• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০৯:০৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : এপ্রিল ২৫, ২০১৯, ০৯:০৯ পিএম

তালিকাভুক্তির চার বছরে খাদের কিনারে অলিম্পিক এক্সেসরিজ

তালিকাভুক্তির চার বছরে খাদের কিনারে অলিম্পিক এক্সেসরিজ

 

অদ্যবধি ৪ বছর হয়নি। পরস্পরের যোগসাজশে অতিরিক্ত মুনাফা দেখিয়ে দেশের পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয় অলিম্পিক এক্সেসরিজ লিমিটেড। ব্যবসায়িক মন্দার নাম করে বেরিয়ে যাচ্ছেন পরিচালকেরা। পারিবারিক বৃত্তে ঘূর্ণীয়মান এই কোম্পানির ইতিমধ্যে উৎপাদন ক্ষমতায় কমছে প্রকৃত মুনাফা। আর ফেসভ্যালুর অবস্থান নিচ্ছে কোম্পানির শেয়ার দর। আর বন্ড সুবিধায় পণ্য এনে বাজারে বিক্রি করে অবৈধভাবে হাতিয়ে নিচ্ছে কাচা টাকা। এতে একদিকে যেমন সরকার বিপুল অঙ্কের রাজস্ব হারাচ্ছে, অন্যদিকে এই কোম্পানির বিনিয়োগকারী পড়ছেন বিপাকে। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ফাঁকি দিয়ে ঘোষণা ছাড়াই শেয়ার বিক্রি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন অর্থ। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৫ সালের ২৫ জুন একযুগে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ ও চট্রগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেন শুরু হয় অলিম্পিক এক্সেসরিজ লিমিটেডের। তৎকালীন সময়ে কোম্পানির পরিচালক ছিলেন ৫ জন। এর মধ্যে প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান ফরিদা আক্তারের শেয়ার ছিল ৫.১৩ শতাংশ। আর তারই স্বামী ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়ার শেয়ার ছিল ৮.৫৫ শতাংশ। কোম্পানির আরেক অংশীদার নাভানা পলি প্যাকিং লিমিটেডের শেয়ার ছিল ৮.৫৫ শতাংশ। যার নমিনি ডিরেক্টর ছিলেন এমডির ভাই গোলাম সরোয়ার। এছাড়া বে-পলি অ্যান্ড প্যাকিং লিমিটেডের নিকট যে ৪.২৮ শতাংশ শেয়ার ছিল, তারও নমিনি ডিরেক্টর ছিলেন এমডির আরেক ভাই গোলাম মাওলা মজুমদার। রিভারসাইড অ্যাপারেলস লিমিটেড ছিল অলিম্পিক এক্সেসরিজের ৪.২৮ শতাংশ। এই শেয়ারের ডিরেক্টর ছিল কোম্পানির এমডি গোলাম কিবরিয়ার ছেলে রিপাত বিন কিবরিয়া।

সূত্র আরো জানায়, পরিবারের সবাই পর্ষদে থাকায় কোম্পানির কোন সিদ্ধান্ত কখনও দ্বিমত আসেনি। যে যখন খুশি তার মতো করে অর্থ উত্তোলন-ব্যয় করছেন। আর নিজেদের ইচ্ছেমতো কোম্পানি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছেন। আর এসব কারণে কোম্পানি দিন দিন নীচের দিকে ধাবিত হচ্ছে। কমেছে উৎপাদন, কমেছে ব্যবসা। এতে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা। নামতে নামতে কোম্পানির শেয়ারদর বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) ছিল ৯.৬০ টাকা। তালিকাভুক্তির সময় কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট সম্মিলিতভাবে শেয়ার ছিল ৩০.৭৯ শতাংশ। যা ৪ বছরের ব্যবধানে তা ৩১ মে ২০১৯ শেষে উদ্যোক্তা পরিচালকদের শেয়ার নেমে এসেছে ২০.৬৮ শতাংশে। অর্থাৎ বিগত ৪ বছরে উদ্যোক্তা পরিচালকরা ১০.১১ শতাংশ শেয়ার বিক্রয় করে কোম্পানি থেকে বেরিয়ে গেছেন। 

সিকিউরিটিজ আইন অনুযায়ী, লিস্টিং রেগুলেশন ২০১৫ অনুযায়ী, উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা নিজ কোম্পানির শেয়ার কেনাবেচা করতে চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জ ও বিএসইসিকে লিখিতভাবে জানানোর বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কিন্তু অলিম্পিক এক্সেসরিজের ওই দুই পরিচালক নিজেদের হাতে থাকা সব শেয়ার বিক্রির সময় ডিএসইকে কিছুই জানাননি। 

বিএসইসির এক নির্দেশনায় বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিজ কোম্পানির ন্যূনতম ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ করতে হবে। এর কম হলে উদ্যোক্তা পরিচালকরা শেয়ার বিক্রি বা স্থানান্তর করতে পারবেন না। এই নির্দেশনাও অমান্য করেছে কোম্পানিটি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এর নির্বাহী পরিচালক ও মূখপাত্র মো. সাইফুর রহমান বলেন, অলিম্পিক এক্সেসরিজ লিমিটেডের পরিচালকেরা যদি কোন ধরনের ঘোষণা ছাড়া শেয়ার বিক্রি করে তা সিকিউরিটিজ আইনের লঙ্ঘন। এ ক্ষেত্রে বিএসইসির অ্যানফোর্সমেন্ট ডিপার্টমেন্ট প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই কর্মকর্তা। 

ডিএসই সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ৩ মার্চ ঘোষণা দিয়ে ৯ লাখ ৯০ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেছে নাভানা পলি প্যাকিং কোম্পানি ও রিভারসাইড অ্যাপারেলস লিমিটেড। এর মধ্যে ৬ লাখ ৪০ হাজার শেয়ার বিক্রয় করেছে নাভানা পলি প্যাকিং লিমিটেড, আর ৩ লাখ ৫০ হাজার বিক্রয় করেছে রিভারসাইড অ্যাপারেলস লিমিটেড। বাদবাকি ৯.৯৫ শতাংশ শেয়ার বিক্রয়ের ঘোষণা দেয়নি প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোক্তা পরিচালকরা। 

এদিকে, ৩০ জুন ২০১৮ সমাপ্ত অর্থবছর শেষে অলিম্পিক এক্সেসরিজের উদ্যোক্তা পরিচালকদের নিকট ২৫.৮১ শতাংশ শেয়ার, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের নিকট ১৯.৪২ শতাংশ শেয়ার ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের নিকট ৫৪.৭৭ শতাংশ শেয়ার ছিল। কিন্তু ৩১ মার্চ ২০১৯ শেষে পরিচালকদের এই শেয়ারের স্থিতি নেমে আসে ২০.৬৮ শতাংশে। কিন্তু প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার ধারণের পরিমাণ যথাক্রমে বেড়ে দাড়িয়েছে ২০.১৫ ও ৫৯.১৭ শতাংশে।

অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, কোম্পানিটি পরিচালনা পর্ষদ থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন ২ সদস্য। পদ ছাড়া পরিচালকদের মধ্যে রয়েছেন কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ফরিদা আক্তার ও বে-পলি অ্যান্ড প্যাকিং লিমিটেড (নমিনি পরিচালক গোলাম মাওলা মজুমদার)। যাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল কোম্পানিটির ৯.৯৫ শতাংশ শেয়ার। আর পারিবারিক নিয়ন্ত্রণাধীন কোম্পানিটির একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া। মূলত অর্থ সংগ্রহের উদ্দেশ্যেই এই শেয়ার বিক্রি বলে সূত্র নিশ্চিত করেছে। 

এসব বিষয় নিয়ে কথা কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ হাবিবুল্লাহ এর সঙ্গে। তিনি বুধবার (২৪ এপ্রিল) দৈনিক জাগরণকে বলেন, সমাপ্ত বছরের বার্ষিক সাধারণ সভায় (এজিএম) পরিচালনা পর্ষদ থেকে ব্যক্তিগত কারণ দেখিয়ে অব্যাহতি নিয়েছে কোম্পানিটির চেয়ারম্যান ফরিদা আক্তার। যার কারণে পরিচালকদের শেয়ার ধারণ পরিমাণ কমেছে। কি কারণে কোম্পানির চেয়ারম্যান পদত্যাগ করলেন তার কোন সঠিক ব্যাখ্যা হাবিবুল্লাহ দিতে পারেননি। এছাড়া বোর্ড থেকে অব্যাহতি নেয়ার পর উনি শেয়ার বিক্রয় করেছেন কি-না সে বিষয়েও মন্তব্য করতে নারাজ এই কোম্পানি সচিব।

এআই/টিএফ