• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ৮, ২০১৯, ১০:৩৭ এএম

শাহজাদপুরে দখল দূষণে মৃত প্রায় করতোয়া 

শাহজাদপুরে দখল দূষণে মৃত প্রায় করতোয়া 
নদীর বুকে ধান চাষ

শাহজাদপুরের বুকচিরে বয়ে চলা খরস্রোতা করতোয়া নদীটি দখল দূষণের কবলে পড়ে এখন মৃত প্রায়।প্রবাহমান যমুনার শাখা নদী করতোয়া রূপ-লাবণ্য আর মৎস্য সম্পদে ছিল সমৃদ্ধ। এই নদীটিই এ অঞ্চলের কৃষিতে রেখেছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। অথচ নদীটি দখল ও দূষণের কবলে হারিয়ে ফেলেছে যৌবন। নদীর দিকে তাকালে এখন বৃদ্ধ মানুষের রক্ত নালির মতো সরু মনে হয়। কালো রক্তের মতো চির চির করে বয়ে যায় করতোয়ার পানি। এক সময় নদীটি ছিল উত্তাল। কলকল করে বয়ে চলতো পানি। দুকূল ছাপিয়ে উত্তাল করতোয়া ধুয়ে দিত এ অঞ্চলের প্রাণিকুলকে। নদীর বুকে রাজহাঁসের মতো ভাসতো বড় বড় নৌকা, ছোট বড় জাহাজ। সেই যৌবনা নদী এখন খাঁ খাঁ মরু ভূমি। প্রাণহীন নদীর উপর দিয়ে এঁকে বেঁকে চলে গেছে পায়ে হেটে চলার রাস্তা। 

মাটির গভীর থেকে পানি তুলে নদীর উপর চাষ করা হচ্ছে ধান। সরু নালার মতো যেটুকু প্রবাহ আছে সেটুকুর জলও ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে গেছে সুতা প্রসেসিংয়ের দুষিত পানি মিশে। সেই সঙ্গে শহরের ময়লা পানি সরাসরি নদীতে পড়ে  হচ্ছে চরম দূষণ। 

বর্ষা মৌসুমে ৩-৪ মাস করতোয়ার বুকে কিছুটা পানি প্রবাহ থাকলেও সারা বছর করতোয়া আর নদীরূপে থাকে না। বর্তমানে এ নদী মৃতপ্রায়। নদীর সব রূপ-লাবণ্য হারিয়ে মরা খালে পরিণত হচ্ছে। পানিশূন্য হয়ে শুকিয়ে যাচ্ছে নদী। অধিকাংশ স্থান জুড়েই পড়েছে চর। এলাকার সাধারণ মানুষ নদী পারাপার হচ্ছেন পায়ে হেঁটেই। নদীর বুক জুড়ে তৈরি হয়েছে অসংখ্য বীজতলা। কোথাও কোথাও চাষ করা হয়েছে ধান ও সরিষাসহ নানা রকম ফসল।

নদীর এমন করুন দুর্দশার প্রভাব পড়েছে নদী তীরবর্তী গ্রামগুলোর কৃষকসহ জেলে পরিবারগুলোর জীবনেও। বোরো মৌসুমে এই নদীর পানির মাধ্যমে সেচ দিয়ে এলাকার কৃষরা তাদের জমি চাষাবাদ করতেন। কিন্তু নদীতে পানি না থাকায় কৃষকরা তাদের বোরো চাষ করতে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন। অপরদিকে এই করতোয়া নদীই ছিল নদী তীরবর্তী জেলে পরিবারগুলোর জীবিকা নির্বাহের অন্যতম উপায়। কিন্তু দখল, দূষণ ও নাব্যতা সংকটসহ নানাবিধ কারণে নদীর এমন বেহাল দশায় জেলেরাও  কর্মহীন হয়ে পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হচ্ছে। কেউ কেউ আবার জীবিকার তাগিদে হয়েছেন এলাকা ছাড়া।

করতোয়া নদী তীরবর্তী হাবিবুল্লাহ নগর ইউনিয়নের রতনকান্দি গ্রামের মৎস্যজীবী আফাল ও ডিলজু জানান, এই নদীতে মাছ ধরে এবং তা বিক্রি করেই জেলেদের সংসার চলতো। কিন্তু এখন নদী আর নদী নেই। নদীতে পানি নেই, মাছও নেই। তাই জেলেরা কর্মহীন অবস্থায় বেকার ও পরিবার পরিজন নিয়ে মানবেতর জীবন কাটাচ্ছে। অনেকেই এ পেশা ছেড়ে অন্য কাজ করছেন। আবার কেউ সংসার চালাতে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন বলেও তিনি জানান।

একই গ্রামের কৃষক আব্দুল হাকিম মোল্লা বলেন, পলি পরে নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীতে পানি না থাকায় নদী তীরবর্তী কৃষকদের বোরো চাষ নিয়ে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হয়। নদীতে পানি না থাকায় বিকল্প ব্যবস্থায় সেচ দিয়ে চাষাবাদ করতে হচ্ছে।

তাই অবিলম্বে করতোয়া নদী খনন করে নদীর পানি প্রবাহ ফিরিয়ে দেওয়া, স্থানীয় জেলেদের কর্মসংস্থান ও এলাকার কৃষকদের চাষাবাদের সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার জন্য এলাকাবাসী সরকার ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন।

বিএস