• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১৮, ২০১৯, ০৭:৫০ পিএম

জবিতে ফের ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ৪০

জবিতে ফের ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, সাংবাদিকসহ আহত ৪০

 

আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দিনভর জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের দুগ্রুপের দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। সংঘর্ষে সমকালের ক্যাম্পাস প্রতিনিধি লতিফুল ইসলাম, দৈনিক সংবাদের রাকিব ইসলাম, খবরপত্রের সোহাগ রাসিফসহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হয়েছে। সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারি) বেলা এগারোটা থেকে বিকাল পাঁচটা পর্যন্ত থেমে থেমে এ সংঘর্ষ চলে। সংঘর্ষ চলাকালে সাত-আটটি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে। পরে পুলিশ টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শাখা ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সভাপতি তরিকুল ইসলাম-সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদিন রাসেলের অনুসারীরা একত্র হয়ে সকাল থেকে ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। এরপর বেলা ১১টার দিকে পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতা-কর্মীরা ক্যাম্পাসে মহড়া দিয়ে প্রবেশ করতে চাইলে তাদের ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দেন সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এসময় উভয় পক্ষের ১৫ জন আহত হয়।

এরপর অন্যান্য পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীরা ক্যাম্পাস গেট থেকে সরে গেলে স্থগিত কমিটি সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকে অনুসারীরা শহীদ মিনারের সামনে অবস্থান নেন। এক পর্যায়ে মোবাইলে ছবি ধারণ করাকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন বিল্ডিংয়ের নিচে থাকা শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা হয়। এসময় কমপক্ষে পাঁচ সাধারণ শিক্ষার্থী আহত হন। এদের সবাইকে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। 

এরপর বিকেল ৩টার দিকে ক্যাম্পাস থেকে বের হয়ে প্রধান ফটকের সামনে ক্যাম্পাসের বাইরের পদপ্রত্যাশী বিদ্রোহী নেতাকর্মীদের ধাওয়া দেয় সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের অনুসারীরা। এ সময় দুপক্ষের কর্মীরা ইট পাটকেল ছোড়াছুড়ি শুরু করে। এতে ৭ থেকে ৮টি ককটেল বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়। মারামারির ঘটনার সংবাদ সংগ্রহকালে স্থগিত কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মী সিএসই বিভাগের ১৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ফাহিম, মনোবিজ্ঞান বিভাগের ১২তম ব্যাচের আবিদ আল হাসান, সমাজকর্ম বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী কিবরিয়াসহ আট দশ জন সমকালের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিবেদক লতিফুল ইসলামের, দৈনিক সংবাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি রাকিবের ওপর সাধারণ সম্পাদকের কর্মী ইতিহাস বিভাগের ৮ম ব্যাচের কর্মী আলী হাসান, খবর পত্রের সোহাগ রাসিফ, বিডি ২৪ রিপোর্ট এর প্রতিনিধি সানাউল্লাহ ফাহাদের ওপর হামলা করে। রাকিককে উদ্ধার করে পুলিশ সুমনা হাসপাতাল এবং লতিফুল ইসলামকে ন্যাশনাল মেডিকেল হাসপাতালে নেয়া হয়। এসময় পুলিশ টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে করে। পরে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে এ সংবাদ লেখা পর্যন্ত সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের কর্মীরা ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়। 

এদিকে, ছাত্রলীগের দুগ্রুপের সংঘর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করে। এসময় বিভিন্ন  বিভাগের ক্লাস এবং ক্যাম্পাসের আশপাশের দোকান পাট বন্ধ হয়ে যায়। রায়সাহেব বাজার থেকে সদরঘাটের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়।

দুপক্ষের সংঘর্ষে জবি ছাত্রলীগের সহসভাপতি হাসান আহমেদ খান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাওছার, সাংগঠনিক সম্পাদক আসাদুজ্জামান, ছাত্রলীগ কর্মী আনিসুর রহমান, হাসিবুর রহমান শুভ, জুয়েল, জিয়াউল হক, মাহবুবুল হাসান রনি, মহিউদ্দিন অনি, শেখ মেহেদী আল হাসান, ইমরান, অপি, ইমরুল নিয়াজ, টুটুল, শরিফুল ইসলাম হিমু, মিরাজ, শাকিল, মিনুন মাহফুজ, শাহরুক আল শোভন, সোহান, আবু মুসা রিফাত, সাজেদুল নাঈম, কাজী তৈয়ব, কামরুল হাসান, শিশির সহ কমপক্ষে ৪০ জন আহত হন। আহতদের বিশ্ববিদ্যালয় মেডিকেল সেন্টার, সুমনা হাসপাতাল,ন্যাশন্যাল মেডিকেল কলেজ এবং ঢাকা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করানো হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবি ছাত্রলীগের স্থগিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক শেখ জয়নুল আবেদীন রাসেল বলেন, ক্যাম্পাসে কি হচ্ছে তা আমরা জানি না। এটা জানার কথা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। কারা কি করছে সেটার দায় আমাদের উপর এখন বর্তায় না। সভাপতি তরিকুল ইসলামকে ফোন দেওয়া হলে তিনি ফোন কেটে দেন। 

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের সভাপতি রেজুয়ানুল হক শোভন বলেন, সাংবাদিকদের উপর আঘাত অত্যন্ত দুঃখজনক। তাদেরকে (জবি ছাত্রলীগ) একবার স্থগিত করে সংশোধনের সুযোগ দিয়েছি। এ ব্যাপারে তদন্ত করে কঠিন থেকে কঠিনতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। 

এ বিষয়ে জবির সহকারী প্রক্টর মোস্তফা কামাল ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষকে অস্বীকার কবলে বলেন, ক্যাম্পাসে অবস্থান নেয়াকে ক্যাম্পাসের বাইরে শিক্ষার্থীদের দুই গ্রুপের মধ্যে ইট পাটকেল ছোড়াছোড়ি ঘটনা ঘটেছে। তবে ক্যাম্পাসের ভিতরে কোন কিছু হয়নি। আমরা সকাল থেকে এ পর্যন্ত পুলিশকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে অবস্থান করেছি। ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

কোতয়ালী জোনের এসি বদরুল রিয়াদ বলেন, ছাত্রলীগের দুগ্রুপ মুখোমুখি সংঘর্ষে জড়াতে চাইলে আমরা মাঝখানে অবস্থান নিয়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দুই দিকে পাঠিয়ে দেয়। এ ঘটনায় তিন প্লাটুন অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন ও চার রাউন্ড টিয়ারসেল নিক্ষেপ করে পরিস্থিতি নেয়া হয়। আমরা পুলিশের পক্ষ থেকে একটি মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।


কেএসটি