• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ১, ২০১৯, ০৪:৩০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ১, ২০১৯, ০৪:৩২ পিএম

নতুন সড়ক আইন

কেউ জানেন তবে পুরোপুরি নয়, আবার কেউ জানেনই না

কেউ জানেন তবে পুরোপুরি নয়, আবার কেউ জানেনই না
শৃঙ্খলা আনতে চালু হয়েছে নতুন সড়ক আইন

 

স র জ মি ন

যেমন গেলো নতুন আইন চালুর প্রথম দিন

.........

চালকের মৃত্যুদণ্ড বিধান রেখে শুক্রবার (১ নভেম্বর) থেকে কার্যকর শুরু হয়েছে নতুন সড়ক পরিবহন আইন। বেশ কিছু শক্ত নীতিমালা থাকায় এই আইন কার্যকর করতে শুরুতে কিছুটা সময় লাগছে। আইন অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি প্রয়োগের ক্ষেত্রে কিছু কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তাছাড়া নতুন সড়ক আইন প্রয়োগ করছেন না ট্রাফিক সার্জেন্টরা। রুটিন মাফিক রাজধানীর সড়কগুলোতে তৎপর রয়েছেন ট্রাফিক পুলিশ ও সার্জেন্ট।

সার্জেন্টদের মতে, সড়কের নতুন আইন সম্পর্কে চালকদের সিংগভাগ কিছুই জানে না। এরফলে সড়কের নতুন আইন রাস্তায় প্রয়োগের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হচ্ছে বলে জানান একাধিক পুলিশ সার্জেন্ট।

শুক্রবার (১ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় হানিফ ফ্লাইওভারের পশ্চিম মাথায় চানখারপুল মোড়। সেই সিগনালে গিয়ে দেখা যায়, নতুন আইন মাথায় রেখে সড়ক ও পরিবহন তদারকি করছেন ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তারা। সদ্য কার্যকর হওয়া এই আইনের প্রভাব ও প্রয়োগ কেমন হচ্ছে জানতে চাইলে সার্জেন্ট বিপ্লব দৈনিক জাগরণকে জানান, সহসাই এ আইন প্রয়োগ করা চলবে না। হাই কমান্ড থেকে আমাদের কাছে কাগজপত্র আসে নি। ট্রাফিক অ্যাপসও আপডেট করা হয় নি। তাছাড়া চালকদের বেশিরভাগই নতুন আইন সম্পর্কে জানে না। তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে হবে। হাব-ভাব বুঝাতে হবে।

তিনি বলেন, আজ আমরা সড়কে পথচারীদের মোটিভেট করার চেষ্টা করতেছি নতুন আইন সম্পর্কে। বেশিরভাগ পথচারী এই আইন সম্পর্কে পুরোপুরি বা একেবারেই জানেন না। যারা জেনেছেন বিভিন্ন মাধ্যমে তারা মানতে চাচ্ছেন না। একদিনেই সব হয়ে যাবে ব্যাপারটা এমন নয়। তবে ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। জনগণও এসব আইন মানতে শুরু করবেন।

স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ী আনোয়ার হোসেন আনু জানান, নতুন সড়ক ও পরিবহন আইন সম্পর্কে তার ধারণা আছে তবে সামান্য। হেলমেট ছাড়া বাইক চালালে ১০ হাজার টাকা এবং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা হবে। কয়জন চালক এ তথ্য জানে। 

ঢাকা মেডিকেলের অ্যাম্বুলেন্স চালক আলী হোসেন ঢাবির ড. শহীদুল্লাহ হলের সামনে জ্যামে ড্রাইভিং সিটে বসে অনবরত মোবাইলে কথা বলছিলেন। এ সময় ট্রাফিক সার্জেন্ট বিপুল আইপি ক্যামেরা দিয়ে তার এই ছবি তুলেন এবং আটক করেন। গাড়ি চালানো অবস্থায় মোবাইল ফোনে কথা বলা নিষেধ, এই আইনটি জানেন কি- না এমন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, আইন আছে, কিন্তু ভাই মানে কয় জনে? জরুরি ফোন ছিল তাই কথা বলছিলাম। এ সময় পুরনো আইনে একটি মামলা দেয়া হয় তার লাইসেন্স এর বিপরীতে।

ফুলবাড়িয়া, ধামরাই ও সাভার এবং মানিকগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডের একাধিক বাস চালক জানায়, নতুন আইন সম্পর্কে তারা খুব একটা জানেন না। যেটুকু জানেন তা লোক মুখে শুনেছেন বা টিভির খবর থেকে জেনেছেন এতটুকুই।

ফুলবাড়িয়ায় টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেসের চালক শহিদুল্লাহ জানান, তিনি শুনেছেন এক্সিডেন্টে মানুষ মারা গেলে ড্রাইভারের ফাঁসি হবে। এমন ধারায় সড়কের নতুন আইন হয়েছে। লাইসেন্স না থাকলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এর বেশি কিছু জানি না। এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে শহীদ জানান, এ আইনটা অনেক কঠিন হয়েছে। ভবিষ্যতে ড্রাইভাররা গাড়ি চালানো ছেড়ে দিতে পারে।

ঢাবির ক্যাম্পাসের উদয়ন বিদ্যালয়ের সামনে মেয়েকে নিয়ে বাসায় যাচ্ছিলেন ঠিকাদার মোখলেসুর রহমান মুকুল, তিনি নতুন সড়ক ও পরিবহন আইনকে স্বাগত জানান। নতুন সড়ক আইন সর্ম্পকে তিনি বলেন, আমি খুব একটা জানি না ভাই। আমি মটরবাইক চালাই। যতটুকু জানি লাইসেন্স না থাকলে ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হবে। এর বেশি আর কিছু জানি না।

সড়ক পরিবহনে নতুন ও কার্যকর একটি আইনের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের মুখে সরকার ২০১৮ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সড়ক পরিবহন আইন, ২০১৮ আইন পাস করে। আইনটির ধারা ১ এর উপ-ধারা (২) এ দেয়া ক্ষমতাবলে সরকার ১ নভেম্বর (শুক্রবার) তারিখকে আইন কার্যকর হওয়ার তারিখ নির্ধারণ করে। এ আইনে সড়কে যে কোনও আইন লঙ্ঘন করলেই এখন মোটা অঙ্কের জরিমানা, কারাদণ্ড এমনকি উভয় দণ্ড হবে। জরিমানা হতে পারে ৫ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। আর কারাদণ্ড ১ মাস থেকে ৫ বছর। নতুন আইনের সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে দুর্ঘটনায় প্রাণহানির দায়ে শাস্তির বিধান। দুর্ঘটনার জন্য দণ্ডবিধি অনুযায়ী তিন রকমের বিধান রয়েছে। নরহত্যা হলে ৩০২ ধারা অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের সাজা হবে। খুন না হলে ৩০৪ ধারা অনুযায়ী যাবজ্জীবন। বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালিয়ে মৃত্যু ঘটালে ৩০৪ (বি) ধারা অনুযায়ী ৩ বছরের কারাদণ্ড হবে।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন