• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯, ০৯:০৮ এএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ৫, ২০১৯, ০৯:১২ এএম

সারাদেশে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধ

সারাদেশে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠেছে কিশোর অপরাধ

................--------------................

ঢাকার বাইরেও বড় বড় শহরে বাড়ছে কিশোর গ্যাং। এ সব গ্যাং চলছে রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায়

ঢাকাসহ বড় বড় শহরে বিভিন্ন অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে কিশোররা। দেশে কমপক্ষে ৮ হাজার কিশোর বিভিন্ন গ্রুপের নামে খুন-চাদাঁবাজি-ছিনতাই-ইভটিজিংসহ নানা অপরাধ করে বেড়াচ্ছে। এসব গ্যাং নিয়ে চিন্তিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। তাদের প্রতিরোধে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতরে। গত একমাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীসহ সারাদেশের বিভাগীয় এবং জেলা শহরে অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন কিশোর গ্যাংয়ের প্রায় ১ হাজার সদস্য গ্রেফতার করা হয়েছে। আদালতের মাধ্যমে তাদের বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দিয়ে কিশোর সংশোধনাগারে পাঠানো হয়েছে। তারপরেও ঠেকানো যাচ্ছে না কিশোরদের কার্যকলাপ। অভিভাবকরাও এ নিয়ে আছেন উৎকণ্ঠায়।

ডিএমপির ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা জানান, অদ্ভূত সব নাম দিয়ে চলছে ঢাকাসহ বড় বড় শহরে কিশোরদের কার্যকলাপ। এক একটি দলে থাকছে ৪০ থেকে ৫০ কিশোর। যাদের বয়স ১৪ থেকে ২০ এর মধ্যে। রাজধানীতে কিশোর গ্যাং এর ৫৫টি গ্রুপ নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে জড়িত। উত্তরা এলাকায় সক্রিয় ৫টি গ্রুপ। এদের মধ্যে দুর্ধষ হয়ে উঠছে ডিসকো বয়েজ ও ফাস্ট হিটার বস। ধানমণ্ডি-মোহাম্মদপুরে ৫টি গ্রুপের মধ্যে লারা দে ও স্টার বন্ড গ্রুপের কর্মকাণ্ড ভাবিয়ে তুলেছে প্রশাসনকে। খিলগাঁও-মতিঝিলে ৫-৬টি গ্রুপের মধ্যে ভাণ্ডারি, জমজ ভাই ও ভলিউম-টু গ্রুপের দৌরাত্ম্যে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। যাত্রাবাড়ী ও পুরান ঢাকায় সক্রিয় জুম্মন গ্রুপ ও ফাহিম মেহেদি গ্যাং। মিরপুরে ৩টি গ্রুপের সবচেয়ে বিপজ্জনক ব্লেড রানার গ্রুপ ও ড্যান্ডি বয়েজ। পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের নিমতলী ও নবাব কাটারা নতুন রাস্তা নামে একাধিক মহল্লায় রামরাজত্ব কায়েম করেছে কিশোর গ্যাংয়ের অর্ধশত সদস্য। এ কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় মানিক নামে এক কিশোর। তার বিরুদ্ধে বংশাল-চকবাজার থানায় একাধিক মামলা এবং ইভটিজিংয়ে অভিযোগ রয়েছে। মহল্লার ভেতরে তার এ সকল অনৈতিক কাজে এলাকাবাসী অতিষ্ট। কিন্তু ভয়ে কেউ এ সকল কৃতকর্মের প্রতিবাদ করতে সাহস পায় না।

ঢাকার বাইরে কুমিল্লা, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারেও রয়েছে কিশোর গ্যাং এর একাধিক গ্রুপ। আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিসংখ্যান বলছে, সারা দেশে কমপক্ষে ৮ হাজার কিশোর বিভিন্ন গ্রুপের নামে অপরাধে জড়িয়ে পড়েছে। এ পরিস্থিতিতে কিশোর গ্যাং প্রতিহত করতে পুলিশ সুপারদের বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে পুলিশ সদর দফতর।

এসপি বরাবরে প্রেরিত গোয়েন্দা প্রতিবেদন বলছে, ঢাকার বাইরেও বড় বড় শহরে বাড়ছে কিশোর গ্যাং। জানা গেছে, এ সব গ্যাং চলছে রাজনৈতিক বড় ভাইদের ছত্রছায়ায়। 

বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) সিনিয়র-জুনিয়র দ্বন্দে মোহাম্মদপুরে খুন হয়েছেন মহসিন নামে এক কিশোর। পুলিশ জানায়, রাজধানীর মোহাম্মদপুরে সিনিয়র জুনিয়র দ্বন্দে কিশোর গ্যাংয়ের দুই পক্ষের সংঘর্ষে ছুরিকাঘাতে মহসিন (১৬) নামে এক কিশোর খুন হয়েছেন। এ সময় অপর আরও ৩ জন আহত হলে তাদের ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় পুলিশ কিশোর গ্যাংস্টারদের কয়েকজনকে আটকের পর জিজ্ঞাসাবাদ করছে।

মোহাম্মদপুর থানার চান হাউজিং পাইনিয়ার কলেজের সামনে রাস্তায় রকি ও রবিন গ্রুপের মধ্যে সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে ঝগড়া হয়। হাতাহাতির এক পযার্য়ে ছুরিকাঘাতে আহত হয় মহসিন। পরে তাকে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে ১০টায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় মহসিন মারা যায়। শরীরের বিভন্নস্থানে গুরুতর জখম হওয়ায় রুবেল হাওলাদারকে (২৩) ঢামেক হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। 

তেজগাঁও বিভাগ পুলিশের উপ-কমিশনার আনিসুর রহমান দৈনিক জাগরণকে জানান, নিহতের বয়স ১৫-১৬। ওই কিশোর তার প্রেমিকাকে নিয়ে ঘুরতে গিয়েছিলো। সেখানে তার সাথে কিছু বখাটেদের বাদানুবাদ হয়। তারপর তারা ওখান থেকে ফিরে যাওয়ার সময় মোহাম্মদপুর এলাকায় তাদের ওপর হামলা করে সেই বখাটের দল।

মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে মহানগরের রাজদীঘির পাড় এলাকায় ‘তুই’ করে বলায় গাজীপুরে কিশোর গ্যাং চক্রের হাতে খুন হয় নূরুল ইসলাম নামে এক কিশোর চা বিক্রেতা। 

পুলিশের তদন্ত থেকে জানা যায়, নিহত নূরুল ইসলামও কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য ছিলেন। সিনিয়র-জুনিয়র নিয়ে সে কিশোর গ্যাংয়ের এক সদস্যের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিল।

গাজীপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এজাজ শফি জানান, ওই চক্রের এক সিনিয়র সদস্যকে ‘তুই ’বলে সম্বোধন করায় নূরুল ইসলামকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।

এ ঘটনায় কিশোর গ্যাংয়ের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) রাতে নুরুলের বাবা ফকির আলমগীর ওই মামলা করেন। তবে এখন পর্যন্ত পুলিশ কোনও আসামিকে গ্রেফতার করতে পারে নি। আসামিরা হলেন- গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাহাপাড়া এলাকার রানা, মনির হোসেন, সৌরভ, মাসুম, শাহরিয়ার ওরফে রক্তিম ও থানা রোড এলাকার রাসেল। এর মধ্যে মামলায় সৌরভ ব্যতীত পাঁচ আসামির বয়স ১৮ বছর উল্লেখ করা হয়েছে। সৌরভের বয়স লেখা হয়েছে ১৯ বছর।

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ এলাকা থেকে কিশোর গ্যাং এর তিন সদস্যকে পাঁচটি ধারালো ছোড়াসহ আটক করে পুলিশে দিয়েছে এলাকাবাসী। পরে সদর থানা পুলিশ আটককৃতদের ফতুল্লা মডেল থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করে। আটককৃতরা দেওভোগ এলাকার বাসিন্দা। তাদের প্রত্যেকের বয়স ১৫ থেকে ১৭ বছরের মধ্যে।

ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসলাম হোসেন জানান, তিন কিশোরের মধ্যে একজনের বড় ভাইকে কয়েকদিন আগে প্রতিপক্ষের ছেলেরা মারধর করে চুল কেটে দেয়। এর জের ধরে প্রতিপক্ষের লোকজনের ওপর হামলা করতে মূলত এরা ধারালো ছোড়া নিয়ে সঙ্ঘবদ্ধ হয়। স্থানীয়রা তাদের ধাওয়া দিয়ে তিনজনকে আটক করে। এ কিশোররা মূলত একটি গ্রুপ বা গ্যাং। এরা প্রায় সময়ই এলাকায় এভাবে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেয়।

ঢাকা মেট্টোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির বিদায়ী কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশনা দেয়া রয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের গ্রেফতারে রাজধানীসহ সারাদেশে অভিযান চলমান রয়েছে। পাশপাশি ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালিত হচ্ছে।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন