'তনু ও নুসরাতের মত বোনদের আমরা আর হারাতে চাই না'। এমনই দাবি প্রতিধ্বনিত হলো তুরাগের সর্বস্তরের মানুষের কন্ঠে। একদিকে করোনভাইরাসের সংক্রমণের ভয় অন্যদিকে ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের আতঙ্ক। কিন্তু এর সবকিছু উপেক্ষা করেই এক বর্বর ধর্ষকের বিচারের দাবিতে রাস্তায় নামলো ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন তুরাগ থানার মানুষ।
বুধবার (২০ মে) অভিযুক্তের বাড়ির সামনে নয়নীচালা যুব সংঘের মানববন্ধন পালনের পর বৃহস্পতিবার (২১ মে) তুরাগ থানা ছাত্রলীগ, নয়নীচালা যুব সংঘ, ৫৪ নং ওয়ার্ড কোভিড-১৯ মোকাবিলাকারী স্বেচ্ছেসেবাক টিমসহ সর্বস্তরের মানুষ- ১২ বছরের কিশোরী মীম ধর্ষণের ঘটনায় ধর্ষকের বিচার দাবিতে মানববন্ধন করেছে। অভিযুক্ত ওই ব্যক্তির নাম তওহীদ (২৭)। সকাল সাড়ে ১১ টা নাগাদ স্থানীয় কামারপাড়া হাইস্কুল এন্ড কলেজের সামনে এই মানববন্ধন পালিত হয়। প্রায় শতাধিক এলাকাবাসী ধর্ষণকারীর বিরুদ্ধে প্ল্যাকার্ড হাতে মানবন্ধনে অংশগ্রহণ করেন। পাশাপাশি তুরাগের নয়ানীচালা এলাকার ৪ নম্বর রোডের ডি ব্লকে অবস্থিত ৫০নং বাড়ির সামনে পালিত হয় প্রতিবাদ কর্মসূচী।
উপস্থিত বক্তরা এ সময় অভিযুক্ত আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারের আহ্বান জানান এবং সন্তানের অপরাধকে প্রশ্রয় না দিয়ে তাকে আইনের আওতায় আনতে পলাতক তওহীদের পরিবারের প্রতি অনুরোধ করেন।
বুধবার (২০ মে) মামলার অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্তকারী কর্মকর্তা ওয়াজিউর রহমান দৈনিক জাগরণকে জানান, এই বর্বর ঘটনার শিকার কিশোরী মীমকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হলে সেখানে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। পরে শারীরক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় তাকে তার পরিবারের সঙ্গে বাসায় পাঠানো হয়েছে।
এর আগে সোমবার (১৮ মে) কিশোরী মীমকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য নেয়া হলে সেখানেই তার ল্যাব টেস্ট করানো হয়, তাতে ধর্ষণের আলামত পাওয়া যায় বলে নিশ্চিত করেন এসআই ওয়াজিউর।
বিষয়টি নিয়ে প্রথমেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় ওঠে। 'আমরা তুরাগবাসী' নামক একটি ফেসবুক গ্রুপের এডমিন ও সদস্যরা সম্মিলিতভাবে এ ঘটনার ব্যাপারে সোচ্চার হয়ে উঠলে, ধর্ষক তওহীদের বিরুদ্ধে শুরু হয় প্রচারণা ও প্রতিবাদ। এক পর্যায়ে তা গোটা এলাকার মানুষের মাঝে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে এবং একযোগে সকলেই এই পৈশাচিক ধর্ষনকাণ্ডের বিচারের দাবিতে সরব হয়ে ওঠেন।
গত ১৬ই মে নয়ানীচালার নিজ বাসার ৪র্থ তলায় পিতৃহীন, ১২ বছর বয়সী অসহায় কিশোরী মীমকে ঈদের জামা-কাপড় ও খাদ্যসামগ্রী দেওয়ার নাম করে ডেকে নিয়ে যায় তওহীদ। পরে ধারালো অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে তার মুখ বেঁধে ধর্ষণ করে সে। একপর্যায়ে মীম বিবস্ত্র অবস্থায় হাসান মঞ্জিল নামের ওই বাড়ী থেকে চিৎকার করতে করতে নিচে নেমে আসলে এলাকাবাসী তাকে উদ্ধার করে আশ্রয় দেয়। এ সময় স্থানীয়দের নিকট ঘটনাটি খুলে বলে সে।
পরে খবর পেয়ে তুরাগ থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে কিশোরী মীমকে হেফাজতে নেয়। এ ঘটনায় তার ভাই বাদি হয়ে তুরাগ থানায় একটি ধর্ষন মামলা দায়ের করেন। ধর্ষনকাণ্ডের অভিযুক্ত আসামী তওহীদ তার পরিবারের সহায়তা নিয়ে পলাতক রয়েছে বলে জানা গেছে। তবে তাকে গ্রেফতারে তৎপরতা চলছে বলে জানিয়েছে তুরাগ থানা পুলিশ।
এসকে