• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৪:২৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৯, ০৫:৫৭ পিএম

সম্রাট নিয়ন্ত্রিত ৪ ক্লাব থেকে টাকা মাদক ও জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার

সম্রাট নিয়ন্ত্রিত ৪ ক্লাব থেকে টাকা মাদক ও জুয়ার সামগ্রী উদ্ধার
অভিযানে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়-ছবি : জাগরণ

মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে পুলিশ একযোগে অভিযান চালায় আরামবাগ, দিলকুশা, মোহামেডান ও ভিক্টোরিয়া ক্লাব।

ক্লাবগুলো থেকে ক্যা‌সি‌নোর সরঞ্জাম ও নগদ টাকা জব্দ করা হয়। অভিযানের সময় এসব ক্লাবের কোনও প্রতিনিধিকে পাওয়া যায় নি। তাৎক্ষণিক গ্রেফতার করার খবর পাওয়া যায় নি।

ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন খবরের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

তিনি বলেন, সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লাবে অভিযানের পর বিভিন্ন ক্লাব থেকে জিনিসপত্র এ ক্লাবে এনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগও রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, উল্লেখিত ৪টি ক্লাবের নিয়ন্ত্রক ছিলেন ঢাকা দক্ষিণ যুবলীগের সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট।

গত কয়েকদিনে র‌্যাব ও পুলিশের সাড়াশি অভিযানে মতিঝিল ক্লাবপাড়ায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বন্ধ রয়েছে ছোট-খাটো সকল ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। 

রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে অভিযান শুরু হয়। পুলিশ প্রথমদফায়  দিলকুশা স্পোটিং ক্লাবে অভিযান চালায়। সেখান থেকে টাকা, জুয়া খেলার ক্যাসিনো সরঞ্জাম ও বিপুল পরিমাণ মদের বোতল জব্দ করা হয়।

পুলিশের আরেকটি দল ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাবে অভিযান চালায়। সেখান থেকেও ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার সরঞ্জাম জব্দ করা হয়। 

পুলিশ ভিক্টোরিয়া স্পোটিং ক্লাবে অভিযান শেষ করে যায় মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাবে। সেখানকার চিত্র একই বলে জানান ডিসি আনোয়ার হোসেন। অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনোর সরঞ্জাম ও কিছু তরল পদার্থ পেয়েছে পুলিশ। সেগুলো জব্দ করেছে পুলিশ। ক্লাবের সকল সরঞ্জাম ভেতরে রেখে তালা বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ।  

পরে পুলিশ আরামবাগ স্পোটিং ক্লাবেও অভিযান চালিয়ে ক্যাসিনো বা জুয়া খেলার সরঞ্জাম পায় পুলিশ। সেসব সরঞ্জামগুলো জব্দ করা হয়েছে। 

আগে অন্যান্য ক্লাবে র‌্যাবের অভিযানে ক্লাবগুলো ছিল পরিপাটি। পাশাপাশি ক্লাবের কর্মকর্তা, উপদেষ্টা, নিয়ন্ত্রকসহ মহারথিদের ছবি টানানো ছিল। কিন্তু রোববারের অভিযানে ক্লাবের ভেতরে বা প্রবেশদ্বারে অথবা দৃষ্টি নন্দন স্থানে কোনও ছবি দেখা যায় নি। তবে টানানো ছবি সরিয়ে ফেলার পর দেয়ালে খালি স্থানে পেরেকের ঠোকা ও ছবি ছিল যে তার আলামত পাওয়া গেছে। 

পুলিশ ধারণা, অভিযানের টের পেয়ে ক্লাব কর্তৃপক্ষ আগে থেকেই ছবি সরিয়ে ফেলেছেন। 

ডিএমপির মতিঝিল জোনের ডিসি আনোয়ার হোসেন দৈনিক জাগরণকে জানান, সম্প্রতি বিভিন্ন ক্লাবে অভিযানের পর বিভিন্ন ক্লাব থেকে জিনিসপত্র এ ক্লাবে এনে রাখা হয়েছে। এ ছাড়া এখানে ক্যাসিনো চালানোর অভিযোগও রয়েছে। সে হিসেবে ওই চারটি ক্লাব থেকে বিপুল পরিমাণ ক্যাসিনো সরঞ্জাম, মাদক ও ইলেক্টনিক্স সামগ্রী জব্দ করা হয়েছে। 

১৮ সেপ্টেম্বর (বুধবার) ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাব ও ওয়ান্ডারার্স ক্লাবে অভিযানের পরদিন শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কলাবাগান ক্রীড়াচক্র এবং ধানমণ্ডি ক্লাবে অভিযান চালায় র‌্যাব।

কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে অস্ত্র ও ইয়াবাসহ গ্রেফতার করা হয়েছে। এ সময় আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়। ফিরোজ রিমান্ডে রয়েছেন। অন্যদিকে ধানমণ্ডি ক্লাবের বার ২৪ ঘণ্টার জন্য সিলগালা করা হয়েছে। এদিন এজাক্স ক্লাব ও কারওয়ান বাজার মৎস্যজীবী ক্লাব ঘিরে রাখলেও ক্লাব দুটি বন্ধ থাকায় শেষ পর্যন্ত অভিযান স্থগিত রাখে র‌্যাব।

শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকালে রাজধানীর নিকেতনে যুবলীগ নেতা ঠিকাদার জি কে শামীমের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে অভিযানের শেষ পর্যায়ে র‌্যাবের আরেকটি দল কলাবাগান মাঠের পাশে কলাবাগান ক্রীড়াচক্র ঘিরে রাখে। এ সময় র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাল উপস্থিত
ছিলেন। এর আগেই কলাবাগান ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়। তিনি কৃষক লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য। তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

র‌্যাবের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট গাউসুল আজমের নেতৃত্বে ওইদিন সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে ক্রীড়াচক্রের সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজকে সঙ্গে নিয়ে এসে কলাবাগান ক্রীড়া চক্র ক্লাবে অভিযান শুরু করে র‌্যাব। অভিযান শেষে র‌্যাব-২-এর অধিনায়ক আশিক বিল্লাল জানান, অভিযানে বেশ কিছু জুয়া খেলার কয়েন, প্লেয়িং কার্ডের ৫৭২টি সেট, আটশ’ হলুদ রঙের ইয়াবা, একটি বিদেশি পিস্তল, তিনটি গুলি, একটি ম্যাগাজিন জব্দ করা হয়। ক্যাসিনোর সরঞ্জাম পাওয়া যায় নি। তবে ক্যাসিনোতে ব্যবহার করা হয় এমন কয়েন পাওয়া গেছে।

র‌্যাব কর্মকর্তা আশিক বিল্লাল বলেন, জব্দ হওয়া ইয়াবাগুলো প্রচলিত ইয়াবা থেকে আলাদা ধরনের। এর কোনও গন্ধ নেই। অস্ত্র ও ইয়াবাগুলো ক্লাবটির সভাপতি সফিকুল আলম ফিরোজের অফিস কক্ষ থেকে পাওয়া গেছে। এরপর তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে। ওই ক্লাব থেকে হারুন, আনোয়ার, হাফিজুল ও লিটন নামে আরও চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা ক্লাবের স্টাফ। তাদের বিরুদ্ধে ধানমণ্ডি থানায় অস্ত্র ও মাদক আইনসহ একাধিক মামলা করা হয়েছে। ধানমন্ডি ক্লাবের বার সিলগালা করা হয়েছে। 

র‌্যাব-২ এর এসপি শাহাবুদ্দীন জানান, এ ক্লাবের একটি বার রয়েছে। তবে ক্লাবটি বন্ধ থাকায় রেজিস্টারের সঙ্গে বারের অনুমোদন অনুযায়ী লিকারের স্টক মিলাতে পারি নি। তাই র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রে গাউসুল আজম ক্লাবটির বার ২৪ ঘণ্টার জন্য সিলগালা করে দিয়েছেন। 

তিনি জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ক্লাবের লোকজনের কাছ থেকে স্টকের হিসাব নেয়া হবে। রেজিস্টার অনুযায়ী লিকারের স্টকের অসঙ্গতি থাকলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। বারের লিকারের গোডাউন বন্ধ থাকায় আমরা ভেতরে যেতে পারি নি। ধানমন্ডি ক্লাবের সভাপতি অ্যাডভোকেট মোশাররফ হোসেন কাজল। তিনি দুদকের আইনজীবী।

এদিন রাত ৮টার দিকে এজাক্স ক্লাব ও কারওয়ান বাজার মৎস্যজীবী ক্লাব ঘিরে রাখেন র‌্যাব সদস্যরা। ক্লাব দুটির ভেতরে কেউ না থাকার কারণে প্রায় দুই ঘণ্টা পর অভিযান না চালিয়ে র‌্যাব সদস্যরা চলে যান সেখান থেকে।

এর আগে বুধবার বিকালে গুলশান ২ নম্বরের ৫৯ নম্বর সড়কে যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার বাসা এবং ফকিরাপুল ইয়াংমেন্স ক্লাবে একযোগে অভিযান চালায় র‌্যাব। গ্রেফতার করা হয় যুবলীগ নেতা খালেদকে।

ওয়ান্ডারার্স ক্লাব,  মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ক্রীড়া চক্র এবং বনানীর আহমেদ টাওয়ারে গড়ে তোলা ক্যাসিনোতেও অভিযান চালায় র‌্যাব। অভিযানে ক্লাবগুলো থেকে বিপুল পরিমাণ নগদ দেশি ও বিদেশি টাকা, অস্ত্র ও নেশাজাতীয় বিভিন্ন দ্রব্য জব্দ করা হয়। 

এইচএম/এসএমএম