• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০২:১৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০২:২৪ পিএম

এবার ধরাশায়ী হচ্ছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর পৃষ্ঠপোষকরা 

এবার ধরাশায়ী হচ্ছেন ক্যাসিনো ব্যবসায়ীর পৃষ্ঠপোষকরা 

এবার অবৈধ ক্যাসিনো কারবার, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভূমিদস্যুদের সঙ্গে জড়িত পৃষ্ঠপোষকদের আমলনামা সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে গেছে। তাদের আইনের আওতায় আনা হচ্ছে। এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র। এর আগে, পৃষ্ঠপোষকদের নামের তালিকা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দফতরে পাঠানো হয়।

সেখানে যাচাই-বাছাই ও বাদ বিচারের পরই ১৭ জনের নামের তালিকাসহ শীর্ষ গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তার হাতে ন্যস্ত করা হয়। পাশাপাশি অ্যাকশনে যেতে নির্দেশ দেয়া হয়। দুনীর্তি দমন, জুয়া খেলা, মাদক ব্যবসা, টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজদের ছাড়ের ব্যাপারে কেউ যাতে কোন সুপারিশ বা তদবির নিয়ে কোনো ফোন বা দফতরে না আসেন এমন কঠোর হুঁশিয়ারী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এ নির্দেশের পরই তিনি বিদেশ সফরে যান।

প্রধানমন্ত্রীর দফতরের উদ্ধৃতি দিয়ে এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন সরকারি দলের যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবকলীগ, শ্রমিকলীগ, মহানগরীর থানা ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের বহু নেতা ও দলীয় অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলররা অবৈধ ক্যাসিনোর ব্যবসা, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি ও ভূমিদস্যুতার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন। কেউ কেউ আবার এসব অনৈতিক কাজের পৃষ্ঠপোষকতা করে লাভবান হয়েছেন। এবার তারা ধরাশায়ী হতে পারেন। 

ওই কর্মকর্তা বলেন, সরকারের শীর্ষ মহল থেকে কঠোর নির্দেশনা পেয়ে সব ধরনের অপরাধ দমনে হার্ড লাইনে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। অবৈধ ক্যাসিনো কারবারসহ নানা জঘন্য অপরাধে জড়িয়ে পড়া সরকারদলীয় ক্যাডার নেতাদের পাশাপাশি এদের প্রভাবশালী পৃষ্ঠপোষকরা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারিতে রয়েছেন। সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা এমন প্রভাবশালী ২০-২৫ জন নেতা এখন গ্রেফতার আতঙ্কে রয়েছেন।

অন্যদিকে গত বুধবার যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া অবৈধ ক্যাসিনো কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার হওয়ায় বিভিন্ন মহলে নানা প্রশ্ন উঠছে।  

গোয়েন্দা সূত্র বলেছে, খালেদের ক্যাসিনো থেকে শুরু করে সকল অপকর্মের গুরু হিসেবে পরিচিত ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল হোসেন সম্রাট। খালেদ গ্রেফতারের পরই তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে খুঁজছে। 

এদিকে আওয়ামী লীগের একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, দীর্ঘদিন ধরে যুবলীগ, ছাত্রলীগ, শ্রমিক লীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগসহ দলের বিভিন্ন সহযোগী সংগঠন ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের সতর্ক করে আসছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কিন্তু এরপরও কিছু নেতাকর্মী বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে কঠোর অবস্থান নিয়েছে সরকার। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে এসব নেতাকর্মীদের চাঁদাবাজিসহ বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগের বিষয়ে খোঁজ-খবর নেয়া হয়েছে। তদন্তে এসব অভিযোগের প্রমাণ মেলায় অ্যাকশনের যেতে বাধ্য হয় সরকারের শীর্ষ মহল। সেখান থেকে নির্দেশ পেয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও হার্ড লাইনে অবস্থান নিয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার মোহাম্মদ শফিকুল ইসলাম শনিবার (২২ সেপ্টেম্বর) বলেছেন, রাজধানীতে অবৈধ জুয়ার আড্ডা বা কোনো ধরনের ক্যাসিনো পরিচালনা করতে দেয়া হবে না। এসবের নেপথ্যে যত প্রভাবশালীই জড়িত থাকুক না কেন, আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশ কঠোর হবে। র‌্যাব পাশাপাশি পুলিশও অভিযান শুরু করেছে। বগুড়া, চট্টগ্রাম, টঙ্গীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে পুলিশের অভিযান চলমান রয়েছে।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, ক্যাসিনোতে যারা জুয়া খেলতে আসেন তারাই মাদক সেবন করছেন। ক্যাসিনো যদি বন্ধ হয়ে যায়, তাহলে সেখানে মাদক সেবনও বন্ধ হবে। ক্যাসিনো বন্ধ করেও যদি কেউ মাদকের কারবার চালানোর চেষ্টা করে, তবে তার বিরুদ্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল বলেছেন, অবৈধ জুয়া ও ক্যাসিনো চালানোর সঙ্গে প্রশাসনের কেউ জড়িত থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। রাজধানীতে দীর্ঘদিন ধরে ক্যাসিনো চলার বিষয়টি পুলিশের কোনো কোনো ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানতেন বলে অভিযোগ আছে। কিন্তু ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। 

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দারাই আমাদের তথ্য দিয়েছে। তাদের তথ্যের ভিত্তিতে অপারেশন শুরু হয়েছে। প্রশাসনের কেউ যদি এখানে জড়িত থাকেন, বা কারও বিরুদ্ধে যদি সহযোগিতার প্রমাণ পাওয়া যায়, তবে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তারা বিচারের মুখোমুখি হবেন।

এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন