• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১২, ২০১৯, ১১:২৬ এএম

নবগঙ্গা নদীর বুকে চলছে বোরো আবাদ !

নবগঙ্গা নদীর বুকে চলছে বোরো আবাদ !

 

নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত এককালের খরস্রোতা নবগঙ্গা নদী শুকিয়ে শীর্ণকায় খালে পরিণত হয়েছে। নদীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে অসংখ্য ছোট-বড় চর। স্থানীয় ভূমি দস্যুরা ভূমিহীন সেজে নামে-বেনামে চর দখল করে ধান চাষ করছে। তাই ধান চাষের অন্যতম আধারে পরিণত হয়েছে শুকিয়ে যাওয়া নবগঙ্গা নদী। প্রতি বছর বর্ষা মৌসুমে পলি মাটি পড়ার দরুণ নদী ভরাট হয়ে জেগে উঠেছে ছোট-বড় অসংখ্য চর। নাব্য সংকটের কারণে অনেক আগেই নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে।

জানা গেছে, নড়াইল জেলার মধ্যে সমৃদ্ধ ও সম্ভাবনাময়ী জনপদ লোহাগড়ার উপর দিয়ে মধুমতি, নবগঙ্গা ও বানকানা নদী প্রবাহিত। এছাড়াও রয়েছে অসংখ্য খাল, বিল ও বাওড়। বানকানা নদীর কোন অস্তিত্বই আজ আর লোহাগড়ায় নেই। ৫০ বছর আগেই সমতল ভূমিতে পরিণত হয়ে গেছে এক সময়ের স্রোতস্বিনী বানকানা নদী।

নবগঙ্গা নদী হলো লোহাগড়া উপজেলার অন্যতম প্রধান নদী। নাব্য সংকটের কারণে নবগঙ্গা নদীর সেই জৌলুস আর নেই। নেই সেই আগ্রাসী রূপ। এককালের নবগঙ্গা নদী এখন শুকিয়ে মরা খালে পরিণত হয়েছে। নবগঙ্গা নদীর কুন্দশী এলাকা থেকে মহাজন এলাকা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটারের অবস্থা এতটাই খারাপ যে, অনেক এলাকায় নবগঙ্গা শুকিয়ে পায়ে চলা সরু পথে পরিণত হয়ে পড়েছে। এমনকি নদীতে বাঁধ দিয়ে মৎস্য শিকারীরা মাছ শিকার করছে।

শীত মৌসুমে শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নবগঙ্গা নদীর নাব্যতা অস্বাভাবিক ভাবে কমে গেছে। নদী শুকিয়ে যাওয়ার কারণে লোহাগড়া-নড়াইল ভায়া খুলনা রুটে নৌ যোগাযোগ বন্ধ হয়ে গেছে অনেক আগেই। ফলে নৌ পথে পণ্য পরিবহনে চরম সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এতে ব্যবসা বাণিজ্যে নেমেছে ধস।

অনুসন্ধাণকালে আরও জানা গেছে, নবগঙ্গা নদীর প্রায় ৩৫ কি. মি. এলাকা জুড়ে জেগে উঠেছে ছোট বড় অসংখ্য চর। স্থানীয় ভূমি দস্যুরা নামে বেনাম ভুয়া কাগজ পত্র তৈরী করে জেগে উঠা চর দখল করে ধানের চাষাবাদ করছে। লোহাগড়ায় চর দখলের ঘটনা প্রতি বছরই বাড়ছে। সেই সঙ্গে বাড়ছে মামলা মোকদ্দমা। মৃতপ্রায় নবগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য বিগত ২০১১-১২ অর্থ বছরে ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে মল্লিকপুর থেকে মহাজন পর্যন্ত খনন কাজ করা হলেও তা কোনো কাজে আসে নাই। প্রতি বর্ষা মৌসুমে পলি পড়তে পড়তে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। আর জেগে উঠা চরগুলো ধান চাষের অন্যতম আঁধারে পরিণত হয়ে পড়েছে।

লোহাগড়া উপজেলার কুন্দশী গ্রামের মৎস্যজীবী গণেশ বিশ্বাস,লক্ষীপাশা গ্রামের জিতেন বিশ্বাস, সনজিত ও নেপাল বিশ্বাস বলেন, ‘এই নবগঙ্গা এক সময় ছিল আমাদের রুজি-রুটির উৎস, মৎস্য শিকার করে ছেলে মেয়ে নিয়ে সুখে শান্তিতেই ছিলাম। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে নদীর নাব্যতা কমে যাওয়ায় জীবন জীবিকার পথ বন্ধ হয়ে গেছে।

নদী বাঁচাও আন্দোলনের নেতা সাংবাদিক শেখ সদর উদ্দীম শামীম বলেন, ‘নবগঙ্গার নাব্যতা ফিরিয়ে আনার জন্য নদী খনন জরুরি হয়ে পড়েছে।

লোহাগড়া পৌরসভা মেয়র আশরাফুল আলম নবগঙ্গার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে আক্ষেপ করে বললেন, নদী শাসন আইন নবগঙ্গার জন্য কার্যকর হয় না। প্রকাশ্যে চলছে নবগঙ্গা নদী দখলের প্রতিযোগিতা।

লোহাগড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুকুল কুমার মৈত্র বলেন,  নবগঙ্গা নদীর খননেন প্রকল্প গ্রহণ করে পাঠানো হয়েছে। প্রকল্পটি অনুমোদ হলে খনন কার্যক্রম শুরু হবে। এ সময় দখলদারদের উচ্ছেদও করা হবে বলেও জানান তিনি।

এএস