• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৬, ২০১৯, ১০:০৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৬, ২০১৯, ১০:১১ এএম

আদালতে সাইফুলের জবানবন্দি

নিজের অবস্থানকে শক্ত করতেই খাদেমকে খুন

নিজের অবস্থানকে শক্ত করতেই খাদেমকে খুন

আজিমপুর কবরস্থান মেয়র হানিফ জামে মসজিদের প্রধান খাদেম ছিলেন সাইফুল ইসলাম। কিন্তু দায়িত্বে অবহেলার কারণে তাকে সরিয়ে আবু হানিফকে ওই পদে বসানো হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয় সাইফুল। নিজের অবস্থানকে শক্ত করতেই সে খুন করে খাদেম আবু হানিফকে। এরপর আজিমপুর কবরস্থানে মাটিচাপা দিয়ে লাশ গুম করার পরিকল্পনাও ছিল তার। 

কিন্তু তার আগেই নিহত হানিফের স্বজন ও বন্ধুদের অনুসন্ধানের কারণে তার মরদেহ মসজিদের সিঁড়ি গোড়ায় ফেলে পালিয়ে যায় ঘাতক সাইফুল। গ্রেফতারকৃত সাইফুল আদালতে ঘটনার বিশদ বর্ণনা দিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদান করেছে। এরপরই আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন। সোমবার (১৬ জুলাই) দুপুরে পিবিআইয়ের প্রধান বনজ কুমার মজুমদার এমনই তথ্য দিয়েছেন। 

তিনি বলেন, আজিমপুরে মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম হানিফ শেখকে হত্যার পর থেকে ওই মসজিদে আতঙ্ক রয়েছে। মুসুল্লিদের মধ্যে চলছে কানাঘুষা। তাছাড়া মসজিদের পাশেই রয়েছে সরকারি অফিসার্স কোয়াটার। এ সকল সরকারি অফিসারদের মধ্যেও রয়েছে গুঞ্জন। মসজিদের মুসুল্লির উপস্থিতি আগের থেকে কমেছে।

স্থানীয় মুসুল্লিরা বলেন, যারা মানুষের মধ্যে আল্লাহর পথে যাওয়ার জন্য আহ্বান করে থাকে। তারা মসজিদের ভেতরে একজন খাদেমকে হত্যা করে। 

ওই মসজিদের মুসুল্লি রফিকুল ইসলাম বলেন, খাদেম হানিফ শেখকে মেরে ফেলার পর সাইফুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরপর থেকে ওই মসজিদে মামুন অর রশিদ নামে আরও একজন খাদেম ( সহকারী) তিনি কাজ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে মসজিদ কমিটির লোকজন এ বিষয়ে জরুরি মিটিং করেছেন। নতুন করে খাদেমসহ অন্যান্য লোকজন যোগদান করাবেন। এছাড়া মসজিদের আগে যারা ছিলেন। যারা এখনও রয়েছেন, তাদের কাউকে রাখার পক্ষে নয় কমিটি। এঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় দুর্নামও ছড়িয়েছে।    

গত ৯ জুলাই বনজ কুমার মজুমদার সংবাদ সম্মেলনে জানান, ৮ জুলাই সন্ধ্যা সোয়া ৭টার দিকে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ এলাকার একটি বাসা থেকে এ মামলার প্রধান আসামি সাইফুলকে গ্রেফতার করে পিবিআই ঢাকা মেট্রোর একটি টিম। গ্রেফতারের পর তাকে ঢাকায় নিয়ে আসা হয়। এরআগে গত ২ জুলাই আজিমপুর গোরস্তান সংলগ্ন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ জামে মসজিদের খাদেম মো. হানিফ শেখকে ওই মসজিদের দোতলায় তার নিজের কক্ষে হত্যা করে সাইফুল। ঘুমন্ত অবস্থায় সাইফুল একটি চাকু দিয়ে হানিফ শেখকে বুকে ও পেটে দুটি আঘাত করে। এরপর হানিফ জেগে যায়। তখন তার মুখ চেপে ধরে একের পর এক আঘাত করতে থাকে সাইফুল। এক পর্যায়ে হানিফ শেখ মারা যান। এ সময় মসজিদের পরিচ্ছন্নতাকর্মী বাহারউদ্দিন ও অন্য খাদেম ফরিদউদ্দিন কেউই কক্ষে ছিলেন না। হত্যার পর আজিমপুর কবরস্থানের একটি ভাঙা কবরে হানিফের লাশ গুম করার পরিকল্পনা করেছিল সাইফুল।

প্রসঙ্গত, হানিফ শেখকে হত্যার পর নিজের বেশভূষা পাল্টে ফেলে সাইফুল ইসলাম (৩৮)। দাড়ি কামিয়ে ছদ্মবেশ ধারণ করে। হানিফ শেখকে হত্যার পর তার লাশ গুম করতে চেয়েছিল খাদেম সাইফুল । কিন্তু মসজিদে অন্যান্য কর্মচারী ও খাদেম উপস্থিত থাকায় সে সফল হয়নি। এরপর মসজিদের একটি কক্ষের বারান্দায় হানিফের বস্তাবন্দি লাশ রেখে পালিয়ে যায় সাইফুল। 

সে প্রথমে নোয়াখালী তার গ্রামের বাড়িতে যায়। সেখানে তার স্ত্রী ও সন্তান রয়েছে। এরপর সেখান থেকে চট্টগ্রামে তার শ্বশুরবাড়িতে এবং পরে চাচার বাসায় যায়। তবে কেউ তাকে রাখতে চায়নি। এরপর সে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদে তার ফুফুর বাসায় যায়। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করে পিবিআই।

এইচ এম/টিএফ