• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০১:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জানুয়ারি ৭, ২০২০, ০১:৫৫ পিএম

ডা. সারওয়ার আলীকে স্বপরিবারে হত্যার চেষ্টা

ডা. সারওয়ার আলীকে স্বপরিবারে হত্যার চেষ্টা
ডা. সারওয়ার আলী

রাজধানীর উত্তরায় দুর্বৃত্তরা মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালানোর ঘটনায় ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা উত্তর জোনের একাধিক টীম মাঠে নেমেছে। বিষয়টি স্পর্শকাতর হওয়ায় গোয়েন্দারা ঘটনার ছায়া তদন্ত শুরু করেছে। পাশাপাশি থানা পুলিশও তদন্ত করে দেখছেন। 

গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, এ ঘটনায় গ্রেফতার বাড়ির দারোয়ান হাসানকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তাছাড়া তাকে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে পাঠিয়ে রিমান্ডের আবেদন করা হচ্ছে।
 
অপরদিকে গোয়েন্দারা হামলার বিষয়টিকে উগ্রবাদীদের কাজ বলে ধারনা করছেন। পূর্বের উগ্রবাদীদের হামলার সঙ্গে এ ঘটনার মিল রয়েছে। তাছাড়া অধিকাংশ উগ্রবাদী অপারেশনের সময় তাদের ব্যাগে চাপাতি, চায়নিজ কুড়াল, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও কেমিক্যাল স্প্রে পাওয়া গেছে। যা জঙ্গি বা উগ্রবাদীদের হত্যার মিশনের সঙ্গে মিল রয়েছে। এই বিষয়গুলো মাথায় রেখে গোয়েন্দারা তদন্ত শুরু করেছেন। 

এদিকে ঢাকা মহানগর উত্তরা জোনের পুলিশ কর্মকর্তা সুদীপ্ত রায় বলেন, দুটি বিষয় মাথায় রেখে আমরা ঘটনার তদন্ত শুরু করেছি। একটি হচ্ছে, ডা. সারওয়ার আলীর সঙ্গে স্থানীয় বা পারিবারিক কোন বিরোধ রয়েছে কিনা। অপরটি হচ্ছে, তার পরিবার উগ্রবাদীদের টার্গেটে পড়েছে কিনা। তার  পারিপর্শ্বিক বিষয়গুলো খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
 
তিনি বলেন, হাসান ও নাজমুলের ফেলে যাওয়া মুঠোফোন কললিষ্ট যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে। গাড়ি চালক পলাতক নাজমুলকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তাছাড়া ওই বাড়ির সিসিটিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। সেগুলোও যাচাই করা হচ্ছে। ওই বাড়ির অন্যান্য ফ্ল্যাটের প্রতিবেশীদের সঙ্গে গোয়েন্দারা কথা বলেছেন।

ঘটনার বিষয়ে উত্তরা পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তপন চন্দ্র বলেন, এ ঘটনায় গতকাল সোমবার সন্ধ্যায় সারওয়ার আলী বাদী হয়ে বাড়ির দারোয়ান হাসান, তাদের সাবেক গাড়িচালক নাজমুলসহ অজ্ঞাতনামা চার-পাঁচজনকে আসামি করে হত্যা চেষ্টার মামলা করেন। 

এবিষয়ে সারওয়ার আলীর স্ত্রী পুলিশকে জানান, কিছুদিন আগে তিনি তার গাড়িচালক নাজমুলকে সেনানিবাসের রাস্তা ব্যবহার করতে বলেন। কিন্তু তিনি ওই রাস্তা ব্যবহার করতে আপত্তি জানান। পরে বাসায় ফিরে নাজমুল আর চাকরি করবেন না বলে চলে যান। এনিয়ে বড় ধরনের কোন বিতর্ক হয়নি। হামলাকারিরা বাসার কোনো কিছু নিয়ে যায়নি। 

রাজধানীর উত্তরায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অন্যতম ট্রাস্টি ডা. সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢুকে তাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালিয়েছে দুর্বৃত্তরা। গত রোববার রাতে তার উত্তরার বাড়িতে ভয়াবহ এ ঘটনা ঘটে। জঙ্গিগোষ্ঠী এই কাজ করেছে বলে ধারণা করছেন ছায়ানটের এই নির্বাহী সভাপতি ও চিকিৎসক। দুর্বৃত্তরা সারওয়ার আলীর স্ত্রী কমিউনিটি ক্লিনিকের সাবেক প্রকল্প পরিচালক মাখদুমা নার্গিস, তাদের মেয়ে সায়মা আলী, জামাতা হুমায়ুন কবিরকেও হত্যার চেষ্টা চালায়। তাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসা দুই প্রতিবেশীকেও ছুরিকাঘাত করে দুর্বৃত্তরা।  হত্যাচেষ্টার ঘটনায় দুজনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত-পরিচয় চার/পাঁচজনকে আসামি করে রাজধানীর উত্তরা পশ্চিম থানায় গতকাল সন্ধ্যায় মামলা করেছেন সারওয়ার আলী।
 
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ সূত্র জানায়, গত রোববার রাত ১০টা ২০ মিনিটের দিকে অজ্ঞাতপরিচয় দুই দুর্বৃত্ত উত্তরার ৭ নম্বর সেক্টরে সারওয়ার আলীর বাড়িতে ঢোকে। তারা ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় গিয়ে তার মেয়ে সায়মা আলীর বাসার দরজায় ধাক্কা দেয়। দরজা খুলে দেয়া হলে দুর্বৃত্তরা ভেতরে গিয়ে সারওয়ার আলীর মেয়ে ও জামাতাকে ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়।

পরে বাড়ির চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে। এ সময় তাদের চিৎকারে ওই ভবনের এক বাসিন্দা ও প্রতিবেশীরা এগিয়ে গেলে দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়। পুলিশ ওই বাসা থেকে দুর্বৃত্তদের ফেলে যাওয়া মোবাইল ফোন, একটি ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও কেমিক্যাল প্রে উদ্ধার করেছে।

এ ব্যাপারে সারওয়ার আলী পুলিশকে বলেন, হামলাকারিদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছর হবে। তারা প্রথমে তার মেয়ের বাসায় ঢুকেছিল। দুর্বৃত্তরা তার মেয়েকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। ঠিক ওই সময় তার জামাতা এগিয়ে এলে তাকেও জিম্মি করে। পরে দুর্বৃত্তরা ভবনের চতুর্থ তলায় গিয়ে সারওয়ার আলী ও তার স্ত্রীকে হত্যার চেষ্টা করে।

সারওয়ার আলী আরও জানান, দুর্বৃত্তরা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার চেষ্টা চালায়। আমার স্ত্রী এগিয়ে এলে তাকেও ছুরিকাঘাত করে হত্যার চেষ্টা চালায়। তখন তিনতলা থেকে আমার মেয়ে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯এ ফোন করে। তারা বাঁচার জন্য চিৎকার করে। এরই মধ্যে দোতলার ভাড়াটে শাহাবুদ্দিন চাকলাদার ও তার ছেলে মোবাশ্বের চাকলাদার এগিয়ে আসেন। এরপর দুর্বৃত্তরা পালিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ফোন করার চার মিনিটের মধ্যে পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। তার সন্দেহ, ভবনের দারোয়ান হাসানের সঙ্গে দুর্বৃত্তদের যোগসাজশ রয়েছে। সে আগে থেকেই বাড়ির ফটক খোলা রেখেছিল।

পরে উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ তল্লাশি চালিয়ে ওই বাড়ির পার্কিং স্থল থেকে একটি স্ক্রু ড্রাইভার, ব্যাগে থাকা সাতটি চাপাতি, বৈদ্যুতিক শক দেওয়ার যন্ত্র, টিভি ক্যামেরার স্ট্যান্ড, সিনথেটিক দড়ি ও একটি কেমিক্যাল স্প্রে উদ্ধার করে।

উত্তরা পশ্চিম থানার পুলিশ জানায়, বাড়ির দারোয়ান হাসানের কাছ থেকে একটি মুঠোফোন উদ্ধার করা হয়েছে। ফোনটি ছিল মাখদুমা নার্গিসের গাড়ি চালক নাজমুলের, সেটি দারোয়ান হাসান ব্যবহার করছিলেন। হামলার দিন দারোয়ানের ওই ফোনে  ২৫টি কল এসেছিল। নাজমুলকে গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে। 

এইচ এম/বিএস