• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: অক্টোবর ১২, ২০১৯, ০৮:৪৫ এএম
সর্বশেষ আপডেট : অক্টোবর ১২, ২০১৯, ১০:৩৬ এএম

ক্যাসিনো খালেদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন ইকবাল 

ক্যাসিনো খালেদের সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন ইকবাল 
ক্যাসিনো খালেদের সহযোগী ইকবাল হোসেন জয় -ছবি : সংগৃহীত

ইকবাল হোসেন জয় যুবলীগ থেকে বহিষ্কৃত খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়ার অন্যতম সহযোগী হিসেবে কাজ করতেন । তার সব টাকা সংগ্রহ এবং ক্যাসিনো নজরদারিতে রাখতেন ইকবাল। চাটুকারিতা তার মূল পেশা হলেও সাম্প্রতিক সময়ে অবৈধ উপার্জনের অর্থ বৈধ করতে কয়েকটি ছবিতে প্রযোজকের খাতায় নাম লেখান তিনি। ঢাকাই ছবির নায়ক শাকিব খানের সঙ্গে তাকে বেশি সময় দেখা যায়।’

এর আগে, এমএলএম কোম্পানি এইম ওয়েরর কর্মকর্তা হয়ে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় ইকবাল ও তার সহযোগীরা। এরপরই ইকবাল গা ঢাকা দেয়। পরিস্থিতি অনুকূলে আসলে আবারো তিনি রাজধানীতে হাজির হন। 

এছাড়া ইকবাল বিভিন্ন নারীকে শাকিব খানের ছবিতে বিপরীতে কাজ করার সুযোগ দেয়ার আশ্বাস দিয়ে পর্দার অন্তরালে তাদের নানা অপকর্মে ব্যবহার করতেন। সমাজের প্রভাবশালী লোকদের কাছে ওইসব নায়িকাদের পাঠিয়ে তাদের ব্ল্যাকমেইল করতেন। তিনি নিজেই বিয়ে করেছেন তিনটি। একজন উঠতি মডেলকে বিয়ে করে তার সঙ্গে বিবাহ বিচ্ছেদ হলেও এখনও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে তাকে ওই মডেলের সঙ্গে দেখা যায়। ওই মডেল তার বিরুদ্ধে তিন চারটি মামলাও করেছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীতে ইকবালের একাধিক ফ্ল্যাট এবং বিভিন্ন স্থানে দোকান রয়েছে। খালেদ ভূঁইয়ার প্রভাব খাটিয়ে অথবা ফাঁসিয়ে ভয় দেখিয়ে এসব হাতিয়ে নিয়েছে ইকবাল। নিজের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা বড় ধরণের কোনো দৃশ্যমান ব্যবসা না থাকলেও ঢাকাই সিনেমার প্রযোজক বনে গেলেন হঠাৎ করে। তিনি গণমাধ্যমের বিভিন্ন প্রভাবশালী ব্যক্তি থেকে শুরু করে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ব্যক্তিদের সঙ্গে ছবি তুলে নিজেকে তাদের ঘনিষ্ঠ প্রমাণ করার চেষ্টা করেন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান,  ইকবাল হোসেন জয়ের সঙ্গে রাজধানীর গুলশানের বিভিন্ন হোটেলে বিভিন্ন সময়ে বহু উঠতি মডেল ও নায়িকার আনাগোনা দেখা যায়। যার সবকিছুই তিনি প্রভাবশালী বিভিন্নজনের মনোরঞ্জনের জন্য সরবরাহ করেন। পরে ওইসব লোকদের ব্ল্যাকমেইলিং করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। বেশ কয়েক মাস আগে রাজধানীর একটি তারকা হোটেলে এক মডেল ও অভিনেত্রী তাকে জুতা ছুড়ে মারার ঘটনা ঘটেছিল বলে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণমাধ্যমের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি জানান, পেশাগত কারণে তার সঙ্গে ইকবাল জয়ের যোগাযোগ থাকলেও তিনি তার চরিত্র সম্পর্কে অবগত। বিভিন্ন সময় সুন্দরী মডেলদের নিয়ে এসে তাকে ফাঁসানোর চেষ্টা করে ইকবাল। তবে তার ফাঁদে পা দেননি তিনি।

ইকবালের বিভিন্ন আড্ডায় একাধিক প্রভাবশালী সরকারি কর্মকর্তাসহ অনেককেই স্বস্ত্রীক উপস্থিত থাকতে দেখা গেছে। এ নিয়েও মিডিয়া পাড়ায় নানা গুঞ্জন রয়েছে। তবে ২০১৭ সালে তাকে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতি থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়। পরে ছাত্রলীগের একজন সাবেক কেন্দ্রীয় নেতার সহযোগিতায় আবার এফডিসিতে প্রবেশের সুযোগ পায় ইকবাল। অপেশাদার একজন প্রযোজকের কারণে চলচ্চিত্র প্রযোজক সমিতির পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলেও জানান অনেকে।

তবে খালিদ মাহমুদ ভূঁইয়া মতো প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় থাকায় তার বিরুদ্ধে এতদিন কেউ মুখ খুলতে সাহস পায়নি। নিজের চালচলনে আভিজাত্যের কোনো ছাপ না থাকলেও সব সময় বিদেশ ভ্রমণ আর তারকা হোটেলে ঘুরে বেড়াতে দেখা যায় ইকবালকে। খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া গ্রেফতারের পর ইকবাল ১২ থেকে ১৩ দিন তার দ্বিতীয় স্ত্রী যাকে ডিভোর্স দিয়েছিলেন তার বাসায় আত্মগোপনে ছিলেন বলে জানা গেছে। সংকট কিছুটা স্বাভাবিক হলে আবার বেরিয়ে আসেন তিনি।

চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টদের মতে, ইকবাল হোসেনকে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নিলে খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া অপকর্মের বহু তথ্য উন্মোচিত হবে। চলচ্চিত্র শিল্পকে জিম্মি করে তা ধ্বংসের পথে আনার পেছনে খালেদ ভূঁইয়া এবং ইকবাল-এর কুশীলব রয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার সঙ্গে ইকবাল হোসেন জয়ের যোগসাজশ রয়েছে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, হাজারো মানুষের সঙ্গেই খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়ার যোগাযোগ ছিল, তেমনি আমার সঙ্গে ছিল। তবে শাকিব অপুর সংসার ভাঙার পিছনে কোনো ইন্ধন ছিল না বলে দাবি করে ইকবাল হোসেন জয় বলেন, কারো সংসার ভাঙা আর মসজিদ ভাঙা সমান কথা। এরপরই কথা না বাড়িয়ে তিনি একজন অপরাধ বিষয়ক একজন প্রভাবশালী সাংবাদিককে নিজের আত্নীয় পরিচয় দিয়ে ফোনটি তাকে ধরিয়ে দেন


এইচএম/একেএস

আরও পড়ুন