• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: মে ১, ২০১৯, ১০:১০ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২, ২০১৯, ০২:১৪ পিএম

মহা আয়োজন তবুও স্থিতি পেলো না পুঁজিবাজার

মহা আয়োজন তবুও স্থিতি পেলো না পুঁজিবাজার

কথায় আছে— কাজীর গরু কেতাবে আছে, গোয়ালে নেই। ঠিক তেমনটাই হয়েছে দেশের পুঁজিবাজারে। পুঁজিবাজার উন্নয়নে সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) টেক্স হলিডে থেকে শুরু করে নানা আয়োজন করেও ঠেকাতো পারলো না পুঁজিবাজারের দরপতন। আস্থা ফেরেনি সাধারণ বিনিয়োগকারীর। একে একে পথে বসেছেন লাখ লাখ বিনিয়োগকারী। সেই সঙ্গে গত সাত বছরের আইপিও তালিকাভুক্তি নিয়ে কমিশন চান কিছু স্ট্রেকহোল্ডারা। আর কমিশন গঠনের দাবির যথার্থ অভিমত দিয়েছেন অর্থনীতিবিদদের।   

পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আস্থা রাখতে বলছেন অর্থমন্ত্রী কিন্তু আস্থায় কি অর্থ ফিরবে? আর এতেই কি পুঁজিবাজারের অস্থিরতা কেটে যাবে। তার জন্য প্রয়োজন কার্যকর পদক্ষেপ। বিএসইসির সবজান্তা শমসেরের মতো একগুয়েমি সিদ্ধান্তের কারণে পুঁজিবাজারের এই পরিণতি। তার প্রমাণ মিললো মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এর স্মল ক্যাপ মার্কেটের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সংসদ সদস্য ও পুঁজিবাজারের একটি ব্রোকারেজ হাউজের মালিক কাজী ফিরোজ রশীদের কথায়।

তিনি বলেছেন, দুর্বল পচা কোম্পানি বাজারে তালিকাভুক্ত করেছে বিএসইসি। 

গত সাত বছরে অনেক পচা কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে যেসব কোম্পানির আর্থিক অবস্থা খুবই শোচনীয় ছিল। ফুলিয়ে ফাপিয়ে দেখানো হয়েছে মুনাফা। যার কারণে বাজারে তালিকাভুক্তির কিছু দিনের মাথায় কোম্পানির আসল চিত্র ফুঁটে উঠেছে। এখন সময় এসেছে কারা এসব কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে তাদের চিহ্নিত করা। পাশাপাশি বিএসইসির বর্তমান চেয়ারম্যান ড. খাইরুল হোসেন গত ৭ বছরে যেসব কোম্পানি তালিকাভুক্তির অনুমোদন দিয়েছেন এসব বিষয়ে খতিয়ে দেখার জন্য একটি কমিশন গঠনেরও দাবি জানিয়েছেন তিনি।

অর্থনীতিবিদরা অভিমক প্রকাশ করে বলছেন, পুঁজিবাজারের স্থিতিশীলতা চাইলে প্লেসমেন্ট বাণিজ্য বন্ধ করতে হবে। স্পন্সর শেয়ার হোল্ডারদের শেয়ার বিক্রি বন্ধ করতে হবে। এছাড়া এই কমিশন বন্ডের ক্ষেত্রে ফান্ডের ইউনিট স্টক ডিভিডেন্ডের বিধান চালু করে এতে বন্ড মার্কেটও প্রায় ধ্বংসের চোরবালিতে দাঁড়িয়ে আছে। ফোড় বন্ধ না করে যেমন পাতিলে পানি ধরে রাখা যায় না, তেমনি পুঁজিবাজারকে স্থিতিশীল করতে এসব অনিয়মের ফাঁক-ফোঁকর বন্ধ করতে হবে। এছাড়া গত কয়েক বছরে এই কমিশন এমন অনেক কোম্পানি তালিকাভুক্ত করেছে যারা আসলে পুঁজিবাজারে আসার যোগ্যই না। এছাড়া শেয়ারদর অতিমূল্যায়নের বিষয়টি তো রইলোই। গত তিন মাসে কি পরিমাণে প্লেসমেন্ট শেয়ার ও উদ্যোক্তাদের শেয়ার বিক্রি হয়েছে তা প্রকাশ হলেই বের হয়ে যাবে কারা কি করছেন বলে জানান অর্থনীতিবিদরা।

● আইপিও ইস্যুতে কমিশন গঠনের দাবি ●

বিএসইসি সূত্রে জানা গেছে, পুঁজিবাজারের টানা দরপতনে বিব্রত সরকার। এসব বিষয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। দিয়েছেন প্রয়োজনীয় নির্দেশনা। সার্বক্ষণিক রয়েছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বার বার তিনি বিনিয়োগকারীদের হতাশ না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আসলে এতে কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। তারই প্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) বিএসইসির কমিশন সভায় মাথা ব্যাথার কারণে মাথা কেটে ফেলার থিউরি অনুসরণ করছে। দুর্বল কোম্পানির অনুমোদন বন্ধের পরিবর্তে নতুন কোম্পানির তালিকাভুক্তির আবেদন গ্রহণই সাময়িক বন্ধ করে দিয়েছে বিএসইসি। 

এ সব বিষয় নিয়ে কথা হয় পুঁজিবাজার বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু আহমেদের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, গত তিন মাসে কি পরিমাণে প্লেসমেন্ট শেয়ার ও স্পন্সর শেয়ার বিক্রি হয়েছে তা বের করলেই বোঝা যাবে কি পরিমাণে টাকা পুঁজিবাজার থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া আইপিও তালিকাভুক্তি নিয়ে অর্থমন্ত্রী বরাবরে যে বিচারিক কমিশন গঠনের যে দাবি জানানো হয়েছে তার সঙ্গে আমি একমত বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ। 

মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) কথা হয় একটি সিকিউরিটিজ হাউসের এমডির সঙ্গে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি জাগরণকে বলেন, পুঁজিবাজারের এই পরিস্থিতির জন্য এই বর্তমান কমিশনই দায়ী। বিনিয়োগকারী থেকে স্ট্রেকহোল্ডার সবাই চান এই কমিশনের পদত্যাগ। বিনিয়োগকারীরা হয়তো বলতে পারছেন না।  স্ট্রেকহোল্ডাররাও ২সিসি আইন প্রয়োগসহ নানা হয়রানির কথা ভেবে মুখ খুলছেন না। তবুও কাজী ফিরোজ রশীদ আজ বলে গেছেন। আরও অনেক বিষয় আছে। বিএসইসির বর্তমান কমিশন সব সময় মনে করে তারা যা করেছে সবই সঠিক। এটা তো হতে পারে না। এখন চাপের মুখে এসে শুধু বুলি আওড়াচ্ছেন তারা। 

এআই/এসএমএম