• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৩:১৬ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : সেপ্টেম্বর ২৬, ২০১৯, ০৩:৪৭ পিএম

ফু-ওয়াং ক্লাবকে পুলিশ দিল দায়মুক্তি, র‌্যাব পেল অবৈধ মাদকের আড়ত

ফু-ওয়াং ক্লাবকে পুলিশ দিল দায়মুক্তি, র‌্যাব পেল অবৈধ মাদকের আড়ত
ফু-ওয়াং ক্লাব থেকে র‌্যাবের উদ্ধারকৃত মদ ও বিয়ার- ছবি : কাশেম হারুন

র‌্যাব বলেছে আছে, পুলিশ বলছে নাই। ক্যাসিনো নিয়ে চলছে লুকোচুরির খেলা। অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, ক্যাসিনো অপারেশন নিয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর এ দুই সংস্থার মধ্যে সাংঘর্ষিক কিছু হতে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দুই বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় করে অপারেশন চালালে বিষয়টি আরও ফলপ্রসূ হত।

রাজধানীর গুলশানের ফু-ওয়াং ক্লাবে দুদিন আগে সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকাল ৪টার অভিযান চালায় পুলিশ। এ সময় পুলিশের পক্ষ থেকে গণমাধ্যমকর্মীদের বলা হয়, ক্লাবে ক্যাসিনো বা মদ জাতীয় অবৈধ কিছু পাওয়া যায় নি। অথচ দুদিন পর সেখানে বুধবার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাতভর অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ দেশি-বিদেশি মদ উদ্ধার করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। র‌্যাবের দাবি, ফু-ওয়াং ক্লাবে বিপুল পরিমাণে বিদেশি মদ ও বিয়ারে মজুদ রয়েছে। 

ফু-ওয়াং ক্লাবই নয়, পুলিশ ইস্কাটনের ড্রাগন, বাংলামোটরের শ্যালে, মগবাজারের পিয়াসীতে অভিযান চালিয়েও কিছু পায় নি। পুলিশের পক্ষ থেকে এমনটাই দাবি করে বলা হয়েছে। অথচ ফু-ওয়াং ক্লাবে বিপুল পরিমাণ বিদেশি মদ উদ্ধারে বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে বিভিন্ন মহলে জনমনে নেতিবাচক প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। তা হলে কি- প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনাকে গুরুত্ব দিচ্ছে না পুলিশ। পুলিশ কি আগের ভূমিকাই পালন করছে।

ক্যাসিনো নিয়ে পুলিশের দুর্নাম রয়েছে। থানার পাশেই বছরের পর বছর ক্যাসিনো চললেও তাদের কারোরই চোখে পড়ে নি। এটাই কি বিশ্বাসযোগ্য-  এমনটাই বলেছেন অপরাধ বিশেষজ্ঞরা।

র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের সিনিয়র সহকারী পরিচালক এএসপি মিজানুর রহমান দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের কাছে তথ্য ছিল ক্লাবটিতে বিপুল পরিমাণের মাদকের মজুদ রয়েছে। সেই তথ্যের  ভিত্তিতে এ অভিযান চালানো হয়। অভিযানে বিপুল পরিমাণের মাদক-দ্রব্য জব্দ করা হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ছিল বিদেশি মদ আর বিয়ার। 

অপরাধ বিশেষজ্ঞ হাফিজুর রহমান কার্জন দৈনিক জাগরণকে বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যার যার অবস্থান থেকে স্বচ্ছতা রেখে কাজ করলে কখনও বিতর্কের সৃষ্টির সুযোগ নেই। যেহেতু এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কঠোর নির্দেশনা রয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে অবশ্যই ‘জিরো টলারেন্সে’ নীতি গ্রহণ করে এগিয়ে যেতে হবে। এর বিকল্প কিছু নেই।

ডিএমপির তেজগাঁও জোনের পুলিশ কর্মকর্তা আনিসুর রহমান দৈনিক জাগরণকে জানান, যারা টেন্ডারবাজ, জুয়া, ক্যাসিনো ও মদের ব্যবসা করে থাকে তারা সব সময় অপকৌশল প্রয়োগ করে থাকে। ফু-ওয়াং ক্লাবের বেলাতেও তাই হচ্ছে। পুলিশ যখন মতিঝিলের ক্লাবপাড়ায় ৪টি ক্লাবে অভিযান চালাচ্ছিল, তখন খবর পেয়ে ফু-ওয়াং ক্লাব থেকে ক্যাসিনো সামগ্রী ও মদ সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাই পুলিশ অভিযানে ক্লাবে কিছুই পায় নি। পরে আবারও সেই ব্যবসায় নেমে যায় তারা। 

মতিঝিল জোনের পুলিশ কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও ক্যাসিনো ও মদের বার চালোনো জন্য পুলিশ সহযোগিতা করছে এ অভিযোগ সঠিক নয়। বরং এ সকল কাজ ক্যাসিনো ব্যবসায়ীদের। পুলিশ সব সময় এ সকল অনৈতিক কাজের বিরোধিতা করে আসছে।

অভিযোগ রয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন অলি-গলিতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনোর রমরমা ব্যবসা চলছে। শুধু ক্লাবই নয়, ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় ফ্ল্যাটবাড়িতেও অবৈধ ক্যাসিনোতে চলছে জুয়ার ব্যবসা। এসব ক্যাসিনো চালাচ্ছেন যুবলীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। ঢাকায় ফ্ল্যাটবাড়িতে এমন ২১টি ক্যাসিনোর বিষয়ে তথ্য পেয়েছে র‌্যাব। এসব ক্যাসিনো চালানোর বিষয়ে স্থানীয় থানা পুলিশের অবগত ছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

জানা গেছে, ওইসব ক্যাসিনো পরিচালনার কারিগরি দিকগুলো দেখতেন শতাধিক নেপালি নাগরিক। তদন্ত-সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, এসব বিদেশি নাগরিক ভ্রমণ ভিসায় বাংলাদেশে এসে দিনের পর দিন জুয়া পরিচালনার কাজ করেছেন।

সিলগালা ফু-ওয়াং ক্লাব 
প্রায় ১২ ঘণ্টার অভিযান শেষে রাজধানীর তেজগাঁও গুলশান লিংক রোডে অবস্থতি ফু-ওয়াং ক্লাবটি সিলগালা করে দেয়া হয়। র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) অভিযান চালিয়ে ক্লাবটি থেকে নগদ ৭ লাখ টাকাসহ বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য জব্দ করা হয়। অভিযানে ৩ জনকে আটক করা হয়।

বৃহ্স্পতিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বেলা সাড়ে ১১টায় ব্রিফিংয়ে এসব তথ্য জানান র‌্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরচিালক লে. কর্নেল সারোয়ার বিন কাশেম।

তিনি জানান, রাত ১২টার দিকে শুরু হওয়া অভিযানে ফু-ওয়াং ক্লাব থেকে নগদ ৭ লাখ টাকা, ২ হাজার বোতল বিদেশি মদ, ১০ হাজার ক্যান হান্টার বিয়ার জব্দ করা হয়। এ সময় ক্লাবটির ৩ কর্মচারীকে আটক করা হয়।

তিনি জানান, জব্দ বিদেশি মদের বোতলের মধ্যে ৩ পার্সেন্ট অবৈধভাবে আমদানি করা হয়ছে। জব্দকৃত বিয়ারের ৫০ শতাংশও অননুমোদিত। ক্লাবটি তার সদস্যদের বাইরেও মদ ও মাদকদ্রব্য বিক্রি করতো, যা মাদক নিয়ন্ত্রণ আইনবিরোধী বলে জানান র‌্যাব কর্মকর্তা সারোয়ার বিন কাশেম।

বুধবার (২৫ সপ্টেম্বের) দিবাগত রাত ১২টার দিকে ক্লাবটিতে প্রবেশ করে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন-১ (র‌্যাব) এর সদস্যরা। অভিযানকালে উপস্থিত ছিলেন র‌্যাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আনিসুর রহমান ও নিজাম উদ্দিন।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) বিকালেও ক্লাবটিতে অভিযান চালিয়েছিল পুলিশ। চলমান ক্যাসিনো, জুয়া, হাউজি ও মাদকবিরোধী অভিযানের অংশ হিসেবে অভিজাত এলাকার এ ক্লাবটিতে অভিযান  চালানো হলেও অবৈধ কিছু পাওয়া যায় নি বলে তখন জানানো হয়েছিল।

এইচএম/একেএস/বিএস/এসএমএম

আরও পড়ুন