জামালপুরে এক গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণ, ধর্ষণের পর গাছের সঙ্গে হাত-পা বেঁধে পাশবিক নির্যাতন ও গৃহবধূর স্বামী খলিলুর রহমানকে (৩৫) হত্যার পর গলায় রশি পেচিয়ে বাড়ির পাশে কাঁঠাল গাছে ঝুলিয়ে রাখে ধর্ষকরা। জামালপুর সদর উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণ পুর গ্রামে শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটেছে। পরদিন শনিবার সকালে ধর্ষিতার স্বামীর লাশ উদ্ধার ও ধর্ষক ছানোয়ারের বাড়ি থেকে গাছে বেঁধে রাখা অবস্থায় ধর্ষিতাকে উদ্ধার করে সদর থানা পুলিশ।
এদিকে, স্বামীর ময়নাতদন্তের পর লাশের সঙ্গে ধর্ষিতাকে সাদা কাগজে স্বাক্ষর নিয়ে বাড়ি পাঠিয়ে দেয় পুলিশ। পুলিশের কাছে ঘটনা খুলে বললেও ধর্ষণ ও হত্যা মামলা নেয়নি। প্রভাবশালী চেয়ারম্যান ও পুলিশ হত্যার ঘটনা আত্মহত্যার প্রচার চালিয়ে অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করে ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালায় বলে অভিযোগ করেছে ধর্ষিতা ও তার পরিবার।
স্থানীয় প্রভাবশালী চেয়ারম্যান আজিজুল হক ও ধর্ষকরা ধর্ষিতার পরিবারকে অবরুদ্ধ করে রাখে। সোমবার রাতে পালিয়ে এসে জামালপুর প্রেসক্লাবে আশ্রয় নেয় ধর্ষিতা ও তার পরিবার। সোমবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে নির্যাতনের শিকার ওই গৃহবধূকে জামালপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
কর্তব্যরত ডাক্তার হাসানুল বারী শিশির জানায়, প্রাথমিক ধারণা করা হচ্ছে গৃহবধূকে দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছে। মেডিকেল পরীক্ষার পর রিপোর্ট আসলে নিশ্চিত করে বলা যাবে।
দায়িত্বরত এসআই গুলজার হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভিকটিম ধর্ষণ ও নির্যাতনের ঘটনা আমাকে জানিয়েছে। আমি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। তারা ব্যবস্থা না নিলে আমার কি করার আছে।
ঘটনার পরদিন সকালে জামালপুর সদর থানার ওসি (তদন্ত) রাশেদুল হাসানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, দুই বউয়ের যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে খলিলুর রহমান আত্মহত্যা করেছে। সোমবার রাতে বক্তব্যটি নিয়ে ফের প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাৎক্ষণিক বক্তব্যটি দিয়েছিলাম।
ধর্ষণের শিকার গৃহবধূ হাসপাতালের বেডে কান্নারত কণ্ঠে বলেন, শুক্রবার রাত ৮টার দিকে ঘর থেকে বাইরে বের হলে প্রতিবেশী ছানোয়ার, শাওন ও রফিজ উদ্দিন তাকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে যায়। পরে তাকে ছানোয়ারের বাড়ির পেছনে একটি জঙ্গলে নিয়ে ধর্ষণ এবং গাছের সঙ্গে বেঁধে মারধর করে। এরপর ওই গৃহবধূকে ছানোয়ারের বাড়িতে আটকে রেখে তার স্বামীকে (খলিলুর রহমান) ডেকে এনে মারধর করে হত্যার পর তার লাশ বাড়ির পাশে একটি গাছে ঝুলিয়ে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়ার চেষ্টা করে। পরদিন সকালে পুলিশ গিয়ে তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য জামালপুর জেনারেল হাসপাতাল মর্গে পাঠায় এবং একটি অপমৃত্যু মামলা করে।
গৃহবধূকে ধর্ষণ ও গাছের সঙ্গে বেঁধে পাশবিক নির্যাতনের ঘটনা ফাঁস হয়ে তোলপাড় শুরু হলে সোমবার রাত সাড়ে ১১টায় মামলা নেয় পুলিশ। গৃহবধূ নিজে বাদী হয়ে জামালপুর সদর থানায় মামলা দায়ের করেছে। মামলা দায়েরের পর রাতেই সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সালেমুজ্জামানের নেতৃত্বে অভিযান চালিয়ে ধর্ষক শাউনকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান জানান, আমার কাছে অভিযোগ নিয়ে কেউ আসেনি। পুলিশের দায়িত্ব অবহেলার অভিযোগ সঠিক নয়। এ ব্যাপারে অভিযুক্ত ৩ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের হয়েছে। এক জনকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।
কেএসটি