• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১৬, ২০১৮, ০৩:১৪ পিএম

নরসিংদীতে আটকের ৪ দিন পর বন্দুকযুদ্ধ!

নরসিংদীতে আটকের ৪ দিন পর বন্দুকযুদ্ধ!

 

 

নরসিংদীর শিবপুর উপজেলায় সিএনজি অটোরিকশা চুরির অভিযোগে সন্দেহজনকভাবে আতিকুর রহমান ভূঁইয়া (২২) নামে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। রবিবার (১১ নভেম্বর) বিকেলে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর পুলিশ হেফাজতে রেখে শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করা সহ বুধবার ( ১৪ নভেম্বর) রাতে নির্জন স্থানে নিয়ে ডান পায়ে গুলি করে আহত করার অভিযোগ করেছেন আহতের পরিবার। 

পুলিশ জানায়, বুধবার (১৪ নভেম্বর) রাতে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় আতিককে একটি পিস্তলসহ আটক করা হয়। আহত আতিকুর রহমান ভূঁইয়া শিবপুর উপজেলার বাঘাব ইউনিয়নের লামপুর গ্রামের আবদুল হান্নান ভূঁইয়ার ছেলে।

আহতের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, ১০/১৫ দিন আগে লামপুর এলাকার সানাউল্লাহ নামের এক ব্যক্তির সিএনজি অটোরিকশা চুরি হয়। এ ঘটনায় রোববার বিকেলে একটি সিএনজি অটোরিকশা নিয়ে সাদা পোশাকে শিবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মনিরের নেতৃত্বে ৪ জন পুলিশ লামপুর এলাকায় প্রবেশ করলে আতিকুর রহমান দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে। এ সময় পুলিশ তাকে আটক করে। পরে আতিকের বাবা পুলিশকে ৮ হাজার টাকা দিলে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। কিন্তু ১০ মিনিট পর টাকা ফেরত দিয়ে আতিককে পুনরায় আটক করে থানায় নিয়ে যায় তারা। 

বৃহস্পতিবার (১৫ নভেম্বর) রাতে আহতের বাবা আবদুল হান্নান ভূঁইয়া বলেন, রোববার সাদা পোশাকে ৪ জন পুলিশ এলাকায় আসলে ভয়ে আমার ছেলে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করায় তাকে আটক করে। এ সময় আমি তাদেরকে নগদ ৮ হাজার টাকা দিলে তারা আতিককে ছেড়ে দেয়। দশ মিনিট পরই আমাকে ডেকে টাকা ফেরত দিয়ে পুনরায় আতিককে ধরে নিয়ে যায়। সন্ধ্যার পর থানায় গিয়ে ১ হাজার টাকা দেই যাতে তাকে কোনো মারধোর না করা হয়। কিন্তু পরদিন সকালে খাবার নিয়ে গিয়ে দেখি তার শরীর ঝলসানো। আতিক জানায় তার শরীরে গরম পানি ঢেলে নির্যাতন করা হয়েছে। তখন আমি পুলিশকে কোর্টে চালান করার জন্য বলি। কিন্তু তারা সুস্থ না হলে চালান করবে না জানায়। এরপর মঙ্গলবার ও বুধবার তার জন্য থানায় খাবার দিয়ে আসি। বৃহস্পতিবার সকালে খাবার নিয়ে যাওয়ার সময় পুলিশ আমাকে ফোন করে জানায়, আতিক পায়ে চোট পেয়ে নরসিংদী জেলা হাসপাতালে ভর্তি। হাসপাতালে গিয়ে দেখি তাঁর ডান পায়ে গুলি করা হয়েছে। আতিক আরো জানায়, রাতে তার চোখ বেঁধে কোথাও নিয়ে গিয়ে পায়ে গুলি করা হয়। অথচ তার বিরুদ্ধে কোন মামলা নাই। 

বাঘাব ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তরুণ মৃধা জানান, রবিবার আতিককে আটক করার পর তার বাবা থানায় গিয়ে সুপারিশ করেছিল। কিন্তু গাড়ি চুরির অভিযোগে তাকে আটক করা হয়েছে। তাই তাকে ছাড়া হয়নি। তাকে কোর্টে চালান করা হবে। পরে আর খোঁজ নেইনি।’

শিবপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মোমিনুল ইসলাম জানান, বুধবার রাতে ডাকাতির প্রস্তুতির খবর পেয়ে উপজেলার মুরগিবের এলাকায় অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে গুলি চালায় ডাকাত সদস্যরা। কিছুক্ষণ পর পুলিশ রুবেল নামের এক জনকে ৪ রাউন্ড গুলি এবং আতিকুর রহমান নামের একজনকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি পিস্তলসহ আটক করা হয়। ওইসময় পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো প্রকার গুলি চালানো হয়নি।  

তিনি আহতের পরিবারের অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, ‘আতিকের বিরুদ্ধে দুটি মামলা রয়েছে। একটি গত মাসের ১০ তারিখে ডাকাতির অভিযোগ এবং অপরটি চলতি মাসের ৭ তারিখে ডাকাতির প্রস্তুতির অভিযোগ। বুধবার রাতে মুরগিবের এলাকায় ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় একটি পিস্তলসহ আতিকুর রহমান নামের একজন এবং রুবেল নামের একজনকে ৪ রাউন্ড গুলিসহ আটক করা হয়। এ ঘটনায় এসআই মনির বাদী হয়ে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের বিরুদ্ধে ডাকাতির প্রস্তুতি ও অস্ত্র আইনে পৃথক দুটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। আতিকের পরিবারের লোকজনের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভিত্তিহীন। তাকে আমরা আগে আটক করিনি।’

নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) এম এন মিজানুর রহমান জানান, বুধবার দিবাগত রাত ১২ টা ৪০ মিনিটে পুলিশ হেফাজতে আতিক নামের এক যুবককে হাসপাতালে নিয়ে আসেন। তার ডান পায়ের হাঁটুর নিচে গুলির চি‎হ্ন রয়েছে।  

এস.সি/