বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট নিম্নচাপের কারণে দেশের উপকূলীয় এলাকায় একটানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি আর ভরা পূর্ণিমার জোয়ারের কারণে উপকূলের নিম্নাঞ্চলে পানি ঢুকে পড়ছে।
এতে প্লাবিত হয়েছে বহু এলাকা। বাসা-বাড়িতে ঢুকে পড়েছে পানি। ডুবেছে ফসলের ক্ষেত। ভেসে গেছে পুকুরের মাছ। দারুণ কষ্টের সময় পার করছেন শ্রমজীবী মানুষরা।
সাগরে সৃষ্ট স্থল নিম্নচাপ দুর্বল হয়ে লঘুচাপে পরিণত হয়েছে। এর প্রভাবে গত কয়েকদিনে ধরেই দেশের বেশিরভাগ অঞ্চলে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। মঙ্গলবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
গত তিন দিনে পটুয়াখালীতে বৃষ্টি হয়েছে ১৮৯ মিলিমিটার। সমুদ্র বন্দরে বহাল রাখা হয়েছে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত।
সেই সাথে পূর্ণিমার প্রভাবে পায়রা, রাবনাবাদ, আগুনমুখা, তেতুলিয়া, লোহালিয়া নদীর পানি ২ থেকে ৩ ফুট বেড়ে জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হচ্ছে উপকূলের বিভিন্ন এলাকা।
টানা বৃষ্টি ও জেয়ারের পানিতে পটুয়াখালী জেলা শহরের বেশি কিছু এলাকাতেও জলজট দেখা দিয়েছে। বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় শ্রমজীবী ও কর্মজীবী মানুষরা পড়েছেন চরম বিপাকে।
বিশেষ করে ড্রেনের নোংরা পানির সঙ্গে বৃষ্টির পানি মিশে অনেক এলাকার মানুষের ভোগান্তি বেড়েছে। কলাপাড়ার লালুয়া, নিজামপুরসহ বেশ কিছু এলাকা প্লাবিত হয়েছে।
সদর উপজেলার পায়রা নদীর পানি বেড়ে বড়বিঘাই, ছোটবিঘাই, মাদার বুনিয়া ও মরিচ বুনিয়া ইউনিয়নের বেশ কিছু বাঁধ ও সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে।
মঙ্গলবারও স্বাভাবিকের চেয়ে জেলার প্রধান প্রধান নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। পায়রা নদীতে বিপৎসীমার ২৪ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হয়েছে।
আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে জানিয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে আবহাওয়া পরিস্থিতির উন্নতি হবে। তবে আজও নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে এক থেকে দুই ফুট পানি বাড়তে পারে।
পানিতে ডুবে গেছে বরগুনার নিচু এলাকাও। জেলায় গত ২৪ ঘণ্টায় ১৪০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এছাড়া নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
পৌর শহর ছাড়াও তলিয়ে গেছে আমতলী-পুরাকাটা ও বড়ইতলা-বাইনচটকি ফেরির গ্যাংওয়ে। এতে গাড়ি নিয়ে পার হতে গিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়ছেন সাধারণ মানুষ।
বেড়িবাঁধের বাইরের ও চরের স্থায়ী বাসিন্দাদের বাড়িঘর ফসলি জমি, পানের বরজ, মাছের ঘের তলিয়ে গেছে। এতে নাগরিক জীবনে দেখা দিয়েছে বিপত্তি।
জোয়ারের পানি প্রবেশ করায় বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। এছাড়া জেলার ১৫টির মতো খেয়া ঘাটের সংযোগ সড়ক ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিঘ্নিত হচ্ছে।
নিম্নচাপের প্রভাবে মোংলাসহ সুন্দরবন সংলগ্ন উপকূলীয় এলাকাজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া বিরাজ করছে। সুন্দরবন উপকূল কয়েক ফুটের বেশি উচ্চতার জ্বলোচ্ছাসে প্লাবিত হচ্ছে।
বৈরি হাওয়ার ফলে বাড়িঘর থেকে লোকজনও বের হচ্ছে কম। আর এতে বেশি বিপাকে পড়েছে দৈনন্দিন খেটে খাওয়া দিনমজুরেরা।
পৌর শহরের মামার ঘাটের শ্রমিকরা জানান, বৃষ্টিতে লোকজন নেই, তাই আমাদের ট্রলার পারাপার ও মালামাল টানারও কোনো কাজ নেই। বৃষ্টিতে বেকার বসে রয়েছি।
বাগেরহাটের বিভিন্ন নদ-নদীর পানি বাড়ায় জোয়ারের পানিতে দিনে দুবার বাগেরহাট সদর, মোরেলগঞ্জ, রামপাল, মোংলা উপজেলার অর্ধশতাধিক গ্রাম প্লাবিত হচ্ছে।
খাল ভরাট, দখলসহ অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থার কারণে টানা বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে সদর উপজেলার তিন গ্রামের পাঁচ শতাধিক পরিবার।
নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি ও বৃষ্টি অব্যাহত থাকলে জেলার কয়েকশ চিংড়ির ঘের ভেসে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। জেলার অধিকাংশ মাছের ঘেরগুলোতে পানি ছুঁই ছুঁই করছে।
কাশেমপুর এলাকার এক মাছচাষি বলেন, বৃষ্টি ও জোয়ারের পানিতে ঘেরের আইল ছুঁই ছুঁই করছে। সামান্য পানি বাড়লেই শত শত বিঘার ঘের তলিয়ে যাবে।
গেল দুই দিনে জেলায় ৮৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে ফকিরহাট উপজেলায় এক দিনে সর্বোচ্চ ৫২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে।
ঝালকাঠিতে সুগন্ধা ও বিষখালীসহ সব নদ-নদীর পানি ২-৩ ফুট উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এতে কাঠালিয়া উপজেলার ৩০ গ্রাম ও শতাধিক আশ্রয়ণ প্রকল্পের বাড়ি প্লাবিত হয়েছে।
বিষখালী নদী তীরের রাস্তা ও চিংড়াখালী খালের বাঁধ ভেঙে গেছে বলে জানা গেছে। গ্রামীন কাঁচা পাকা ১০টি রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় সংযোগ বিচ্ছিন্ন অবস্থায় রয়েছেন কয়েক হাজার মানুষ।
বরিশালে দুই দিনের টানা বৃষ্টি, পূর্ণিমা ও নিম্নচাপের প্রভাবে বেড়েছে নদীর পানি। এতে নগরীর কয়েকটি প্রধান সড়কসহ অলিগলি ও আশপাশের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
রোববার সকাল থেকে বরিশালে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুর ১টা পর্যন্ত ১২৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এটাও এ মৌসুমে দুই দিনে বৃষ্টিপাতের রেকর্ড।
লঘুচাপের প্রভাবে টানা বৃষ্টি চলছে বন্দর নগরী চট্টগ্রামে; রাস্তায় বেরিয়ে যানবাহন না পেয়ে বিপত্তিতে পড়েছে নগরবাসী।
মঙ্গলবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় চট্টগ্রাম শহরে ৩৩ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বুধবার দুপুর পর্যন্ত বৃষ্টির এই ধারা চলতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে।
মঙ্গলবার (১৩ সেপ্টেম্বর) সকালে বাসা থেকে বের হতে গিয়ে বিপাকে পড়ে অফিস ও স্কুল-কলেজগামীরা। সড়কে যানবাহন কম থাকায় মানুষকে গাড়ির অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়।
টানা বৃষ্টিতে উত্তরের জনপদ বগুড়া শহর এবং শহরের বাইরে নিচু এলাকার রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে গেছে ৷ চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ মানুষ।
জাগরণ/স্বদেশ/এসএসকে/কেএপি/এমএ