• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৫, ২০১৯, ১২:৩৪ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৫, ২০১৯, ১২:৪০ পিএম

ভিআইপি সেলে যেভাবে আছেন ওসি মোয়াজ্জেম

ভিআইপি সেলে যেভাবে আছেন ওসি মোয়াজ্জেম
ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন

কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিভিশন (ভিআইপি) সেলে রয়েছেন কারাবন্দি ফেনীর সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। এর আগে ওসি মোয়াজ্জেমকে ডিভিশন জন্য কারা কর্তৃপক্ষকে আদেশ দেয় আদালত। এ নির্দেশ আমলে নিয়ে কারাবন্দি মোয়াজ্জেমকে জেলকোড অনুযায়ী বিশেষ সেল থেকে ডিভিশন সেলে স্থানান্তর করা হয়। সোমবার (২৫ জুন) বিকাল ৬টার পরই আদালতের চিঠি পান জেল সুপার ইকবাল হোসেইন। তারপরই এ সংক্রান্ত ব্যবস্থা দ্রুত নেয়া হয়েছে বলে জানায় কারা কর্তৃপক্ষ।   

এ বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের ডিআইজি প্রিজন্স (ঢাকা বিভাগ) টিপু সুলতান বলেন, আমরা কারা কর্তৃপক্ষ সব সময়ই আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আদালতের নির্দেশ মোতাবেক বন্দি মোয়াজ্জেমকে ডিভিশন সেলে পাঠানো হয়েছে। 

তিনি বলেন, ডিভিশনপ্রাপ্ত একজন হাজতি কারাগারে আসবাবপত্র হিসেবে টেবিল, একটা খাট, চাদর ও চেয়ার পেয়ে থাকেন। সেলে পড়ার জন্য পত্রিকা, বইয়ের পাশাপাশি একটি সাধারণ টেলিভিশন, রেডিও পান হাজতি। ব্যবহার্য উপকরণ হিসেবে তিনি সাবান, টুথপেস্ট, আয়না, বালিশ, কম্বল, তোশক, চিরুনি, তেল, পায়ের স্যান্ডেল, তোয়ালে পাচ্ছেন। ভিআইপি সেলে ওসি মোয়াজেম ভালো এবং সুস্থ আছেন। 

এর আগে সোনাগাজী থানায় নুসরাত জাহান রাফির বক্তব্য ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার অভিযোগে করা মামলায় সোনাগাজী মডেল থানার ওসি (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনকে জেলকোড অনুযায়ী ডিভিশন (বিশেষ সুযোগ-সুবিধা) দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন আদালত। 

সোমবার বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেন শুনানি শেষে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে কারা কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দেন।

এর আগে গত ২০ জুন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মাদ আস সামশ জগলুল হোসেনের আদালতে এ আবেদন করেন তার আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ। ডিভিশনের ওপর শুনানির জন্য গত কালকের দিন (২৪ জুন) ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল। আইনজীবী ফারুক আহম্মেদ বিষয়টি গণমাধ্যমকে জানান। তিনি বলেন, ওসি মোয়াজ্জেম প্রথম শ্রেণির নাগরিক। কারাগারে তার প্রথম শ্রেণির ডিভিশন চেয়ে আবেদন করেছি।

১৭ জুন বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক মোহাম্মদ আস শামস জগলুল হোসেন ওসি মোয়াজ্জেমের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন। এদিন তার আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষ তার জামিনের বিরোধিতা করেন।

১৬ জুন রাজধানীর শাহবাগ থেকে তাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ২৭ মে বাংলাদেশ সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক পিবিআইয়ের প্রতিবেদন আমলে নিয়ে এ গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। মামলার বাদী ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন আসামি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির আবেদন করেন। আদালত বাদীর আবেদন আমলে নিয়ে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেন। এদিন সকালে মামলার তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন পুলিশ পিবিআই সদর দপ্তরের সিনিয়র এএসপি রিমা সুলতানা।

গত ১৫ এপ্রিল ফেনীর সোনাগাজী মডেল থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (প্রত্যাহার হওয়া) মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলার আবেদন করেন ব্যারিস্টার সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন। আদালত তার জবানবন্দি নিয়ে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮ এর ২৬, ২৯ ও ৩১ ধারায় করা অভিযোগটি পিটিশন মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য পিবিআইকে নির্দেশ দেন আদালত।

গত ২৭ মার্চ নুসরাত জাহান রাফিকে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা শ্রেণিকক্ষে নিয়ে যৌন নিপীড়ন করেন। এমন অভিযোগ উঠলে দুজনকে থানায় নিয়ে যান ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন। ওসি নিয়ম ভেঙে জেরা করতে নুসরাতের বক্তব্য ভিডিও করেন। মৌখিক অভিযোগ নেয়ার সময় দুই পুরুষের কণ্ঠ শোনা গেলেও সেখানে নুসরাত ছাড়া অন্য কোনো নারী বা তার আইনজীবী ছিলেন না। ভিডিওটি প্রকাশ হলে অধ্যক্ষ ও তার সহযোগীদের সঙ্গে ওসির সখ্যতার বিষয়টি স্পষ্ট হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, থানার ওসির সামনে অঝোরে কাঁদছেন নুসরাত। সেই কান্নার ভিডিও করছিলেন সোনাগাজী থানার ওসি। নুসরাত তার মুখ দুই হাতে ঢেকে রেখেছিলেন। তাতেও ওসির আপত্তি। বারবারই মুখ থেকে হাত সরাও, কান্না থামাও’ বলার পাশাপাশি তিনি এ-ও বলেন, এমন কিছু হয়নি যে এখনো তোমাকে কাঁদতে হবে।

মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে, ওসি মোয়াজ্জেম অনুমতি ছাড়া নিয়মবহির্ভূতভাবে নুসরাতকে জেরা এবং তা ভিডিও করেন। পরবর্তীতে ওই ভিডিও ফেসবুক ও ইউটিউবসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। ভিডিওতে দেখা যায়, ওসি মোয়াজ্জেম অত্যন্ত অপমানজনক ও আপত্তিকর ভাষায় একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছেন নুসরাতকে। নুসরাতের বুকে হাত দিয়ে শ্লীলতাহানি করা হয়েছে কিনা- এমন প্রশ্নও করতে দেখা যায় ওসি মোয়াজ্জেমকে।

অধ্যক্ষের নিপীড়নের ঘটনায় রাফির মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। এরপর গত ৬ এপ্রিল সকালে রাফি আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। এ সময় মাদরাসার এক ছাত্রী তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে এমন সংবাদ দিলে তিনি ওই বিল্ডিংয়ের চার তলায় যান। সেখানে মুখোশ পরা চার-পাঁচজন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে মামলা ও অভিযোগ তুলে নিতে চাপ দেয়। রাফি অস্বীকৃতি জানালে তারা তার গায়ে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়। গত ১০ এপ্রিল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নুসরাতের মৃত্যু ঘটে।

এইচ এম/টিএফ