• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৩:০৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ২৭, ২০২১, ০৯:০৫ পিএম

সনদ নেই তবুও পরিবারের সবাই ‍‍`ডাক্তার‍‍`

সনদ নেই তবুও পরিবারের সবাই ‍‍`ডাক্তার‍‍`
ছবি- জাগরণ।

কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলায় ডাক্তারের সনদ নেই তবুও পরিবারের সবাই ডাক্তার। বাবা ও তার  ৬ ছেলের কারোই ডাক্তারি পাসের সনদ নেই। তারপরও নামের আগে ডাক্তার লেখেন সবাই। ভুল চিকিৎসায় বাবা ও ৬ ছেলেদের মধ্যে সকলেই এর আগে জরিমানা গুনেছেন বহুবার। ড্রাগ লাইসেন্স বিহীন বাবা ছেলেদের ৫টি ফার্মেসীও রয়েছে।

নয় বছরের মেয়ে মিমকে সাথে নিয়ে সামান্য জ্বর ও হাটুর ব্যাথার চিকিৎসার জন্য স্থানীয় ফার্মেসিতে যান মা বিউটি আক্তার। দ্রুত ভালো হয়ে যাওয়ার কথা বলে দুই ধরনের এন্টিবায়োটিক সহ সাত প্রকারের ঔষধ দেন ফার্মেসির মালিক হাবিবুর রহমান। যার মধ্যে বিক্রির অযোগ্য সরকারি ঔষধ ছিল দুই ধরনের। প্রথম ডোজ ঔষধ সেবনের পর সুস্থ হওয়ার বদলে উল্টো অসুস্থ হয়ে পড়েন মিম। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে ঔষধের সাইড এফেক্ট হয়েছে বলে জানান কর্মরত চিকিৎসক। সেখানে না রেখে উন্নত চিকিৎসার জন্য পাঠানো হয় জেলা শহরে। টাকার অভাবে শহরে না যেতে পেরে পার্শ্ববর্তী উপজেলার একটি পরিচিত বে-সরকারি হাসপালে নিয়ে মেয়েকে ভর্তি করান মা বিউটি আক্তার। মেয়েকে সুস্থ করে তুলতে শুরু হয় টাকা জোগাড়ের কাজ। পাড়া প্রতিবেশী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে ৬৫ হাজার টাকা ধার করে মেয়েকে কিছুটা সুস্থ করতে সক্ষম হলেও আগের মতো আর কথা বলতে পারছেনা মিম। থানায় অভিযোগের কথা বলায় প্রতিদিন শুনতে হচ্ছে হুমকি-ধামকি। নিরূপায় হয়ে এখন আল্লাহর কাছে বিচার দেয়া ছাড়া আর কোনও  প্রকার রাস্তা নেই তাদের।

এভাবেই কাঁদতে কাঁদতে ঘটনাটির বিবরণ দেন মা বিউটি আক্তার ও নানা মোবারক হোসেন। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার জাহাপুর ইউনিয়নের বল্লবদী গ্রামে।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাবিবুর রহমান তার বাবা খলিলুর রহমান, পাঁচ ভাই সফিউল্লাহ মোল্লা, সোলায়মান মোল্লা, কাইয়ুম মোল্লা, কারি মোল্লা ও হারিছ মোল্লাসহ সকলেই কোনও ধরনের  শিক্ষাগত সনদ ছাড়াই নামের আগে লিখছেন ডাঃ। বাবা-ছেলেরা মিলে সাত জনের রয়েছে ৫টি ফার্মেসি। এল.এম.এ.এফ সনদের কথা বললেও সাত জনের কেউ দেখাতে পারেনি সরকারি-বেসরকারি চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানের কোনো সনদ। এমনকি ড্রাগ লাইসেন্স পর্যন্ত দেখাতে ব্যর্থ হন সকলেই।

দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসক পেশার মতো একটি মহৎ পেশায় জড়িয়ে চিকিৎসার নামে সাধারণ মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলছেন তারা। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

জসিম, শিপন সহ এলাকার একাধিক ব্যক্তি অভিযোগ করে বলেন, দালাল ও নিজস্ব সোর্স খাটিয়ে অল্প শিক্ষিত ও অসহায় মানুষকে চিকিৎসার ফাঁদে ফেলে তাদের ধরিয়ে দেয়া হয় বেশি মূলের ঔষুধ। আবার মাঝে মধ্যে চিকিৎসা করাতে এসে অপচিকিৎসার বেড়াজালে আটকে যায় অনেকে। এসব বিষয়ে অভিযোগ করতে চাইলে ব্যবহার করা হয় পেশি শক্তি। তারা আরো বলেন, ভুল চিকিৎসায় সুস্থ না হয়ে অসুস্থ্য হয়েছে এটা নতুন কিছু না। বাবা খলিলুর রহমান বড়ইয়াকুড়ি গ্রামের শ্রী কামার কর্মকারকে চোখের চিকিৎসা করতে গিয়ে সুইয়ের খোচায় অন্ধ করে দিয়েছে। ওরা শক্তিশালী হওয়ায় এর কোনও বিচার বা অভিযোগ করতে পারেনি ভূক্তভোগীর পরিবার। তবে একাধিকবার একই ইউনিয়নের পায়ব, সাতমোড়া, বল্লবদী, রানীমূহুরি ও বাখরাবাদ এলাকার মানুষদের ভুল চিকিৎসা দিয়ে বাবা-ছেলে সকলেই জরিমানা গুনেছে বহুবার। তারপরেও থেমে নেই অপচিকিৎসা, থেমে নেই নামের আগে ডাঃ লেখা।

রানীমূহুরী গ্রামের জনাব আলীর স্ত্রী খোরশেদা বলেন, আমার স্বামীর শরিলডা খারাপ লাগে কইয়া খলিল ডাক্তারের পুত (ছেলে) সোলায়মানের দোকান গেছে। হেনো (সেখানে) যাওয়ার পর কি জানি একটা ইনজেকসন দিছে আমার স্বামী বাড়ীতে আইয়া লগে লগে হাড ইস্টক কইরা মইরা গেছেগা। পরে আমি জিজ্ঞাস করনে আমারে কয় হায়াত নাই মইরা গেছেগা। অহন আমি ছোট একটা ছেলে আর চাইডা মাইয়া লইয়া মানুষের বাড়িতে কাম কইরা খাইয়া না খাইয়া দিন কাটান লাগে। 

অভিযুক্ত হাবিবুর রহমান বলেন, নামের আগে ডাক্তার ব্যবহার করলেও আমি কোনও প্রেসক্রিপশন দেই না। নামের আগে ডাক্তার শুধু আমিই লিখি না, এলাকায় খবর নিয়ে দেখেন সবাই ব্যবহার করে। আর আমার সকল প্রকার কাগজপত্র আছে তবে এই মুহূর্তে সাথে নেই। ভুল চিকিৎসার কথা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার চিকিৎসায় সে অসুস্থ হয় নাই আর আমি এতো ঔষধ তাকে দেই নাই। আমার পরিবারের বদনাম করতে তারা এই কাজ করছে।

এ ব্যাপারে মুরাদনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ নাজমুল আলম বলেন, চিকিৎসার শুরুতেই একটা বাচ্চাকে এক সাথে দুইটা এন্টিবায়োটিক ঔষধ দেয়া ঠিক না। আর কোনও প্রকার সনদপত্রবিহীন কেউ চিকিৎসা কার্যক্রম চালাতে পারবে না। এমনকি ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া ঔষধের দোকানও পরিচালনা করা উচিত নয়। তাদের বিরুদ্ধে দ্রুত উপজেলা প্রশাসনের সহযোগীতায় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান চালানো হবে বলেও জানান তিনি।

মুরাদনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোঃ সাদেকুর রহমান বলেন, থানায় অভিযোগ নিয়ে আসতে দিচ্ছেনা এ ধরনের কোনও অভিযোগ আমার জানা নেই। তবে খবর নিয়ে দেখছি, যদি সত্যতা পাওয়া যায় অবশ্যই ভূক্তভোগিদের কাছ থেকে অভিযোগ নিয়ে  প্রয়োাজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

জাগরণ/এসকেএইচ