• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৬, ২০১৯, ১০:২৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৬, ২০১৯, ০৮:০৪ পিএম

জঙ্গি ও অপরাধী শনাক্তে সহায়ক নাগরিক তথ্য

তথ্য সংগ্রহে রাজধানীর ১৮ লাখ ভাড়াটিয়ার দরজায় পুলিশ

তথ্য সংগ্রহে রাজধানীর ১৮ লাখ ভাড়াটিয়ার দরজায় পুলিশ

জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) থেকে প্রাপ্ত তথ্য উপাত্তের সুবিধার কারণে এখন আর অপরাধীরা অপরাধ সংঘটন করে রেহাই পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাত থেকে। পালিয়ে গেলেও খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা গ্রেফতার হচ্ছে। এ কারণে রাজধানীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উদ্যোগে নাগরিক তথ্য সংগ্রহের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিলো। এই উদ্যোগে সাড়াও পড়েছিলো বেশ।

তবে মাঝে কিছুদিনের জন্য নাগরিক তথ্য সংগ্রহের অভিযানটি ঝিমিয়ে পড়ায় রাজধানীতে অপরাধী, জঙ্গি গোষ্ঠী বা উগ্রবাদীদের মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার শঙ্কা রয়েছে। যে কারণে রাজধানীতে পুনরায় শুরু হচ্ছে নাগরিক তথ্য সংগ্রহের কাজ।

অপরাধ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পুলিশকে তথ্য দেওয়া বা সংগ্রহের ক্ষেত্রে নাগরিকরা মনোযোগ হারিয়ে ফেলেছেন। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, মোহাম্মদপুরের বসিলায় জঙ্গি আস্তানায় র‌্যাবের চালানো অভিযানের পর খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, ওই বাড়ির মালিক থানায় তার বাড়িতে বসবাসকারীদের ব্যাপারে তথ্য দেননি। এ রকম আরো অনেক ঘটনা ঘটছে। এজন্য ডিএমপি ফের সপ্তাহব্যাপী নাগরিক তথ্য সংগ্রহ শুরু করছে। 

এ বিষয়ে ডিএমপি কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া জানান, পুলিশের কাছে তথ্য থাকলে চুরি, ছিনতাই, সংঘবদ্ধ অপরাধ, সন্ত্রাসী বা জঙ্গি হামলার মতো বিষয় প্রতিরোধ করা সম্ভব। এজন্য পুলিশকে তথ্য দিতে নাগরিকদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।  

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের জরিপে জানা গেছে, ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের মধ্যে বাড়িওয়ালা দুই লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন। আর ভাড়াটিয়া ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪ জন।  ডিএমপি ৬২ লাখ ৩৪ হাজার ৫৪৭ জনের তথ্য সংগ্রহ করে তাদের সিটিজেন ইনফরমেশন ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে (সিআইএমএস) সংরক্ষণ করেছে। এর মধ্যে বাড়িওয়ালা দুই লাখ ৪১ হাজার ৫০৭ জন, ভাড়াটিয়া ১৮ লাখ ২০ হাজার ৯৪ জন, মেস সদস্য এক লাখ ২১ হাজার ৪০ জন, পরিবারের সদস্য ৩১ লাখ ৬৬ হাজার ৮২১ জন, এছাড়া ড্রাইভার ও গৃহকর্মী ৮ লাখ ৮৩ হাজার ৯৮৪ জন।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ডিএমপি অপরাধ নিয়ন্ত্রণে ঢাকায় বসবাসরত নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের বিষয়টি আরো জোরদার করতে গতকাল ১৫ জুন থেকে ২১ জুন নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ সপ্তাহ পালন করছে। এরমধ্যে ঢাকায় ৫০টি থানার ৩০২টি বিটে ভাগ করে নাগরিকদের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পুলিশ তথ্য সংগ্রহ করবে। এরপর ২১ জুন থেকে ডিএমপি সদর দপ্তর থেকে আটটি টিম আট বিভাগে ভাগ হয়ে দৈবচয়ন পদ্ধতিতে ক্রস চেক করবে। কোথাও কোনো ত্রুটি পেলে সংশ্লিষ্ট বিট পুলিশকে জবাবদিহিতার আওতায় নেয়া হবে।

জানা গেছে, গুলশানে হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গি হামলার পর ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করে সিআইএমএস সফটওয়্যারে সংরক্ষণ শুরু করে ডিএমপি। এর আগে ২০১৫ সালের ডিসেম্বরে এর পাইলট প্রকল্প শুরু করা হয়। উন্নত বিশ্বের আদলে ডিএমপি নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করে। কঠোর গোপনীয়তা ও নিরাপত্তার মাধ্যমে নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। গত তিন বছরে কোনো নাগরিকের তথ্য ফাঁস হওয়ার ঘটনা ঘটেনি।

এ বিষয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় সিআইএমএস সফটওয়্যারের কিছু সফলতার চিত্র তুলে ধরেন। এ সময় তিনি বলেন, গুলশানে হামলার পর আমরা নাগরিকদের তথ্য সংগ্রহ শুরু করি। যারা পরিচয় গোপন করে ঢাকায় বাড়ি ভাড়া নিতে চান তারা এখন ভাড়া নিতে পারছেন না। এ ছাড়া এ সফটওয়্যারের মাধ্যমে ভিকটিম, অপরাধী শনাক্ত করা সম্ভব হয়েছে। কারণ সংরক্ষিত তথ্যে একজন ব্যক্তির জন্য আলাদা ইনডেক্স রয়েছে। ফলে একজন ব্যক্তি এলাকা পরিবর্তন করলেও আমরা তার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করতে পারি। তাদের প্রতারণার তথ্যও আমাদের হাতে এসে পড়ে। 

এইচএম/আরআই
 

আরও পড়ুন