুখী পদক্ষেপ নিয়েছে বন বিভাগ। মোংলা থেকে নদী পথে দুবলা জেলে পল্লীর দূরত্ব প্রায় ১২০ কিলোমিটার। সুন্দরবন সংলগ্ন এ পল্লীর সব কর্মকাণ্ড জেলে ও মৎস্যজীবিদের ঘিরে। সুন্দরবনের অভ্যন্তরে ১৩ টি মৎস্য আহরণ, প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণ কেন্দ্র নিয়ে গঠিত দুবলা জেলে পল্লী।

এদিকে জেলেরা অভিযোগ করে বলেন,পূর্বে দুবলার চরে যাওয়ার পথে এবং গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গেলে দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে পথে বসতে হতো তাদের। কিন্ত বর্তমান সরকারের প্রচেষ্টায় এখন দস্যুমুক্ত সুন্দরবন ঘোষনা থাকলেও ভিনদেশী জেলেদের উৎপাত বেড়েছে। তারা সরাসরি জেলেদের জিম্মি করে মুক্তিপন বা জেলে বহড়ে মারধর লুটপাট না করলেও যে আশায় বুক বেঁধে দেশীয় জেলেরা সমুদ্রে যাত্রা করছে তা আগে থেকেই লুটে নিচ্ছে ভারতীয় জেলেরা।

গত ৪ অক্টোবর থেকে ২২ দিন ইলিশ প্রজনন মৌশুম তাই ইলিশ ধরা নিষিদ্ধ ছিল। এখানে দেশীয় জেলেরা সাগরে বা সাগরের গহীনে ইলিশ ধরা বন্ধ রাখলেও ভারতীয় জেলেরা কিন্ত বসে ছিলনা। তারা ভারতীয় সীমানা পেড়িয়ে বাংলাদেশের সীমানায় প্রবেশ করে শত শত ফিশিং ট্রালার এ দেশের ইলিশ ধরে নিয়েছে। তারপরেও দেশীয় জেলেরা শুটকী আহরণের জন্য সমুদ্রে যাত্রা করতে যায় ২৫ অক্টোবর মধ্যরাত থেকে।

চলতি মৌসুমে জেলেরা যাতে সাগরে নির্বিঘ্নে মাছ শিকার ও শুঁটকি তৈরি করতে পারে
সেজন্য প্রশাসনকে নজরদারি বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী জেলে ও মহাজনেরা।

এ ব্যাপারে মৎস্যজীবিদের বৃহৎ সংগঠন ‘দুবলা ফিশারম্যান গ্রুপে’র সাধারণ সম্পাদক কামাল উদ্দিন জানান, ঘূর্ণিঝড়-জলোচ্ছ্বাস ও ভিনদেশী জেলেদের উৎপাতের
শংঙ্কা ও দেশীয় মৎস্য ভান্ডার লুটের আতংক মাথায় নিয়েই উপকূলীয় অঞ্চলের মৌসুমি
জেলেরা জাল-নৌকা ও মাছ আহরণের জন্য হাজারো জেলেরা সমুদ্র যাত্রা শুরু করছেন। তাই তাদের নিরাপত্তা দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।

কোস্টগার্ড পশ্চিম জোনের (মোংলা সদর দফতর) অপারেশন কর্মকর্তা লে. কমান্ডার শেখ মেজবাহ উদ্দিন আহাম্মেদ পূর্বেই বলেছেন, সুন্দরবন এবং সাগর এলাকায় সব সময় দস্যু দমন বনজ সম্পদ ও বন্যপ্রানী সংরক্ষনে অভিযান অব্যাহত থাকে। তবে সাগরে শীতকালীন মৎস্য আহরণের জন্য যাত্রা করা জেলেরা যাতে নির্বিঘ্নে তাদের গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে সেজন্য মোংলা থেকে দুবলার চর পর্যন্ত কোস্টগার্ডের টহল দল তাদের সাথে থাকবে এবং শুঁটকি প্রক্রিয়া করণের জন্য জেলেদের বাড়তি নিরাপত্তা দিতে কঠোর থাকবে।

প্রতি বছর শীত মৌসুমে সুন্দরবনের গহীণে সাগর পাড়ের দুবলা, মেহের আলীর চর, আলোরকোল, অফিস কিল্লা, মাঝের কিল্লা, শেলার চর, নারকেল বাড়িয়া, ছোট আম বাড়িয়া, বড় আম বাড়িয়া, মানিক খালী, কবর খালী, চাপড়া খালীর চর, কোকিলমনি ও হলদা খালীর চরে হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবি জড়ো হয়। এসব চরে অবস্থান নিয়ে জেলেরা সমুদ্র মোহনায় মৎস্য আহরণ করে। পাশাপাশি জেলেরা সেখানে নিজেদের থাকা ও শুঁটকি তৈরির জন্য অস্থায়ী ঘর তৈরি করে। জেলেরা সমুদ্র মোহনায় বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকারের করে শুঁটকি করার পর তা দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এমনকি বিদেশেও বাজার জাত করে থাকেন। 

 

জাগরণ/এসকেএইচ