• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৯:৪২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : ডিসেম্বর ৮, ২০১৯, ০৯:৪২ এএম

রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যু : প্রেমিক সৈকতকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ

রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যু : প্রেমিক সৈকতকে রাতভর জিজ্ঞাসাবাদ
রুবাইয়াত শারমীন রুম্পা - ছবি : সংগৃহীত

স্টাম্পফোর্ড শিক্ষার্থী রুবাইয়াত শারমীন রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যুর ঘটনায় আটক তার প্রেমিক সৈকতকে গভীর রাত পর্যন্ত জিজ্ঞাসাবাদ করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। সৈকত ও রুম্পা একই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করছিল। কী কারণে সম্প্রতি রুম্পার সঙ্গে সৈকতের সম্পর্কের অবনতি ঘটে, মৃত্যুর আগে দিনভর সৈকত ও রুম্পা কোথায় ছিলেন, তার সঙ্গে কথা হয়েছিল কি না। সাক্ষাতে সেদিন বিকেলে কী হয়েছিল রুম্পার সঙ্গে- এসব বিষয়ে তাকে বিষদভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

শনিবার (৭ ডিসেম্বর) রাতে সৈকতকে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে আটকের পর মিন্টো রোডের গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। সৈকতই প্রথম ব্যক্তি যাকে রুম্পা হত্যা মামলায় আটক করা হলো।

বুধবার রাত পৌনে ১১টার দিকে সিদ্ধেশ্বরীর ৬৪/৪ নম্বর বাসার নিচে একটি মেয়ের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। যে জায়গায় এ ঘটনা, এর আশপাশে বেশকিছু ছেলে ও মেয়েদের হোস্টেল রয়েছে। মধ্যরাতে পুলিশ মরদেহটি অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধারের পর ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠায়। সেখানে ময়নাতদন্ত শেষে মরদেহ আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে দেয়ার মুহূর্তে রুম্পার পরিবার খবর পায়। পরে সেখানে গিয়ে মরদেহ এনে ময়মনসিংহে গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। রুম্পা স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের ইংরেজি বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

রুম্পার মৃত্যু রহস্য উদঘাটনে ঘটনাস্থলের আশপাশের ৩ ভবনের সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করেছে রমনা থানা পুলিশ। তার সহপাঠী এবং বন্ধুদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথাবার্তা বলছে। অনেককের গোয়েন্দা নজরদারিতে রাখা হয়েছে। 

রুম্পার মৃত্যু হত্যা, না আত্মহত্যা- তা নিশ্চিত হতে ঘটনাস্থলের পাশের ৩টি বহুতল ভবনের বাসিন্দা ও নিরাপত্তারক্ষীদের সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। পাশাপাশি গোয়েন্দারা সংশ্লিষ্ট তিনটি বাড়ির প্রত্যেক ফ্ল্যাটের সকল কক্ষ এবং বেলকনি ও ছাদ পরিদর্শন করেছেন।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (ভারপ্রাপ্ত) রাজীব আল মাসুদ বলছেন, রুম্পাকে ভবন থেকে ফেলে দিয়ে হত্যা করা হয়ে থাকতে পারে। যদিও এই ঘটনায় কে বা কারা জড়িত সেই ব্যাপারে পরিবার ও তদন্ত সংশ্লিষ্টরা নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে সম্ভাব্য সব দিক গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

রুম্পার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে ফরেনসিক রিপোর্ট অনুযায়ী ড. সোহেল মাহমুদ জানান, নিহতের হাত, পা ও কোমরসহ শরীরের কয়েক জায়গায় ভাঙা ছিল। ভবন থেকে পড়ে মারা যাওয়ার আগে তাকে নির্যাতন করা হয়েছিল কি না তা জানতে আলামত সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়েছে। রিপোর্ট পাওয়ার পর নিশ্চিত হওয়া যাবে।

রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম বলেন, ঘটনাস্থলের পাশে তিনটি ভবন আছে। এগুলোর কোনো একটি থেকে পড়ে রুম্পা মারা গেছেন। আলামত সংগ্রহ করা হয়েছে, মামলা তদন্তাধীন। ইনজুরিগুলো দেখে মনে হচ্ছে উঁচু কোনো জায়গা থেকে পড়ে মৃত্যু হয়েছে। তার শরীর থেকে আলামত সংগ্রহ করে ফরেনসিকে পাঠানো হয়েছে। 

ডিএমপি রমনা জোনের সিনিয়র এসিস্ট্যান্ট পুলিশ কমিশনার শেখ শামীম জানিয়েছেন, অপমৃত্যুর মামলা না করে রমনা থানার এসআই খায়ের বাদী হয়ে এ ঘটনায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। আমরাও ধারণা করছি, তাকে হত্যা করা হয়েছে। এ ঘটনায় কে বা কারা জড়িত, তা খুঁজে বের করার চেষ্টা চলছে।

৬ ডিসেম্বর সকালে রুম্পার লাশ ময়মনসিংহে তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়। নিহত রুম্পার বাবার নাম রোকন উদ্দিন। তিনি হবিগঞ্জ এলাকায় পুলিশ ইন্সপেক্টর হিসেবে কর্মরত। রুম্পার বাড়ি ময়মনসিংহ হলেও বর্তমানে রাজধানীর শান্তিবাগ এলাকায় থাকতেন।

রুম্পার রহস্যজনক মৃত্যুর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত আইনের আওতায় আনার জন্য ৭২ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। অন্যথায় এ আন্দোলন প্রত্যেকটি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে দেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। 
  
রুম্পার সহপাঠীরা বলেন, আর যেন কোনো রুম্পাকে এভাবে মরতে দেখতে না হয়। এ হত্যাকাণ্ডের একমাত্র বিচার মৃত্যুদণ্ড। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলেই পরবর্তীতে আমরা রক্ষা পাব, নাহলে এরকম নির্মম হত্যাকাণ্ড চলতেই থাকবে।

এইচ এম/ এফসি

আরও পড়ুন