• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০৬:৫৩ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ১, ২০১৯, ০৬:৫৩ পিএম

বিশিষ্টজনদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল ৪ জঙ্গির : র‌্যাব

বিশিষ্টজনদের হত্যার পরিকল্পনা ছিল ৪ জঙ্গির : র‌্যাব
আটক ৪ জঙ্গি -ছবি : জাগরণ

ইসলামি খেলাফত আন্দোলনের পরিকল্পনা নিয়ে বিশিষ্টজনদের হত্যাসহ সংশ্লিষ্টদের শাস্তির মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছিল এই চার জঙ্গি।

রোববার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে গণমাধ্যমকর্মীদের এ রকম তথ্য দিয়েছেন র‌্যাব-৪ এর সহকারী পরিচালক (মিডিয়া কো-অর্ডিনেটর) সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সাজেদুল ইসলাম সজল।

তিনি জানান, রাজধানীর খিলক্ষেতের নিকুঞ্জ এলাকা থেকে নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের ৪ সক্রিয় সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃতরা গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার বিপক্ষে, তাদের মতে এই ব্যবস্থা তাগুতি বা বাতিল, তারা কথিত ইসলামি শাসন ব্যবস্থা কায়েম করতে চায়। কথিত ইসলামি খেলাফত প্রতিষ্ঠায় যে বিশিষ্টজনরা প্রতিহত বা বিরোধ সৃষ্টি করছে। তাদের হত্যাসহ চূড়ান্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতো তারা।

গ্রেফতারকৃত ৪ জঙ্গি হলো- মাসুম মিয়া ওরফে মাসুম (৩০), আবু বকর সিদ্দিক ওরফে এমরান (১৯), রাকিবুল হাসান ওরফে সিয়াম (১৮) ও আবদুল্লাহ আল রোমান ওরফে রোমান খান (২২)।

সাজেদুল সজল জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা নিষিদ্ধঘোষিত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিম-এর সক্রিয় সদস্য বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। তাদের কাছ হতে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ধরনের উগ্রবাদ সম্পর্কিত বই, লিফলেটসহ উগ্রবাদী ডিজিটাল কনটেন্ট ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। দেশের প্রচলিত শাসন ব্যবস্থার পরিবর্তে কথিত ইসলামী খেলাফত প্রতিষ্ঠা করাই আনসার আল ইসলামের মূল উদ্দেশ্য। তাদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধকতাকারীদের ওপর তারা আকস্মিক আক্রমণ করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করে থাকে। এক্ষেত্রে অধিকাংশ সময় আগ্নেয়াস্ত্রের পরিবর্তে চাপাতি ব্যবহার করা হয়।

র‌্যাব কর্মকর্তা সজল জানান, গ্রেফতার জঙ্গি মাসুম মিয়া ওরফে মাসুমকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে একজন ইলেকট্রিক মিস্ত্রির কাজ করে। ফেসবুকের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ স্থানীয় নেতার অনুসারী এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃতরা আমির হোসেনের মাধ্যমে পরিচত হয় এবং তার মাধ্যমে জঙ্গি সংগঠনের সাথে জড়িত হয়। পরবর্তীতে অনলাইনে বিভিন্ন জঙ্গিবাদী আইডি থেকে জঙ্গি সংক্রান্ত পোস্ট ডাউনলোড করে এবং বিভিন্ন জঙ্গির সাথে পরিচয় হয়। সে জঙ্গি সংগঠনে বিভিন্নভাবে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে আসছে। সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গি এরই মধ্যে গ্রেফতারকৃত আমির হামজার কাছ থেকে জঙ্গি সংগঠনের সক্রিয়তা সম্পর্কে জানতে পারে। পরবর্তীতে সে অনলাইনে শীর্ষ স্থানীয় জঙ্গিদের সাথে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতো এবং তাদের সাথে নিয়মিত মিটিংয়ের আয়োজন করে। সে তিন বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত।

গ্রেফতার জঙ্গি সদস্য আবু বকর সিদ্দিক ওরফে এমরান জিজ্ঞাসাবাদে জানায়, সে ফাজিল প্রথম বর্ষের ছাত্র। সে বাংলাদেশি বীর মুজাহিদ নামক এক ব্যক্তির সাথে মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে আনসারুল্লাহ বাংলা টিম সম্পর্কে অবগত হয়। তাদের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ সংগঠনে যোগ দেয়। সে দুই বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত রয়েছে। বিভিন্ন অ্যাপস যেমন- টেলিগ্রাম, টর, ম্যাসেঞ্জার ও ইমো ব্যবহার করে বিভিন্ন ছদ্মনামে আইডি ব্যাবহার করে অনলাইনে বিভিন্ন রকম জঙ্গিবাদী কার্যক্রম পরিচালন করে আসছিলো। পরবর্তীতে সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সাথে অনলাইন গ্রুপের মাধ্যমে পরিচিত হয় এবং নিয়মিত যোগাযোগ করাসহ সংগঠনের বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য সক্রিয় ভূমিকা পালন করে।

জঙ্গি রাকিবুল হাসান ওরফে সিয়াম ওরফে মোহাম্মদ সিয়াম সরকার জানায়, সে মুন্সিগঞ্জ জেলার বাসিন্দা। স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত লেখাপড়া করেন। শীর্ষ স্থানীয় এক জঙ্গির সাথে ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে তার প্রথম পরিচয় হয়। পরবর্তীতে জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন আইডির সাথে পরিচয় হয় এবং জঙ্গিবাদী বিভিন্ন রকম কার্যকলাপে আগ্রহী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষ এক জঙ্গির মাধ্যমে জঙ্গিবাদে জড়ায়। সে আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন সক্রিয় সদস্য। সে বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠনের বিভিন্ন ভিডিও, বইপত্র, মোবাইল অ্যাপসের মাধ্যমে সংগ্রহ করতো এবং তাদের সংগঠন এবিটি পরিচালনা ও ব্যয় নির্বাহের জন্য প্রতি মাসে চাঁদা দিয়ে আসছে। সে দুই বছর ধরে এই সংগঠনের সাথে জড়িত।

অপর গ্রেফতার আবদুল্লাহ আল রোমান ওরফে রোমান খান জানায়, অনলাইনে সে ছদ্মনাম ব্যবহার করে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। সে গাজীপুরের ভাওয়াল বদরে আলম সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র। ছাত্রজীবনে সে হরকাতুল জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল। হরকাতুল জিহাদ নিষিদ্ধ ঘোষিত হলে সে তার সক্রিয়তা কমিয়ে দেয়, কিন্তু সবসময় সে সশস্ত্র উগ্রবাদে অংশগ্রহণে আগ্রহী ছিল। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের শীর্ষ স্থানীয় এক জঙ্গি তাকে দাওয়াত দেয় এবং বিভিন্ন বই, লিফলেট ও ভিডিও সরবরাহ করে। পরবর্তীতে তার মাধ্যমে সাতক্ষীরা অঞ্চলের শীর্ষ জঙ্গি ইকরামুল ইসলাম যার সাংগঠনিক নাম মুত্তাকিন ওরফে আমির হামজা ওরফে সালাউদ্দিন আইয়ুবীর সাথে পরিচয় হয় এবং তার সাথে জঙ্গি সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনা করে। এমনকি সংগঠনের প্রয়োজনে যোগাযোগ করার জন্য বিভিন্ন অনলাইন অ্যাপস হাতে-কলমে শিক্ষা দেয়। সে তিন বছর ধরে সংগঠনের সাথে জড়িত। সে শীর্ষ জঙ্গিদের মধ্যে একজন, তার কাছ থেকে বিভিন্ন উগ্রবাদী ডিজিটাল কন্টেন্ট পাওয়া গিয়েছে।

র‌্যাব জানায়, জঙ্গি তৎপরতা, প্রশিক্ষণ ও করণীয় সম্পর্কে তারা নিজেদের মধ্যে অনলাইনে যোগাযোগ করতো। তবে কোনও নাশকতার পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ, গোপনীয় তথ্য সরবরাহ ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে অফলাইনে দেখা সাক্ষাৎ করতো তারা। জঙ্গি সংগঠনের নেতাদের নির্দেশ পালনে সাংগঠনিক তৎপরতা বৃদ্ধি, নতুন সদস্য ও অর্থ সংগ্রহসহ জঙ্গিবাদী কার্যক্রম সম্প্রসারণের লক্ষ্যে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে সিদ্ধান্ত নেয়ার জন্য তারা গোপন মিটিং করতে খিলক্ষেত থানাধীন নিকুঞ্জ এলাকায় তাদের পূর্ব-নির্ধারিত স্থানে মিলিত হওয়ার চেষ্টা করছিল। ঠিক তখনই অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করে র‌্যাব।

এইচএম/এসএমএম

আরও পড়ুন