• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ০৩:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৯, ০৬:২৮ পিএম

কর্মচারীদের মাঝে আতঙ্ক

দুদকের অভিযানে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে অসন্তোষ

দুদকের অভিযানে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে অসন্তোষ
রাজধানীর মতিঝিলেনৌ-পরিবহন অধিদপ্তর কার্যালয়ে আটক মির্জা সাইফুর রহমান - ছবি : জাগরণ

রাজধানীর মতিঝিলে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) অভিযানে ঘুষের দুই লাখ টাকাসহ সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমানকে আটকের পর থেকে সরকারের এই প্রতিষ্ঠানটির কর্মচারীদের মাঝে বিরাজ করছে আতঙ্ক। আর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির মহাপরিচালকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের মাঝেও। দুদকের আটকের প্রক্রিয়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন তারা।                                                    
আজ (মঙ্গলবার) দুপুরে নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের মতিঝিল কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে কথা বলে তাদের ক্ষোভ ও আতঙ্কের কথা জানা যায়। কয়েকজন অফিস সহকারী দৈনিক জাগরণকে জানান, ‘সকালে তাদের স্যাররা অফিসে এসে তাদের নির্ধারিত আলমারি, ফাইল কেবিনেট এবং টেবিলের ড্রয়ার ভালভাবে পরিষ্কার করেছেন। দেখেছেন, কেউ কিছু রেখে গেল কি না? কর্মকর্তাদের মতো তারাও এখন এসব নিয়ে আতঙ্কিত।’  

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের সার্ভেয়ার হিসেবে কর্মরতসহ একাধিক কর্মকর্তা দৈনিক জাগরণের কাছে ঘটনার বিষয়ে তাদের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘আমরা গতকাল রাতে আমাদের ডিজির সঙ্গে বৈঠক করে জানিয়েছি, এভাবে সাজানো নাটকে আমাদের সম্মান ক্ষুণ্ন করা হলে আমরা চাকরি থেকে রিজাইন করবো। আমাদেরও তো পরিবার, বন্ধু-বান্ধব,আত্মীয়-স্বজন আছে। তারা দেখবে আমাদের হাতকড়া পড়িয়ে আটক করে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে!’ 

অপর এক কর্মকর্তা বলেন, ‘মির্জা সাইফুর রহমান ম্যানেজমেন্টের ওপর একটি ওয়ার্কশপ শেষে করে মাত্র দুদিন আগে চীন থেকে দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে তিনি কবে কার কাছে টাকা চেয়েছেন? লোকটা এসে চেয়ারেও তো ঠিকভাবে বসলো না।’

নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরে মহাপরিচালক (ডিজি) কমডোর আরিফুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ‘কেউ দুর্নীতির সঙ্গে জড়িয়ে পড়লে তাকে আটক করা নিয়ে আমার ব্যক্তিগত কোনো ক্ষোভ নেই। তবে প্রক্রিয়া নিয়ে আমার বক্তব্য আছে। যেভাবে এই প্রতিষ্ঠানটির একজন সার্ভেয়ারকে আটক করা হয়েছে, সেটা বোধ করি যথাযথ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে হতে পারত।’

মহাপরিচালক ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি নৌ-পরিবহন অধিদপ্তরের ডিজির দায়িত্বে আছি। দুদক টিম এসে আটক করতে চাওয়া ব্যক্তিসহ তার কক্ষ ঘিরে রেখে আমাকে জানাতে পারতেন। নিশ্চয়ই আমি তাদের সহযোগিতা করতে পারতাম। টাকা উদ্ধারের বিষয়টি আমিও বলতে পারতাম। 

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক চলছিল। সদরঘাটের সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমান সঠিক সময়ে বৈঠকে আসতে পারেননি। আমি তাকে দ্রুত ডেকে পাঠিয়েছিলাম। সম্ভবত ১৫ মিনিট পরে এসে বৈঠকে যোগ দেন। বৈঠক শেষে তার রুমে প্রবেশ করতেই দুদকের সহকারী পরিচালক আবদুল ওয়াদুদের নেতৃত্বে একটি টিম তাকে আটক করে। এসময় দুদকের পক্ষ জানানো হয়, তাকে ২ লাখ টাকাসহ হাতে-নাতে আটক করা হয়েছে। বিষয়টি আমাদের কাছে পরিষ্কার নয়।’ 

মহাপরিচালক জানান, এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত চেয়ে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে নৌ-পরিবহণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী এবং সচিবকে আজই তারা চিঠি দিতে যাচ্ছেন।     

সোমবার (২ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সার্ভেয়ার মির্জা সাইফুর রহমানকে তার নিজ কার্যালয় থেকে দুদকের একটি টিম আটক করে সেগুনবাগিচায় ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। তাকে আজ আদালতে হাজির করার কথা রয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মির্জা সাইফুর রহমানকে আটক করতে দুদকের ঢাকা সমন্বিত জেলা কার্যালয় থেকে বিশেষ টিম গঠন করা হয়। অভিযোগকারীর কাছ থেকে জাহাজের সার্ভে সংক্রান্ত কাজ করে দেয়ার জন্য ঘুষ হিসেবে দুই লাখ টাকা গ্রহণকালে তাকে আটক করা হয়। 

এমএএম/ এফসি

আরও পড়ুন