• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : নভেম্বর ৪, ২০১৯, ০৮:৪৫ পিএম

ঢাকা-চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচন

ভোটে অংশ নেবে বিএনপি, সতর্কতার সঙ্গে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি

ভোটে অংশ নেবে বিএনপি, সতর্কতার সঙ্গে নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি

২০২০ সালের শুরুতেই অর্থাৎ জানুয়ারিতে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচন করতে চায় নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেই লক্ষ্যে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন। এবার তিন সিটিতেই ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনে (ইভিএম) ভোটগ্রহণ করার পরিকল্পনা রয়েছে ইসির। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগে থেকেই এ নির্বাচনকে ঘিরে প্রস্তুতি নিচ্ছে। নির্বাচনে অংশ নেবে বিএনপিও। দলটির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এমনটাই ধারণা পাওয়া গেছে। 

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা সবসময় নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। নির্বাচনের ব্যাপারে বিএনপিও ইতিবাচক। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তো ভোটারদের মধ্যে আস্থা তৈরি করতে পারে না। এটাই বড় সমস্যা। এর আগের নির্বাচনগুলোতে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। এখান থেকে উত্তরণের উপায় তাদের (ইসি) বের করতে হবে।

সিটি নির্বাচনে বিএনপি অংশ নিচ্ছে নিশ্চিত হয়েই নেতাকর্মীদের ব্যাপক প্রস্তুতি নিয়ে নির্বাচনি মাঠে নামার নির্দেশ দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এরইমধ্যে দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, সামনের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অবশ্যই জিততে হবে। গতবার প্রতিপক্ষ ছিল না বলে আপনারা বিষয়টি বুঝতে পারেননি। ভেবেছেন জেতাটা সহজ হয়ে গেছে। এবারকার নির্বাচন খুবই চ্যালেঞ্জিং হবে। প্রতিপক্ষ আটঘাট বেঁধে নামবে।

ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনে সর্বশেষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৫ সালের ২৮ এপ্রিল। এই তিন সিটিরই জনপ্রতিনিধিদের মেয়াদ শেষ হওয়ার পথে। আইনানুসারে ঢাকার দুই সিটিতে ভোটের আয়োজন করতে হবে এ বছরের নভেম্বর থেকে আগামী বছরের মে মাসের মধ্যে। আর চট্টগ্রাম সিটিতে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে আগস্টের মধ্যে ভোট হতে হবে। এই তিন সিটি নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতি হিসেবে ভোটার তালিকা হালনাগাদ, নির্বাচনি সামগ্রীর পরিমাণ নির্ধারণসহ সীমানা জটিলতা সম্পর্কে তথ্য নেয়াসহ আনুষঙ্গিক কাজ এরই মধ্যে হাত দিয়েছে ইসি।

নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম বলেন, আগে থেকে প্রস্তুতি না নেয়া হলে নির্বাচন তফসিল ঘোষণার পর যে সময় থাকে তার মধ্যে যাবতীয় কর্মাদি  সমাধান করা সম্ভব হয় না।  তিনি জানান, এসব প্রস্তুতি শেষ করেই ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণ নিয়ে আলোচনা শুরু হবে।

রফিকুল বলেন, ১৮০ দিনের মধ্যে যাতে নির্বাচন করা যায় তার জন্য কমিশন বসে একটা সিদ্ধান্ত নেবে। তারিখ নির্ধারণ করে আমরা নির্বাচন করতে পারি। তিন সিটিতেই ইভিএমের মাধ্যমে ভোটগ্রহণের কথা ভাবা হচ্ছে।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর থেকে এ যাবৎ অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকারের প্রায় সবগুলো নির্বাচনই বর্জন করে বিএনপি। তবে তিন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের সিদ্ধান্ত রয়েছে দলটির। নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি ভেতরে ভেতরে ব্যাপক প্রস্তুতিও নিচ্ছে। কাকে কাকে প্রার্থী করা হতে পারে তা নিয়েও দলের দায়িত্বশীল নেতারা বৈঠক করছেন। প্রার্থী বাছাইয়ের জরিপ কার্যক্রমও হাতে নেয়া হয়েছে বলে দলের সংশ্লিষ্ট সূত্র দাবি করছে।

সিটি নির্বাচন নিয়ে নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে বিএনপির ভাবনা জানতে চাইলে দলটির নেতারা বলছেন, যেকোনও সময় যেকোনও নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি বিএনপির রয়েছে। রয়েছে নির্বাচনে অংশ নেয়ার মতো যোগ্যতাসম্পন্ন বহু প্রার্থী। তবে ইসির প্রস্তুতির সঙ্গে নির্বাচনের পরিবেশও যাতে সুন্দর থাকে সেটাও লক্ষ রাখতে হবে। কারণ অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। আর নির্বাচন যখনই আয়োজন হোক প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপির কোনও সমস্যায় পড়তে হবে না।

দলীয় সূত্র জানায়, নিজেদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে কথাবার্তা হলেও প্রার্থী চূড়ান্ত করার বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত নেয়নি বিএনপি। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের প্রার্থী দেখেই সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। সিটি নির্বাচনে বিএনপির একাধিক নেতা প্রার্থী হতে আগ্রহী হলেও মনোনয়নের ক্ষেত্রে তাদের গ্রহণযোগ্যতা এবং মাঠের রাজনীতিতে ভূমিকা দেখে প্রার্থী চূড়ান্ত করবে বিএনপি।

আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী দৈনিক জাগরণকে বলেন, সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে এখন পর্যন্ত দলীয় সিদ্ধান্ত ইতিবাচক। এ নিয়ে আরও আলোচনা হবে। দলের অনেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী। তবে দল কাকে প্রার্থী হিসেবে বেছে নেবে সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হতে আরও সময় লাগবে।

জানা গেছে, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলনের অংশ হিসেবে ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তুতি গ্রহণ করতে দলের নেতাদের নির্দেশনা দিয়েছেন দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। 

শনিবার (২ নভেম্বর) সন্ধ্যায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে আলোচনা হয়। তারেক রহমান লন্ডন থেকে স্কাইপির মাধ্যমে সরাসরি সংযুক্ত থেকে এ বৈঠকে অংশ নেন। এরপর থেকেই দলের সিনিয়র নেতারা প্রার্থী নির্ধারণের কাজে হাত দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

মহানগরের একাধিক নেতা জানান, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি নির্বাচন সামনে রেখে এরইমধ্যে ওয়ার্ড পর্যায়ে প্রস্তুতি সভা শুরু করে দিয়েছেন। তারেক রহমানও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট নেতাকর্মীকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। কাউন্সিলর পর্যায়ে কে কে প্রার্থী হবে তা-ও প্রাথমিকভাবে ঠিক করে রেখেছে বিএনপি। তবে মামলা-হয়রানির ভয়ে কৌশলগত কারণে এখনই প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে না দলটি। নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই চূড়ান্ত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করবে দলটি।

বিএনপি সূত্র জানায়, পরবর্তী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি এখন থেকে প্রতিটি স্থানীয় সরকার নির্বাচনকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। বগুড়া-৬ আসনের উপ-নির্বাচনে বিজয়ের পর থেকে দলের নেতাকর্মীর মধ্যে কিছুটা মনোবল চাঙ্গা হয়েছে। তাই নেতা-কর্মীদের নির্বাচনমুখী করতেই তারা সিটি নির্বাচনে অংশ নেয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

দলের একাধিক শীর্ষ নেতা জানান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযানে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ধরা পড়া এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগ ও সরকারি দল সমর্থক ভিসিদের অপকর্ম ফাঁস হওয়ার বিষয়টিকে পুঁজি করে বিএনপি এখন বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশার মানুষের সঙ্গে মতবিনিময় করছে। এ কৌশল কাজে লাগিয়ে মোটামুটি সুষ্ঠু পরিবেশে নির্বাচন করা গেলে বিএনপি সফল হতে পারবে বলে মনে করেন নেতাকর্মীরা।

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান দৈনিক জাগরণকে বলেন, বিএনপি সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে, কারণ বিএনপি একটি নির্বাচনমুখী দল। সব নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত। তবে নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ না থাকায় এ সরকারের আমলে সব নির্বাচনই প্রশ্নের মুখে পড়ছে। আমরা চাই অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর তা হলে সব নির্বাচনেই বিএনপি প্রার্থীরা জয়ী হবে।

তিনি বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার ও তার আজ্ঞাবহ কমিশনের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না বলে আমরা ধারণা করি। জনগণেরও একই ধারণা। গত জাতীয় নির্বাচনের আগের রাতেই তারা ভোটের নামে যে প্রহসন করেছে তাতে তাদের অধীনে কোনও নির্বাচন সুষ্ঠু হবে বলে আমি মনে করি না। তারপরও আমরা নির্বাচনের পক্ষে। সরকার ও ইসির উচিত নির্বাচনের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা। নির্বাচনকে সুষ্ঠু করতে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যাতে ভোটাররা নির্বিঘ্নে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।

জানা যায়, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে অংশ নিতে বিএনপির বেশ কয়েকজন নেতা আগ্রহী। তবে গুরুত্বপূর্ণ এ দুই সিটিতে দলের প্রার্থী হিসেবে এবার তারুণ্যকে প্রাধান্য দেবে দলটি। সেক্ষেত্রে ঢাকা উত্তর সিটিতে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টুর ছেলে ও দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য তাবিথ আউয়াল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জন্য অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইঞ্জিনিয়ার ইশরাক হোসেন মনোনয়ন পেতে পারেন। এর বাইরেও আরও কয়েক নেতা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে বিবেচনায় আছেন।

গত নির্বাচনে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে তাবিথ আউয়াল, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস এবং চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র মঞ্জুর আলম মেয়র পদে অংশ নেন। ভোটগ্রহণের দিন দুপুরের আগেই বিএনপি আনুষ্ঠানিকভাবে নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া সত্ত্বেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক ভোট পায় বিএনপির প্রার্থীরা।

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল দৈনিক জাগরণকে বলেন, সম্ভাব্য প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করছেন। বিএনপিও নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি বলেন, শঙ্কার জায়গা হলো নির্বাচনের দিনক্ষণ যত কাছে আসবে তখন কী অবস্থা হয় সেটা। আশা করি, প্রস্তুতি যাই হোক, শেষ পর্যন্ত নির্বাচনের পরিবেশ যেন ভোটের পক্ষেই থাকে।

টিএস/ এসএমএম/ এফসি

আরও পড়ুন