• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৮:২৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ২, ২০১৯, ০৯:৩৭ এএম

ধানমন্ডিতে জোড়া খুন, সন্দেহের তীর নতুন গৃহকর্মীর দিকে  

ধানমন্ডিতে জোড়া খুন, সন্দেহের তীর নতুন গৃহকর্মীর দিকে  
ধানমন্ডিতে জোড়া খুনের ঘটনায় মরদেহ উদ্ধারে পুলিশ সদস্যরা - ছবি: জাগরণ

ধানমন্ডিতে গৃহকর্ত্রীসহ জোড়া খুনের ঘটনায় ঘাতকদের গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। খুনের মোটিভ বের করতে এবং ঘাতক শনাক্তের স্বার্থে নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ের জামাই শিল্পপতি মনির উদ্দিন তারিমের পিএস তথা বডিগার্ড বাচ্চু মিয়া ও ভবনের ইলেক্ট্রশিয়ান বেলায়েত হোসেনকে আটক করেছে পুলিশ। 

সংশ্লিষ্ট দুজনকে ধানমন্ডি থানায় জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। এছাড়া সদ্য নিয়োগপ্রাপ্ত পলাতক গৃহকর্মীকে পুলিশ খুঁজছে।
 
শুক্রবার (১ নভেম্বর) সন্ধ্যায় জোড়া খুনের খবর পেয়ে পুলিশ গিয়ে ওই বাসার সিসিটিভি ক্যামেরা ফুটেজ সংগ্রহ করে। ওই ফুটেজ দেখে এক নারীকে সন্দেহ করা হচ্ছে। পরে স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে পুলিশ জানতে পারেন, ওই নারী নিহতের বাসায় নতুন গৃহকর্মী হিসেবে নিযুক্ত হয়েছিল। পুলিশ তাকে শনাক্ত ও গ্রেফতারের চেষ্টা করছে।

পুলিশের ধানমন্ডি জোনের সহকারী কমিশনার হাসিনুজ্জামান বলেন, আমরা বাসার সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পেয়েছি। বাসাটিতে যে নতুন গৃহকর্মী এসেছিল, তাকে আমরা সন্দেহ করছি। তাকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে এখনও তার পরিচয় জানা যায়নি। যে ব্যক্তি তাকে এই বাসায় নিয়ে এসেছিল, তার মাধ্যমে ওই নতুন গৃহকর্মীর তথ্য এবং সিসি ক্যামেরার ফুটেজ থেকে ছবি পেয়েছি।

শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ধানমন্ডির একটি বাসা থেকে গৃহকর্ত্রী আফরোজা বেগম (৬৫) ও গৃহকর্মী দিতির (১৬) গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ। নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ে জামাই শিল্পপতি মনির উদ্দিন তারিম বলেন, বাসা থেকে মোবাইল ও স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে। পুলিশ কর্মকর্তারা বলছেন, বাসা থেকে টাকা-পয়সা ও মূল্যবান জিনিসপত্র হাতিয়ে নেওয়ার উদ্দেশ্যে তাদের হত্যা করা হতে পারে। তাদের ফ্ল্যাটের আলমারি খোলা ও এলোমেলো ছিল।

লিফটের গোড়ায় খুনির পায়ের রক্তের চাপ- ছবি: জাগরণ 

বাড়িটির নিরাপত্তাকর্মী নুরুজ্জামান বলেন, এই বাড়ির চারতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন আফরোজা ও গৃহকর্মী দিতি। উপরে পাঁচতলার ফ্ল্যাটে থাকতেন তার মেয়ে দিল ছোড়া সুলতানা ও জামাই মনির উদ্দিন তারিম। শুক্রবার বিকাল ৩টায় তারিমের পিএস বাচ্চু এক নারীকে নিয়ে বাসায় আসেন। ওই নারী বাসায় গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করার কথা বলে বাচ্চুর সঙ্গে ওপরে যায়। এরপর ৬টার দিকে বাচ্চু একবার লুঙ্গি পরে নিচে নামে। এর কিছুক্ষণ পর ওই নারী চলে যায়। তারপর বাচ্চুও প্যান্ট-শার্ট পরে চলে যায়। তারপর ওপর থেকে আমাকে একটা ছেলে ফোন দিয়ে জানায় খালাম্মা মারা গেছে। এরপর লোকজন আসেন।’ এ ঘটনায় সন্দেহভাজন হিসেবে বাড়িটির ইলেক্ট্রিশিয়ান বেলায়েত ও আফরোজার জামাইয়ের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) বাচ্চুকে আটক করেছে পুলিশ। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

ধানমন্ডি থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) মো. এনামুল হক জানান, রুম ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে দুই রুমে দুইজনকে গলাকাটা অবস্থায় দেখা যায়। পুলিশের ক্রাইম সিন ও সিআইডি ঘটনাস্থলে এসেছে। এ ঘটনায় বাচ্চু নামে ওই বাড়ির এক নিরাপত্তাকর্মী ও বেলায়েত নামে এক ইলেকট্রিশিয়ানকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে।

তিনি আরো জানান, শুক্রবার বাড়িটির ওই ফ্ল্যাটে ২১ বছর বয়সী নতুন একজন গৃহকর্মী নিয়োগ দেওয়া হয়। তবে হত্যাকাণ্ডের ঘটনার পর নতুন রাখা ওই গৃহকর্মীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। সে এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে।

আফরোজার স্বজনরা জানান, আফরোজা বেগমের ওপরের ফ্লোরে থাকেন তার মেয়ে দিলরুবা। বিকেলে মা ফোন না ধরায় তিনি তার গৃহকর্মী রিয়াজকে নিচে গিয়ে দেখে আসতে বলেন।
রিয়াজ গিয়ে দেখেন, আফরোজা বেগম ফ্লোরে রক্ত মাখা অবস্থায় পড়ে আছেন। আমি দৌড়ে ওপরে গিয়ে বিষয়টি জানাই। তখন বাসার অপর গৃহকর্মী আপেল ও দিলরুবা ম্যাডাম চারতলায় আসেন।

এ বিষয়ে নিহত আফরোজা বেগমের মেয়ে জামাতা শিল্পপতি মনির উদ্দিন তারিম সাংবাদিকদের বলেন, হত্যাকাণ্ডের পর ফ্ল্যাটটি থেকে মোবাইল ও কিছু স্বর্ণালংকার খোয়া গেছে।

সুরতহালে দেখা গেছে, ঘটনার পর ঘাতক ফ্ল্যাট থেকে নিজেই রক্ত মাখা পায়ে নিচে নেমে যায়। পরে একটি বাথরুমে পা ধুয়ে বাড়ির দারোয়ানের চোখ ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর বাড়ির সিসিটিভি পর্যালোচনা করে তাকে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। 

এইচএম/বিএস 
 

আরও পড়ুন