• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ১৭, ২০১৯, ০৮:৫৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৭, ২০১৯, ০৯:২২ এএম

আদালতে তোলা হচ্ছে আজ

মোয়াজ্জেম গ্রেফতারে ভাবমূর্তি রক্ষা হয়েছে পুলিশের

মোয়াজ্জেম গ্রেফতারে ভাবমূর্তি রক্ষা হয়েছে পুলিশের
ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন ইনসেটে নুসরাত

নুসরাত হত্যায় ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতারের মধ্য দিয়ে রক্ষা পেয়েছে পুলিশের ভাবমূর্তি। এ ঘটনায় মধ্যে নুসরাত হত্যার বিচারের ব্যাপারে পুলিশের উপর নাগরিকদের আস্থা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে।

আইসিটি আইনে সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে গ্রেফতার করায় পুলিশকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন ফেনীর সচেতন নাগরিক তথা সারাদেশের সচেতন মানুষ। দেরিতে হলেও মোয়াজ্জেমকে গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে পুলিশ তার ভাবমূর্তি ও মর্যাদা রক্ষা করেছে। সন্তোষ প্রকাশ করেছেন নুসরাতের পরিবারের সদস্য, স্বজন ও স্থানীয়রা। 

ফেনী আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি, প্রবীণ আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইব্রাহিম ভূঁইয়া বলেন, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পুলিশ চাইলে কোনও আসামিই পালিয়ে থাকতে পারে না, ধরা তাকে দিতেই হবে। ওসি মোয়াজ্জেমকে দেরিতে হলেও গ্রেফতার করা হয়েছে। দেরিতে হলেও তাকে  গ্রেফতার করার মধ্য দিয়ে পুলিশ তার ভাবমূর্তি ও মর্যাদা রক্ষা করেছে। এখন আমরা আশা করি, দেশে সবার জন্য যে আইন পুলিশের ক্ষেত্রেও তা প্রযোজ্য হবে।

এ বিষয়ে একাধিক প্রবীণ সংবাদ কর্মী বলেন, বিভাগীয় শাস্তির নামে অপরাধের জন্য পুলিশকে যেসব শাস্তি দেয়া হয়, সেটি আসলে কোনও ধরনের শাস্তিই নয়। এমনটাই ঘটছে পুলিশ সদস্যদের অপরাধের ক্ষেত্রে। এছাড়া পুলিশের কোনও সদস্য অপরাধ করলে তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিচারের বিধান থাকলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা কার্যকর হচ্ছে না। নুসরাত হত্যায় অবহেলার দায়ে অভিযুক্ত সকল কর্মকর্তাকে দেশের প্রচলিত আইনে বিচার করতে হবে।

মানবাধিকারকর্মী নজরুল ইসলাম বলেন, নুসরাত হত্যায় অভিযুক্তদের বিভাগীয় শাস্তির আওতায় আনার কথা বলে আড়াল করা হচ্ছে। এই তদন্তে অভিযুক্তদের অনেকের নাম আসেনি। শুধু তাই নয়, পুলিশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগের তদন্ত এবং বিচার করে পুলিশ। ফলে ওসি মোয়াজ্জেমসহ তার সহযোগীরা যাতে এই ধরনের অপরাধ করে পার পেয়ে না যায়, আদালত সেই বিষয় দিকনির্দেশনা দেবেন বলে সাধারণ মানুষ প্রত্যাশা করছে। 

এদিকে আজ সোমবার (১৭ জুন) সকাল সাড়ে ১০টায় গ্রেফতারকৃত ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনকে আইসিটি মামলায় বিশেষ আদালতে নেয়া হবে। মোয়াজ্জেমকে আদালতে নিতে ইতোমধ্যে সোনাগাজী থানার ৪ সদস্যের পুলিশের একটি টিম গতকাল শেষ রাতে ঢাকায় পৌঁছেছে। এর আগে রোববার (১৬ জুন) রাতে ফেনীর সহকারী পুলিশ সুপার (সোনাগাজী সার্কেল) শফিকুল আহমেদ ভূঁইয়া এ তথ্য নিশ্চিত করেন।

এ ব্যাপারে গতকাল বিকালে পুলিশের ডিসি (রমনা জোন) মারুফ হোসেন সরদার বলেন, সোনাগাজী থানার একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে চার সদস্যের একটি টিম ফেনী থেকে ঢাকার পথে রওনা দিয়েছেন। তারা গিয়ে প্রথমে ওসি মোয়াজ্জেমকে তাদের হেফাজতে নেবেন। পরে তাকে আদালতে নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত হবে।

আদালতে নেয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, সারাদেশে একটি মাত্র সাইবার ট্রাইব্যুনাল রয়েছে। আর সেটি ঢাকায়। তাই ওসি মোয়াজ্জেমকে ফেনীর কোনো আদালতে তোলার প্রশ্নই উঠে না। আমরা আশা করছি, আজ সকাল সাড়ে ১০টার মধ্যে ওসি মোয়াজ্জেমকে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হবে। নিরাপত্তাসহ আমরা সকল ধরনের ব্যবস্থা করে রেখেছি। 

সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেমের আইনজীবী সালমা সুলতানা গতকাল রোববার রাতে জানান, আজ হাইকোর্টে তার আগাম জামিন আবেদন উপস্থাপন করা হয়েছিল। আদালত আগামীকাল কজলিস্টে থাকবে বলে আদেশ দেন। আপনারা তো জানেন তিনি গ্রেফতার হয়েছেন। তাই আগামীকাল আগাম জামিন আবেদন শুনানির সুযোগ নেই। 

এ বিষয়ে বিচারপতি মো. মঈনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খিজির হায়াতের বেঞ্চের সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল গাজী মো. মামুনুর রশিদ বলেন, দুপুর ১টার দিকে আইনজীবী একটি আগাম জামিন আবেদন সম্পূরক লিস্ট করে শুনানির জন্য আবেদন করেন। আদালত আগামীকাল (আজ সোমবার) আবেদন কার্যতালিকায় রাখার আদেশ দেন।

সোনাগাজীতে পুড়িয়ে হত্যা করা মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহানের জবানবন্দির ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়ানোর অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে দায়েরকৃত এক মামলার আসামি মোয়াজ্জেম হোসেন। বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর থেকে তিনি পলাতক ছিলেন।

এইচএম/টিএফ/আরআই