• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ৪, ২০১৯, ০৯:২৩ এএম

অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে মানা হচ্ছে না বিল্ডিংকোড

অগ্নিকাণ্ডের নেপথ্যে মানা হচ্ছে না বিল্ডিংকোড
আগুন নেভাচ্ছেন ফায়ার কর্মীরা, ফাইল ফটো

 

ফায়ার ফাইটিং শুধু ফায়ার সার্ভিসের কাজ নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা, প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আর প্রতিটি সংস্থার নিজস্ব টিম থাকা দরকার, যাতে আগুন লাগলে দশ থেকে বিশ মিনিট ফাইট করার সক্ষমতা থাকে। অথচ এমন সরঞ্জাম অধিকাংশ ভবন মালিকের নেই।  নিজস্ব সিকিউরিটিদের ফায়ার ফাইটিংয়ের কোনো প্রশিক্ষণ নেই। আগুন লাগলেই নির্ভর করা হচ্ছে ফায়ার সার্ভিসের উপর।  স্বল্প সময়ের জন্য নিজস্ব সক্ষমতা থাকার কথা থাকলেও কিন্তু সেটা আমাদের দেশে বড় ভবন ও অনেক করপোরেট অফিসগুলোতে  নেই। 

ফায়ার সার্ভিস সূত্র বলেছে, দেশে গার্মেন্টস কারখানা, শিল্প প্রতিষ্ঠান, বহুতল বাণিজ্যিক ও আবাসিক ভবন, শপিং মলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। আগুনে প্রাণহানিরও নজির রয়েছে। গত বছর দেশে বড় দুটি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। যার একটি শপিং মলে আর অন্যটি পোশাক কারখানায়।

সূত্র জানায়, রাজধানীতে সনামধন্য শপিংমল  বসুন্ধরা সিটিতে আগুন লাগার পর অভিযানে ব্যাঘাত ঘটেছে দমকল বাহিনীর। কারণ, বুসন্ধরার নিজস্ব কর্মীদের প্রশিক্ষণ না থাকা ও ফায়ার সার্ভিসের পুরো সরঞ্জামাদি না থাকা। তাৎক্ষণিক আগুন নেভাতে না পারায় মার্কেটের ৬ তলার শতাধিক দোকান পুড়ে যায়। এদিকে গাজীপুরে একই অবস্থা থাকায় একটি সুতা কারখানার আগুন নেভাতে সময় লাগে ৩৫ ঘণ্টা।

ফায়ার সার্ভিসের অপারেশন্স অ্যান্ড মেইনটেন্যান্স বিভাগের পরিচালক মেজর এ কে এম শাকিল নেওয়াজ বলেন, বহুতল আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন, ফ্যাক্টরি সবক্ষেত্রেই আগুন মোকাবেলায় পূর্ব প্রস্তুতি এবং তড়িৎ পদক্ষেপের ঘাটতি দেখা যায়।

তিনি আরও বলেন,  ফায়ার ফাইটিং শুধু ফায়ার সার্ভিসের কাজ নয়। ব্যক্তিগত পর্যায়ে সচেতনতা, প্রশিক্ষণ থাকতে হবে। আর প্রতিটি সংস্থার নিজস্ব টিম থাকা দরকার, যাতে আগুন লাগলে দশ থেকে বিশ মিনিট ফাইট করতে পারে। কিন্তু সেটা আমাদের দেশের অনেক প্রতিষ্ঠানে নেই। দেখা যায়, নামে মাত্র ফায়ার ফাইটিং টিম রয়েছে, যাদের কোনো প্রফেশনাল ট্রেনিং নেই। কোনো ইক্যুইপমেন্ট নেই। পারসোনাল প্রটেকশন গিয়ার নেই। অনেক বিল্ডিংয়ে ফায়ার ইক্যুইপমেন্ট লাগানো রয়েছে।  কিন্তু ঠিকভাবে মেইনটেনেন্স করা হচ্ছে না। আবার লোকজন জানেও না কীভাবে এটা ব্যবহার করতে হবে। যেহেতু পোশাক কারখানাতেই হাজার হাজার মানুষ এক সঙ্গে কাজ করে, তাই সেখানে আগুনে প্রাণহানির আশঙ্কা সবচেয়ে বেশি থাকে। 

সূত্র আরও জানায়, ২০১২ সালে তাজরিন ফ্যাশনসে অগ্নিকাণ্ডে মারা যায় শতাধিক শ্রমিক। ওয়াশিংটনভিত্তিক সলিডারিটি সেন্টারের তথ্যানুযায়ী তাজরিনে অগ্নিকাণ্ডের পর ওই বছর শতাধিক অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অন্তত ৩৪ জন মারা যান। তাজরিন এবং রানাপ্লাজা দুর্ঘটনার পর বাংলাদেশে পোশাক খাতের অগ্নি এবং ভবন নিরাপত্তা জোরদারে কাজ চলছে। 

অ্যাকডের প্রধান নির্বাহী রব ওয়েস বলেন,  নিরাপত্তার ক্ষেত্রে তাৎপর্যপূর্ণ অগ্রগতি হলেও এখনো তাদের উদ্বেগ কাটেনি।

বিজিএমইএর মনিটরিং তথ্য থেকে জানা যায়, তারা ১৬শ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করেছে। যেখানে সব মিলিয়ে ৮৭ হাজার ত্রুটি পাওয়া গেছে এবং এর মধ্যে ৫৫ হাজার ত্রুটি সংশোধন করা হয়েছে। এটা অবশ্যই অগ্রগতি, কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ সবগুলো আরো দেড় বছর আগেই সংশোধন হওয়ার কথা ছিলো। 

এ বিষয়ে বিজিএমইএ কর্মকর্তা সিদ্দিকুর রহমান বলেন, ফায়ার ডোর, স্প্রিংকলার এগুলো একটা রানিং ফ্যাক্টরিতে লাগাতে সময় লাগে। তবে দুর্বলতা আমাদের যেমন ছিল যে প্রথম দিকে আমরা কোথা থেকে জিনিসগুলো পাব সেটা জানা ছিল না। আবার একডেরও ম্যানপাওয়ারের অভাব ছিল। যে কারণে আমরা যখন কোনো প্ল্যান সাবমিট করছি, তারা সময়মতো দিতে পারে নাই।

এদিকে পোশাক কারখানার নিরাপত্তার জন্য এ পর্যন্ত তিন হাজার সাতশ ফ্যাক্টরি পরিদর্শন করা হয়েছে। যার মধ্যে অ্যাকর্ড এবং অ্যালায়েন্সের আওতায় আছে দুই হাজার ২শ ফ্যাক্টরি। বিজিএমইএ কর্মকর্তা জানান, ২০১৭ সালের জুনের মধ্যে এগুলো ত্রুটিমুক্ত হবে। তবে বাকি দেড় হাজারের মতো ফ্যাক্টরি কতদিনে নিরাপদ হবে তার সুনির্দিষ্ট সময়সীমা বলতে পারেননি।

অপরদিকে বাংলাদেশে অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করছেন বুয়েটের অধ্যাপক ডক্টর মোহাম্মদ মাকসুদ হেলালী। তিনি বলেন, পোশাক কারখানা ছাড়াও বাংলাদেশে অধিকাংশ বহুতল ভবন অগ্নি দুর্ঘটনার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। রাজধানীর জাপান গার্ডেন সিটিতে  আগুন লাগার পর ভবনের লোকজন ছাদে উঠে যায়। এটা হওয়ার কথা নয়। সেখানে ফায়ার এক্সিট থাকার কথা সেটা হয়নি। মানুষের এই সেন্সটাও নেই এবং সুবিধাও নেই। যে কারণে এগুলো মানুষের জীবনের জন্য ঝুকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে বলে জানান তিনি। 

বসুন্ধরা সিটিতে এর আগেও আগুন লেগেছে। মার্কেটের মধ্যে অগ্নি নির্বাপনী যন্ত্রপাতিও দেখা গেছে। ওই ভবন প্রসঙ্গে হেলালী বলেন, সবকিছুই আছে মনে হচ্ছে। কিন্ত যেটা থাকার দরকার ছিল, সেটাই অনুপস্থিত। বসুন্ধরা একটি বড় অট্রিয়াম ভবন। ফায়ারের নিরাপত্তার জন্য এরকম বিল্ডিংয়ে ফায়ার স্প্রিংকলার সিস্টেম থাকার কথা। যেটি ধোঁয়া নির্ণয় করলে সঙ্গে সঙ্গে অ্যালার্ম বাজবে এবং সেখানে সয়ংক্রিয়ভাবে পানি ছিটাবে। অগ্নি নিরাপত্তার জন্য ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড হালনাগাদ এবং সেটি মানতে বাধ্য করার জরুরি বলে মনে করেন অধ্যাপক হেলালী।

অধ্যাপক হেলালী আরও বলেন, বাংলাদেশে বিল্ডিং তৈরির আইনটা তৈরি হয়েছে ২০০৬ সালে। এই আইনগুলো সম্পর্কে মানুষ জানে না এবং বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে ফায়ারের নিয়মগুলো তারা মেনে চলছে না। বিল্ডিং তৈরির ক্ষেত্রে ফায়ারের জন্য কিছু সুনির্দিষ্ট নিয়ম রয়েছে। বিশেষতঃ বহুতল ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অনেকগুলো বাড়তি নিরাপত্তা ব্যবস্থার কথা উল্লেখিত আছে। যেগুলো একেবারেই ওভারলুক করা হচ্ছে। 

এইচ এম/বিএস