• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৯, ২০১৯, ০২:৩৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৯, ২০১৯, ০২:৩৩ পিএম

মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে জারি করা পরিপত্র অবৈধ : হাইকোর্ট

মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নিয়ে জারি করা পরিপত্র অবৈধ : হাইকোর্ট

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা একটি সংশোধিত পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা করে রায় দিয়েছে হাইকোর্ট। ওই পরিপত্রে মুক্তিযুদ্ধকালে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স ন্যূনতম ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করা হয়েছিল। রোববার (১৯ মে) বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এই  রায় ঘোষণা করে।

একটি রিটের ওপর চূড়ান্ত শুনানি নিয়ে এই রায় দেয় আদালত। বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মাহমুদ হাসান রিটটি করেন।

আদালতে আজ রিটের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন- আইনজীবী  ওমর সাদাত। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন- ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান।

এর আগে ২০১৮ সালের বিভিন্ন সময় একাধিক রিটের শুনানি নিয়ে ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ৬ মাস নির্ধারণ করে জারি করা পরিপত্র কেন আইনগত কর্তৃত্ব-বহির্ভূত ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন হাইকোর্ট।

মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়, মুক্তিযোদ্ধা সচিব, যুগ্ম সচিব, বিদ্যুৎ-জ্বালানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব, অর্থসচিব, জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের (জামুকা) মহাপরিচালক ও বাংলাদেশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের মহাপরিচালককে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়।

ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরের পরিচালক মাহমুদ হাসানের করা রিটের প্রাথমিক শুনানি শেষে ২০১৮ সালের ১৫ জুলাই হাইকোর্টের বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এই আদেশ দেন।

এর আগে এই রিটের শুনানি করেছিলেন ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ আর এম কামরুজ্জামান কাকন ও শুভ্রজিৎ ব্যানার্জি। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল।

রিটকারী আইনজীবী কামরুজ্জামান কাকন তখন সাংবাদিকদের বলেন, বাদী মাহমুদ হাসান ১৯৮৮ সালের ২৬ জুন মুক্তিযোদ্ধা কোটায় ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতরে যোগ দেন। জন্মতারিখ অনুযায়ী, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর তার বয়স হয় ১২ বছর ৪ মাস ১২ দিন। 

‘এর পরিপ্রেক্ষিতে ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদফতর গত ২ মার্চ এক অফিস আদেশে বাদীকে বলেন, ‘১৭ জুলাই তার বয়স ৫৯ বছর পূর্ণ হতে চলেছে। সরকারিবিধি অনুযায়ী, ১৮ জুলাই থেকে তার অবসরোত্তর ছুটি (পিআরএল) শুরু হবে। এ অবস্থায় ছুটি ভোগ করতে চাইলে তাকে আবেদন করতে হবে।’

‘পরবর্তীতে বিদ্যুৎ, জ্বলানি ও খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়ের জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ এক অফিস আদেশে জানায়, গত ১৭ জানুয়ারি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স ১২ বছর ছয় মাস নির্ধারণ করে যে সংশোধিত পরিপত্র জারি করে তার সঙ্গে বাদীর বয়স সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

আইনজীবী কামরুজ্জামান কাকন আরও বলেন, ‘পাবলিক সার্ভেন্টস (রিটায়ারমেন্ট) অ্যাক্ট-১৯৭৪, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ৬০ বছর পর্যন্ত তার চাকরির মেয়াদ থাকার কথা। ফলে, তার প্রতি যে অফিস আদেশ দেয়া হয়েছে তা স্পষ্টতই এ আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। যে কারণে তিনি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের জারি করা গেজেট, সংশোধিত পরিপত্র ও অফিস আদেশটি চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। সেটির ওপর শুনানি শেষে আদালত রুল জারির পাশাপাশি অফিস আদেশটির কার্যকারিতা ছয় মাসের জন্য স্থগিত করেন।’

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালে প্রথমে এক গেজেট জারি করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধার ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১৩ বছর। এরপর গত ১৭ জানুয়ারি একটা পরিপত্রের মাধ্যমে সে গেজেট সংশোধন করে বলা হয়, ১৯৭১ সালের ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স হতে হবে ১২ বছর ৬ মাস।

আইনজীবী আলতাফ হোসেন বলেন, পাবলিক সার্ভেন্টস (রিটায়ারমেন্ট) অ্যাক্ট-১৯৭৪ অনুযায়ী, মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তার ৬০ বছর পর্যন্ত চাকরির সুযোগ পাওয়ার কথা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধাদের ন্যূনতম বয়স নির্ধারণ করে দেয়ায় সে সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে যা পাবলিক সার্ভেন্টস (রিটায়ারমেন্ট) অ্যাক্ট-১৯৭৪ এর ৪(এ) ধারা এবং সংবিধানের ১৫০(২) অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। গত সপ্তাহে হাইকোর্টে রিটটি করা হয়। আদালত রিটের শুনানি নিয়ে রুল ও স্থগিতাদেশ জারি করেন।

এমএ/টিএফ