• ঢাকা
  • শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: এপ্রিল ২০, ২০১৯, ০৫:৩৮ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২১, ২০১৯, ১২:৩২ এএম

পরিবহনে চাঁদাবাজি

রমজানের আগেই নিয়ন্ত্রণহীন গরুর মাংসের বাজার 

রমজানের আগেই নিয়ন্ত্রণহীন গরুর মাংসের বাজার 


বাংলার বহুল প্রচলিত প্রবাদ বাক্য, ‘ঢাল নেই, তলোয়ার নেই, নিধিরাম সর্দার’। এরই মতো গরুর মাংসের বাজার ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রণ কারো কাছে না থাকলেও খবরদারি সংস্থার অভাব নেই। প্রতি বছর রমজানের আগেই ঢাকার দুই সিটি কর্পোরেশন মাংসের দাম নির্ধারণ করে দেয়। এই দামে বিক্রির জন্য চলে অভিযান। তবুও রমজানের আগেই নানা কারণে বাড়ে গরুর মাংসের দাম। 

অবশ্য মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, তিন কারণে নিয়ন্ত্রণের বাইরে রয়েছে গরুর মাংসের দাম। তার মধ্যে প্রধানতম কারণ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে গরু রাজধানী পর্যন্ত আনতে গরুবাহী গাড়িতে বেলাগাম চাঁদাবাজি। আমরা ধর্মঘট করেছি কিন্তু এই বিষয়ে ভ্রক্ষেপ নেই সরকার প্রশাসন কারোও।

মাংস ব্যবসায়ীরা জানান, গত তিন বছর ধরে নিয়ন্ত্রণহীন মাংসের ব্যবসা। পরিবহনে চাঁদাবাজি থেকে শুরু করে ইজারাহাটে অতিরিক্ত চাঁদা এবং বিদেশি গরু আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চড়েছে গরুর মাংসের দাম।

শনিবারও বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫৭০ টাকা থেকে ৬শ’ টাকা। তবে এই আকাশচুম্বি দামের জন্য মূলত পরিবহন চাঁদাবাজি অন্যতম। এছাড়া, বাংলাদেশের গরুর যোগান আসতো পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত থেকে। গত কয়েক বছর ধরে ভারতীয় গরু আমদানি প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এতেই চড়তে শুরু করে গরুর মাংসের দাম। 

মাংস ব্যবসায়ীরা বলছেন, মায়ানমার, ভুটান থেকেও গরুর আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গরুর মাংসের যোগান আসে দেশি গরু থেকে। দেশি গরু বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে প্রবেশ করতে গেলে শুধু পরিবহনে চাঁদা দিতে হয় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা। সরকার নির্ধারিত ১শ’ টাকার ইজারার জায়গায় মাংস ব্যবসায়ীদের দিতে হয় ২ থেকে আড়াই হাজার টাকা। এছাড়া, চামড়া শিল্প নগরী স্থানান্তরিত হওয়াতে চামড়ার দামে বিশাল বির্পযয় নেমে এসেছে। ২ হাজার টাকার চামড়ার দাম এখন ২শ’ থেকে ৩শ’ টাকা। সব মিলিয়ে এসব সমস্যা থেকে বেরিয়ে আসতে না পারলে মাংসের দাম স্বাভাবিক পর্যায়ে নেমে আসবে না বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।       

গরুর মাংসের দাম বাড়ার বিষয় নিয়ে কথা হয় বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমাদের খবর কেউ নেয়না। বাড়তি দামে গরু কিনি আর বাড়তি দামেই বাজারে মাংস বিক্রি করি। রমজান এলেই দাম বাড়ে এতে সবার দৃষ্টি পড়ে মাংস ব্যবসায়ীদের উপর। আমরা চাই ৩শ’ টাকায় মাংস বিক্রি করতে। তা সম্ভব হয় না। কারণ গত তিন বছর ধরে মাংসের বাজার পুরো নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে পড়েছে।  
গরুর মাংসের দাম বাড়ার কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, গরুর মাংসের দাম বাড়ার প্রধান কারণ হচ্ছে গাবতলীর গরুর হাটের ইজারা। সরকারি ইজারা রেটের বাইরেও আরো ২ হাজার টাকা করে অতিরিক্ত দিতে হয়। এখানেই শেষ নয় সম্প্রতি সময়ে ভারত ও মায়ানমার থেকে গরু আমদানি প্রায় বন্ধই হয়ে গিয়েছে। এক দু’টি যদি আসে তাহলে রাস্তায় হাজার হাজার টাকা চাঁদা দিতে হয়। বেনাপোল থেকে গরু আনতে প্রতিটিতে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা রাস্তায় চাঁদা দিতে হয়। 

রবিউল ইসলাম বলেন, আমরা এসব কারণে ১০ দিন ধর্মঘট পালন করেছি। প্রশাসন থেকে কেউ আমাদের খোঁজ নেয়নি। মহামান্য আদালত ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে নির্দেশ দেন আমাদের বিষয়গুলো ৬০ দিনের মধ্যে সমাধান করার জন্য। কিন্তু সিটি কর্পোরেশন আমাদের সঙ্গে কথা না বলেই তারা তাদের ইচ্ছেমতো ইনকোয়ারি রির্পোট দিয়েছে। এতে ইজারার বিষয়টি অমীমাংসিতই রয়ে গিয়েছে। এসব কারণে রাজধানীতে প্রায় ৭০ শতাংশ মাংসের দোকান বন্ধ হয়ে গিয়েছে।

এআই/আরআই