• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২০, ২০১৯, ০৩:০৪ পিএম

জঙ্গিদের ফের সংগঠিত করতে গত বছর দেশে আসে রিপন

জঙ্গিদের ফের সংগঠিত করতে গত বছর দেশে আসে রিপন
র‌্যাবের হাতে আটক জঙ্গি সংগঠন জেএমবির সদস্য মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন

 

হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর গা ঢাকা দেয় জঙ্গিরা। কয়েকজন দেশের সীমানা পাড়ি দেয়। এদের কেউ কেউ আবার দেশে ফিরে আসে। তাদেরই একজন মামুনুর রশিদ ওরফে রিপন ওরফে রেজাউল করিম ওরফে রেজা। 

রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার অস্ত্র সরবরাহে যুক্ত ছিলো রিপন। শুধু তাই নয় হামলার পরিকল্পনা ও অর্থ সরবরাহের সাথেও যুক্ত ছিলো সে।

জঙ্গিদের ফের সংগঠিত করতে ২০১৮ সালে ফের বাংলাদেশে ফিরে আসে গা ঢাকা দেয় রিপন। 

এ সব বিষয়ে রিপন র‌্যাবের কাছে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান।

রোববার দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে মুফতি মাহমুদ খান এসব তথ্য জানান।

তিনি জানান, রোববার (২০ জানুয়ারি) ভোর ৪টার দিকে গাজীপুরের বোর্ডবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামুনুর রশীদ রিপনকে আটক করা হয়। মামুনুর রশীদ দীর্ঘদিন ধরে পলাতক ছিল। সে জেএমবির শুরা পরিষদের অন্যতম সদস্য। হলি আর্টিজান মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামি। তার কাছ থেকে নগদ ১ লাখ ৪৭ হাজার ৭শ’ ৫৫ টাকা উদ্ধার করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

তিনি জানান, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আটক মামুনুর রশীদ ওরফে রিপন জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার স্বীকারোক্তি প্রদান করেছে। সে ১৯৮৮ সালে বগুড়া জেলায় জন্মগ্রহণ করে। তার শিক্ষা জীবন শুরু হয় স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির মাধ্যমে। সেখানে সে ৩য় শ্রেণি পর্যন্ত অধ্যয়ন করে। পরবর্তীতে তার পিতা তাকে মাদ্রাসা শিক্ষায় ভর্তি করিয়ে দেয়। সে ঢাকার মিরপুর, বগুড়ার নন্দীগ্রাম ও নওগাঁর বিভিন্ন মাদ্রাসায় অধ্যয়ন করে। সর্বশেষ সে ২০০৯ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জের মাদ্রাসাতুল দারুল হাদিস হতে দাওরা-ই হাদিস সম্পন্ন করে। এরপর বগুড়ার সাইবার টেক নামক একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হতে অফিস এ্যাপ্লিকেশন কোর্স সম্পন্ন করে উক্ত প্রতিষ্ঠানে চাকরি শুরু করে।

জেএমবিতে এসে রশিদ হলো রিপন

মুফতি মাহমুদ জানান, রিপনের প্রকৃত নাম মামুনুর রশীদ। কিন্তু জেএমবিতে অন্তর্ভুক্ত হবার পর তার নতুন নাম হয় রিপন। জেএমবিতে যোগ দেয়ার বিষয়ে সে জানায়, ২০১৩ সালে বগুড়ায় সাইবার টেক নামক কম্পিউটার প্রতিষ্ঠানে চাকরিরত অবস্থায় পূর্বপরিচিত ডা. নজরুল কর্তৃক জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয় সে। এ ভাবে ধীরে ধীরে সে জেএমবির প্রতি অনুরক্ত হয়ে পড়ে। জেএমবিতে অন্তর্ভুক্তির পর ডা. নজরুল তার সাংগঠনিক নাম দেয় "রিপন"। 

প্রাথমিকভাবে রিপনের দায়িত্ব ছিল ইয়ানতের (চাঁদা) টাকা সংগ্রহ করে ডা. নজরুলের নিকট পৌঁছে দেয়া। ডা. নজরুল ওই সময়ে জেএমবি’র একাংশের আমির ছিল। ডা. নজরুলের আস্থাভাজন হিসেবে সে অল্প সময়ের মধ্যে ডা. নজরুলের (জেএমবি উক্ত অংশের) সেকেন্ড ইন কমান্ড হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে।  

তিনি বলেন, নবনিযুক্ত জেএমবি’র আমির হিসেবে সারোয়ার জাহান সংগঠনের জন্য নতুন করে অর্থ সংগ্রহ ও দাওয়াতি কার্যক্রম বেগবান করার উদ্যোগ হাতে নেয়। এরই অংশ হিসেবে মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনের দায়িত্বধীন এলাকায় বিকাশের দোকান লুট করে ৬ লাখ টাকা, সিগারেট বিক্রেতার থেকে ছিনতাই করা ১ লাখ টাকা এবং গাইবান্ধায় অপর এক ঘটনায় ১ লাখ টাকাসহ ছিনতাইকৃত মোট ৮ লাখ টাকা জেএমবির আমির সারোয়ার জাহান এর নিকট পৌঁছে দেয়। ইতিমধ্যে জেএমবি আমির সারোয়ার জাহানের মাধ্যমে জঙ্গিদের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও মদদদাতা জঙ্গি আব্দুল্লাহ’র সাথেও তার পরিচয় হয়।

র‌্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক আরও বলেন, জেএমবির সেই অংশের সাথে তামীম চৌধুরীর যোগ দেয়ার বিষয়ে রিপন যানায়, ২০১৫ সালের মাঝামাঝিতে তামীম চৌধুরী ও সারোয়ার জাহানের গোপন বৈঠকের মাধ্যমে সমঝোতার ভিত্তিতে  স্মারকপত্র প্রস্তুত করা হয়।  সমঝোতার ভিত্তিতে সারোয়ার জাহানকে আমির নির্বাচিত করা হয় এবং তার সাংগঠনিক নাম দেওয়া হয় "শায়েখ আবু ইব্রাহিম আল হানিফ"। সেই বৈঠকে রিপন সহ সাদ্দাম ওরফে কামাল, শরিফুল ওরফে রাহাত এবং আরও কয়েক জন উপস্থিত ছিল। তখন রিপন সুরা সদস্য মনোনীত হয়।

তিনি বলেন, জেএমবি’র সুরা সদস্য হিসেবে মামুনুর রশীদ ওরফে রিপনের দায়িত্ব ছিল অর্থ সংগ্রহ করা, সামরিক প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা এবং অস্ত্র ও বিস্ফোরণ সরবরাহ করা। এ বিষয়ে সে আরও জানায় যে, সুরা সদস্যরা জঙ্গি হামলার পরিকল্পনার সাথে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত থাকত। সংগঠনের সিদ্ধান্তে গ্রেফতারকৃত সুরা সদস্য মামুনুর রশিদ ওরফে রিপনের নেতৃত্বে একটি দল ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে পার্শ্ববর্তী দেশে গমন করে অর্থ, অস্ত্র ও বিস্ফোরক সংগ্রহের  উদ্দেশ্যে। 

তার দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, হলি আর্টিজান হামলার পূর্বে মামুনুর রশিদ আনুমানিক ৩৯ লাখ টাকা সারোয়ার জাহানকে প্রেরণ করে। সে হলি আর্টিজান হামলার পরিকল্পনা ও অস্ত্র সরবরাহের সাথেও যুক্ত ছিল বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে। এ ছাড়া উত্তরাঞ্চলের বেশ কয়েকটি জঙ্গি হামলা তার প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে সংগঠিত হয়েছে। উক্ত জঙ্গি হামলার অধিকাংশই রাজীব গান্ধীর নেতৃত্বে সংগঠিত হয়েছিল। বিভিন্ন জঙ্গি হামলাগুলো পরিচালিত করার পূর্বে তারা মহড়া করে অনুশীলন করত। এ ধরনের একটি অনুশীলন মহড়া চলাকালীন দুর্ঘটনায় ২০১৬ সালের এপ্রিল মাসে বগুড়ায় সুরা সদস্য ফারদিন ও অপর এক সক্রিয় জঙ্গি সদস্য তারিকুল ইসলাম জুয়েল নিহত হয় বলে জানা যায়। 

তিনি বলেন, হলি আর্টিজান ঘটনার পরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাঁড়াশি অভিযানের ফলে বাংলাদেশের জঙ্গিরা নেতৃত্বহীন হয়ে পড়ে। তখন আত্মগোপনে থেকে মামুনুর রশীদ পুনরায় জঙ্গিদের সংগঠিত করার চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকে। এ উদ্দেশ্যে সে ২০১৮ সালের শুরুর দিকে পুনরায় বাংলাদেশে প্রবেশ করে জঙ্গিদের সংগঠিত করতে থাকে। সম্প্রতি তারা ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিভিন্ন ম্পর্শকাতর স্থানসহ আদালত প্রাঙ্গনে জঙ্গি হামলার পরিকল্পনা করে। যাতে বিচার বিভাগের সাথে জড়িতদের ভিতরে ভীতির সঞ্চার করা যায় এবং সাধারণ মানুষকে আতংকিত করে বিদেশে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়।

আটক রিপনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

আরআর/আরআই