• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২৩, ২০২২, ০২:১২ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ২৪, ২০২২, ০২:৩৬ এএম

চট্টগ্রাম রেলওয়েতে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ

চট্টগ্রাম রেলওয়েতে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাৎ
ছবি- জাগরণ।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে কর্মরত বেডিং ইনচার্জ জিয়াউল আলম ঠাকুর ও এসএসএই-ইলেক-চট্টগ্রাম/ খালাসী মো: সুমনের বিরুদ্ধে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা আত্মসাত, টিকেট কালোবাজারি, অবৈধভাবে বেডিং বিক্রিসহ নানা অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে।

জানা যায়, জিয়াউল আলম ঠাকুর চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে যোগদানের পর সুমনের সাথে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত চাকরি বাণিজ্য ও নানা অনিয়ম অপকর্ম করে আসলেও এ বিষয়ে কিছুই জানে না পূর্ব রেলের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। কোটি টাকা আত্মসাতের ব্যাপারে ঠাকুরের বিরুদ্ধে পূর্বাঞ্চল রেলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার  বরাবরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের প্রাক্তন বেডিং পোর্টার জয়নাল আবেদীন ও সিসিলন কোম্পানির সুপার ভাইজার আবদুল মান্নান। 

তারা অভিযোগে উল্লেখ করেন, গত ২০১৭ সালে ওয়ার্কশপ ডিপার্টমেন্টে ১২৬ জন খালাসি নিয়োগের প্রাক্কালে জয়নাল আবেদিনের ছেলে ও আব্দুল মান্নানের শালাবাবুকে খালাসি পদে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২ জনের নিকট থেকে প্রায় ১১ লাখ টাকা ও হাফসা আক্তার শিফু থেকে ১২ লাখ এবং মো: সফি, সাইফুল আলমসহ আরো অনেকের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কোটি কোটি টাকা।

সূত্র জানায়, জিয়াউল আলম ঠাকুর পূর্বাঞ্চল রেলের স্টেশনের পুটার/পিয়ন পদে যোগদান করার পর তৎকালীন পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে ম্যানেজ করে বেডিং ইনচার্জ এর দায়িত্ব নেন। এর পর থেকে ইলেক/খালাসি সুমনকে সাথে নিয়ে গোপনে নেমে পড়েন চাকরি বাণিজ্যে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আলম ঠাকুর গত ১০ বছর যাবত সিসিএম, ডিসিও'র নামে প্রতিদিন রেলের বগিতে বেডিং বেচাকেনা, বেডিং ধোলাইয়ের কন্ট্রাক্টরের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, ধোলাই না করা বেডিংয়ের রিপোর্ট প্রদান, কন্ট্রাক্টরের অধীনে কর্মরত পুটারদের মাসিক বেতন থেকে চাঁদা আদায়, চাকরি বাণিজ্যসহ নানা অনিয়ম দুর্নীতি-চাঁদাবাজি করে আসলেও তার ব্যাপারে আজো পর্যন্ত কোন ব্যবস্থা নেয়নি তার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। 

আর এদিকে মো: সুমন ইলেক/খালাসী পদে চাকরি করলেও তিনি শুধু অফিসে এসে হাজিরা দিয়ে চলে যান। আজ পর্যন্ত কেউ তাকে তার কাজে দেখেনি। তার কাজ শুধু নিয়োগ সার্কুলার পাওয়ার পর চাকরি দেওয়ার নামে সুযোগ বুঝে কোপ মারা। তার সিন্ডিকেট দিয়ে রেলের বিভিন্ন পদে কর্মরত কর্মচারীদের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে টাকা হাতিয়ে নেওয়া। 

সূত্র আরো জানায়, সামান্য বেতনের চাকরি করা পূর্ব রেলের একজন দুর্নীতিবাজ কর্মচারী জিয়াউল আলম ঠাকুর বর্তমানে কোটি কোটি টাকার মালিক। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙ্গিয়ে তিনি অনিয়ম-দুর্নীতির টাকা দিয়ে সম্প্রতি তার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও চট্টগ্রাম কর্ণফুলী নদীর পূর্ব পাড়ে প্রায় কোটি কোটি টাকার জমি কিনেছেন।

এ বিষয়ে অভিযোগকারী জয়নাল আবেদীন  জানান, আমার ছেলেকে খালাসি পদে চাকরি দেওয়ার নামে চট্টগ্রাম রেল স্টেশনের ওয়েটিং ইনচার্জ জিয়াউল আলাম ঠাকুর ৬ লাখ টাকার মৌখিক চুক্তি করে। আমি তাকে চার লক্ষ টাকা নগদে প্রদান করি। চাকরি দেওয়ার পর আরো ২ লাখ টাকা দেওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তিনি আমার ছেলেকে চাকরি দিতে না পারায় আমার টাকা ফেরত চাইলে তিনি আমাকে বিভিন্ন সময় ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করেন।

এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম রেল স্টেশন ম্যানেজার রতন কুমারের চেম্বারে সালিশ বিচারে সবার সামনে সে আমার ৪ লাখ টাকা ফেরত দিবে বলে অঙ্গিকার করে। কিন্তু তিনি পরবর্তীতে টাকা ফেরত দেয়নি। এরপর বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনছার আলী বরাবর লিখিত অভিযোগ করে কোন সুরাহা না পেয়ে পূর্বাঞ্চল রেলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) নাজমুল ইসলাম বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

অপর অভিযোগকারী আব্দুল মান্নান  জানান, রেল স্টেশনে আসা যাওয়ার সুবাদে জিয়াউল আলম ঠাকুরের সাথে আমার পরিচয় হয়। এর পর আমার শালাবাবুকে খালাসী পদে চাকরি দেওয়ার প্রলোভন দেখাইলে আমি সরল বিশ্বাসে তাকে ৫ লাখ ৩৮ হাজার টাকা প্রদান করি। তিনি চাকরি দিতে না পারায় টাকা ফেরত চেয়েছি, তারপর থেকে সে আমাকে প্রতিনিয়ত ভয়-ভীতি ও হুমকি প্রদান করে আসছে। আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি ও এ বিষয়ে চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার নাজমুল ইসলাম বরাবরে লিখিত অভিযোগ করেছি।

এ বিষয়ে জানার জন্য অভিযুক্ত বেডিং ইনচার্জ জিয়াউল আলম ঠাকুরের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এ বিষয়ে নিউজ না করার জন্য প্রতিবেদকে অনুরোধ করেন। এবং অভিযোগকারীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ওদের কাছ থেকে যে আমি টাকা নিয়েছি তার কোনো প্রমাণ আছে তাদের কাছে? এই বলে তিনি লাইন কেটে দেন।

এ বিষয়ে জানার জন্য পূর্বাঞ্চল রেলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) আনছার আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি  বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। আমি কোনো অভিযোগ পায়নি। 
আর এদিকে পূর্বাঞ্চল রেলের চীফ কমার্শিয়াল ম্যানেজার (সিসিএম) নাজমুল ইসলামের মুঠোফোনে একাধিকবার কল দেয়া হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

 

এসকেএইচ//