• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ৩০, ২০১৯, ০৮:৪০ এএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ৩০, ২০১৯, ০৩:১৭ পিএম

‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান’

‘সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা- ফাইল ছবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ এখন বৈশ্বিক সমস্যা, এর বিরুদ্ধে আজ বিশ্ব জনমতকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, সেই সাথে দেশের সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের মোকাবিলা করার আহ্বান জানান তিনি । সন্ত্রাসবাদের কোন স্থান এদেশে হবে না। যে কোন মূল্যে বাংলাদেশ জঙ্গী ও সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে বলে অঙ্গিকার ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। 

সোমবার (২৯ এপ্রিল) রাতে জাতীয় সংসদে আনা ১৪৭ (১) বিধিতে আনা সাধারণ প্রস্তাবের উপর বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। প্রস্তাবটি আনেন সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। সংসদে কন্ঠভোটে প্রস্তাবটি সর্বসম্মতিক্রমে গৃহীত হয়।

তিনি বলেন, দেশে আর কখনো যেন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড না ঘটে সেটি আমরা চাই। নুসরাত হত্যাকাণ্ডকে একটি ঘৃণ্য ও জঘন্য হত্যাকাণ্ড বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, এ ঘটনায় দোষিদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। কে কোন দলের তা দেখা হবে না। জঙ্গিবাদ দমনে যা যা করা দরকার তা আমরা করবো বলে জানান তিনি। 

প্রধানমন্ত্রী গত ২১ এপ্রিল শ্রীলঙ্কার সন্ত্রাসী বোমা হামলা ও এর আগে নিউজিল্যাণ্ড শান্তিপূর্ণ দেশের মসজিদে সন্ত্রাসী হামলারও নিন্দা জানান। 
তিনি বলেন, ফেনীতে নুসরাতকে পুড়িতে হত্যা করা হয়। তার উপর যৌন নিপীড়নের তীব্র প্রতিবাদ করে বলে তারই নামে অপবাদ দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করা হয়। আমাদের দলের কিছু নেতা কর্মী এতে জড়িত ছিল। আমি তাদের গ্রেফতারের নির্দেশ দেই। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অনেকে কঠোর আইনের কথা বলেছেন, এ বিষয়ে আইন আছে, তবে প্রয়োজনে আমরা আরো কঠোর আইন করবো। তাদের যেন শাস্তি নিশ্চিত হয় সে ব্যবস্থা আমরা করব।

প্রধানমন্ত্রী এ সময় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাজের প্রশংসা করেন। তিনি দেশবাসীকে বলেন, কারো হাতে কোন রকম সন্ত্রাস সৃষ্টির আলামত দেখেন তা হলে দ্রুত আইন শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। তিনি এসময় ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ তার মা, ভাই ছোট ভাইয়ের হত্যার নিন্দা জানান। তিনি বলেন, বহু বছর এ হত্যার কোন বিচার পাওয়া যায়নি। বিচার চাওয়ারও অধিকার আমাদের ছিল না। তাদেরকে পুরষ্কৃত করা হয়। ১৯৯৬ সালে বিএনপি ভোট চুরি করে ক্ষমতায় এসে খুনী রশীদকে পার্লামেন্টের বিরোধী দলের আসনে বসান। ফারুককে দল তৈরির সুযোগ করে দেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি সরকারে এসে দেশে মানুষের উন্নয়নের চেষ্টা করেছি। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। 

একজন শিক্ষক কিভাবে একজন ছাত্রীকে ধর্ষণ করে, আগুনে পুড়িয়ে মারে। তাহলে শিক্ষা নৈতিকতা কোথায় গেল। এসব সন্ত্রাসীদের অপরাধীদের দলমত আমি দেখবো না, যে দোষী হবে সে যে দলের হোক দলমত নির্বিশেষে আমি কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করব। যারা এ ধরনের অপরাধ করবে তাদের সর্বোচ্চ শাস্তির ব্যবস্থা করব। 

তিনি রোহিঙ্গাদের উপর মিয়ানমারের অত্যাচারের কথা তুলে ধরেন। তিনি বিএনপির ২০১৪ সালের অগ্নি সন্ত্রাসের কথা তুলে ধরে বলেন, এসময় যদি বিএনপি এ ধরনের সন্ত্রাস না করতো তাহলে ফেনী জেলা ওলামা লীগের সভাপতি এ ধরনের অগ্নিসন্ত্রাস করতে সাহস করতো না।

তিনি সন্ত্রাসবাদীদের এক ধরনের মানুষদের বিকৃত মানুষিকতা বলে মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, ইসলাম কখনো এ ধরনের সন্ত্রাসকে সমর্থন করে না। 

নোটিশের উপর বক্তৃতায় তোফায়েল আহমেদ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ উন্নয়নের রোল মডেল হয়েছে। উন্নত দেশের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে তখন এসব অর্জনকে ম্লাণ করতে দেশে এক শ্রেণির দেশদ্রোহী, জঙ্গিবাদীরা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। এসময় তিনি সন্তাসবাদকে নির্মূল করতে দ্রুত বিচার আইন ও কঠোর শাস্তির বিধান প্রণয়নের আহ্বান জানান।

বেগম মতিয়া চৌধুরী এ প্রস্তাবের উপর বক্তৃতাকালে বলেন, বিএনপি অবশেষে এ সংসদে যোগ দিয়েছেন এটা ভাল দিক। অবশেষে তাদের বোধোদয় হওয়ায় তিনি তাদের ধন্যবাদ দেন। তিনি বলেন, এ নোটিশের দুটি দিক রয়েছে। একটি হলো আন্তর্জাতিক দিক অপরটি আমাদের দেশের সন্ত্রাস। 

তিনি বলেন, আমেরিকার তৈরি ওসামা বিন লাদেন, সেই আবার তাদের উপর সন্ত্রাসীকাণ্ড ঘটাল। এসময় তিনি ইসরাইলকে সমর্থন দেয়া ও প্যালেসটাইনকে সাইট লাইনে দিতে তারা কোন কার্পণ্য করেনি। এখানে তাদের নগ্ন চেহারা ফুটে উঠেছে। এসময় তিনি জিয়াউর রহমানকে জঙ্গিবাদের সৃষ্টিকর্তা বলে উল্লেখ করেন। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর স্বপরিবারে হত্যা, গ্রেনেড হামলাসহ দেশের বিভিন্ন সময়ে জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য তিনি বিএনপিকে দায়ি করেন।

সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও ১৪ দলের সমন্বয়ক বলেন, বিশ্বে আজ ধর্মের নামে রক্তের হোলি খেলা শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, নিউজিল্যাণ্ড ও শ্রীলঙ্কায় সম্প্রতি যা ঘটেছে তা ধর্মের নামে সন্ত্রাস। হোলি আর্টিজমের ঘটনা এর বাইরে ছিল না। সন্ত্রাস নির্মূলে কঠোর আইন প্রণয়নের দাবি এবং নুসরাত হত্যাসহ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের দ্রুত বিচার আইনে শাস্তি দাবি জানান।

শেখ ফজলুল করিম সেলিম তার নাতী জায়ানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করে বলেন, বিশ্ব আজ মানবতাহীন হয়ে উঠেছে। ইসলাম ধর্মে কোন সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে বিশ্বাস করে না। তবুও ইসরাইলের মদদ পুষ্ট আইএসআই বিশ্বে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে।

এইচএস/টিএফ