• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুন ২৬, ২০১৯, ০৪:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ২৬, ২০১৯, ০৪:৩৯ পিএম

অবশেষে মারা গেলেন নরসিংদীর অগ্নিদগ্ধ তরুণী ফুলন

অবশেষে মারা গেলেন নরসিংদীর অগ্নিদগ্ধ তরুণী ফুলন
নরসিংদীর অগ্নিদগ্ধ তরুণী ফুলন রানী বর্মণ - ফাইল ছবি

মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই করে অবশেষে হাসপাতালেই মারা গেলেন নরসিংদীর অগ্নিদগ্ধ তরুণী ফুলন রানী বর্মণ। ২২ বছর বয়সী এই তরুণীকে সম্পত্তির জের ধরে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৩ দিন চিকিৎসাধীন থাকার পর আজ বুধবার (২৬ জুন) সকালে তার মৃত্যু হয়। সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন মেডিকেল পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক মো. বাচ্চু মিয়া।

নরসিংদী পৌর এলাকার বীরপুরের যুগেন্দ্র বর্মণের মেয়ে ফুলন রানী বর্মণ। গত বছর এইচএসসি পাস করেন তিনি। পরিবারের আর্থিক সংকটের কারণে কোথাও তার ভর্তি হওয়া হয়নি।

তারই ফুফাতো ভাই ভবতোষ ও আনন্দয়ের নেতৃত্বে ৬ নিকটাত্মীয় পরিকল্পিতভাবে পুড়িয়ে হত্যা করে ফুলনকে। এ ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের সঞ্জিবসহ ৪ জনকে আটক করে পুলিশ। পরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে ঘটনার সাথে জড়িত সন্দেহে রাজু সূত্রধর নামে একজনকে শহরের শিক্ষা চত্ত্বর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়। রাজুর দেয়া তথ্য মতে, ফুলনের ফুফাতো ভাই ভবতোষ ও আনন্দকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এসময় পুলিশের কাছে আগুন দেয়ার কথা তারা স্বীকার করেন। পরে তারা আদালতে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করে। 

জানা যায়, গত ১৩ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে নরসিংদীর বীরপুরে কলেজ ছাত্রী ফুলন বর্মণ কেক নিয়ে বাড়ি ফিরছিল। বাড়ির আঙ্গিনায় পৌঁছলে পূর্ব থেকে ওৎপেতে থাকা অজ্ঞাতনামা দুইজন দুর্বৃত্ত তার হাত মুখ চেপে ধরে। পরে টেনে হিঁচড়ে পাশের একটি নির্জন স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে তার শরীরে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। ওই সময় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে নরসিংদী সদর হাসপাতালে ও পরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করেন।

এ ঘটনায় তার বাবা যোগেন্দ্র বর্মণ বাদী হয়ে আজ্ঞাত নামা দুই জনকে আসামি করে সদর মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলার তদন্ত ভার পরে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের কাছে। এরই প্রেক্ষিতে ডিবি উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে অভিযানে নামে পুলিশ।

এদিকে, জবাবন্দিতে রাজু ও ভবতোষ উল্লেখ করেন, ফুলনের ফুপাত ভাই ভবতোষ এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মণ। ফুলনের পিতা যোগেন্দ্রর সাথে প্রতিবেশী সুখ লাল ও হিরা লালের সাথে বাড়ির জমি সংক্রান্ত বিরোধ চলছিল। এ নিয়ে এলাকায় সালিশ দরবার হয়েছে। ঘটনার দুই দিন আগে ১১ জুন ভবতোষ ও তার মামীর (ফুলনের মা) সঙ্গে ঝগড়া হয় প্রতিবেশী সুখ লালের। এসময় ক্ষিপ্ত হয়ে ফুলনের মা বলেন, এখানে থাকবো না। দরকার হয় জমি বিক্রি করে অন্যত্র চলে যাব।

এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে ফুলনের শরীরে আগুন দিয়ে প্রতিবেশীকে মামলায় ফাঁসানোর পরিকল্পনা করে কলেজ ছাত্রী ফুলনের ভাই ভবতোষ। ঘটনার দিন ভবতোষ তার বন্ধু রাজু সূত্রধর ও আনন্দ বর্মণকে নিয়ে বীরপুর রেল লাইনে বসে কিভাবে কাজ সম্পন্ন করা হবে সে পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী মামাত বোন ফুলন কেক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে ফুলনের মাথায় ও শরীরে কেরোসিন ঢেলে গায়ে আগুন লাগিয়ে দেয় ভবতোষ ও তার বন্ধুরা।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপ-পরিদর্শক আব্দুল গাফফার বলেন, বর্তমানে অগ্নিদগ্ধের বিষয়টি খুবই আলোচিত ও সেনসিটিব। তাই অপরাধীরা প্রতিবেশীকে ফাঁসাতে এই পথ বেছে নেয়। তারা ভেবেছে এতে করে প্রতিকেশীরা দমন হবে। আর সম্পত্তির ওয়ারিশ পাবে ভবতোষ। সেই লোভ থেকেই তারা এই কাজ করেছে বলে তদন্তে বেরিয়ে এসেছে।

তিনি আরো বলেন, দগ্ধের ঘটনাটিকে ফাস্টট্রেক হিসেবে গুরুত্ব দেয় জেলা পুলিশ সুপার মিরাজ উদ্দিন (বিপিএস) স্যার। ওনার নির্দেশনা নিয়েই তদন্তে নামি। এবং ঘটনার ৯ দিনের মধ্য এর নেপথ্যের রহস্য উদঘাটন করা হয়।

এইচ এম/টিএফ