• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৬, ২০১৯, ১০:০১ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৬, ২০১৯, ১০:০১ পিএম

৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকা   

৯ মাসে বাণিজ্য ঘাটতি ১ লাখ কোটি টাকা   

চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে দেশের পণ্য বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ১ হাজার ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার। যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা। এ ছাড়া বহির্বিশ্বের লেনদেনে ঋণাত্মক অবস্থায় রয়েছে বাংলাদেশ। 

কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের ৯ মাস শেষে ইপিজেডসহ (রফতানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা) রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৩ হাজার ৪৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় হয়েছে ৪ হাজার ২৩৬ কোটি ৭০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে মার্চ মাস শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ১৯২ কোটি ৮০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ১ লাখ ৭৯১ হাজার কোটি টাকা (বিনিময় হার ৮৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে) ছাড়িয়েছে। 

গত অর্থবছরের একই সময়ে বাণিজ্যে ঘাটতি ছিল আরও বেশি। ২০১৭-১৮ অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে বাণিজ্য ঘটতি ছিল ১ হাজার ৩১৪ কোটি ৩০ লাখ ডলার।

সূত্র আরও জানায়, সেবাখাতে বেতনভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করা হয়েছে ৭৭২ কোটি ডলার। এর বিপরীতে বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ৫০৪ কোটি ডলার। এ হিসাবে সেবাখাতে দেশে ঘাটতি ২৬৮ কোটি ডলার। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ২৫৮ কোটি ডলার। আর চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে রেমিট্যান্স এসেছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি ডলার। যার প্রবৃদ্ধি ১০ দশমিক ৩০ শতাংশ। 

পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে যে পরিমাণ ঘাটতি হয়েছে তা প্রবাসীদের পাঠানো রেমিট্যান্সের চেয়ে অনেক বেশি। এ কারণে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব ঋণাত্মক (-) রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ ঋণাত্মক কিছুটা কমেছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৪২৩ কোটি ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৬৪৮ কোটি ডলার।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমদানি ব্যয়ের তুলনায় রফতানি আয় কম। ফলে বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাড়ছে বাণিজ্য ঘাটতি। বৈদেশিক বাণিজ্যের এ অবস্থা অর্থনীতির জন্য বড় উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর যে হারে আমদানি হচ্ছে সেই হারে রফতানি আয় হয়নি। যার ফলে বাণিজ্য ঘাটতি হচ্ছে। এখন এটি কমাতে হলে রফতানি বাড়াতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। তবে দেশে বড় বড় মেগা প্রজেক্ট হচ্ছে। নতুন নতুন শিল্প প্রতিষ্ঠান হচ্ছে এবং আগামীতে হবে। তার মানে আমদানি বাড়বেই, এটি কমানোর কোনো উপায় নেই। তবে সঠিক নিয়মে আমদানি হলে ব্যয় অনেকটা কমে আসবে। 

সূত্র জানায়, আমদানির চাপের কারণে ডলারের দাম বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে কয়েক দফা ডলারের দাম বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বছর শুরুর দিন আন্তঃব্যাংক রেটে ডলারের দাম ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। এখন ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৫০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ২৮৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার, এরমধ্যে নিট বিদেশি বিনিয়োগ ১৩৩ কোটি ৯০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের চেয়ে এফডিআই বেড়েছে ৩৯ দশমিক ২১ শতাংশ, নিট বেড়েছে ২১ দশমিক ৭৩ শতাংশ। আলোচ্য সময়ে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ অর্ধেকের নিচে নেমে এসেছে। অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ১৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে একই সময়ে ছিল ৩০ কোটি ৯০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বর্তমানে বেশকিছু মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এরমধ্যে পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অন্যতম। এ সব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি করে জোগান দিতে হচ্ছে। এ ছাড়া রফতানি বাণিজ্য ও রেমিট্যান্স কিছুটা ইতিবাচক হলেও তা আমদানি ব্যয়ের তুলনায় অনেক কম। এতে করে বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে। যার ফলও দেখা গেছে। ইতোমধ্যে ডলারের তুলনায় টাকা অনেক দুর্বল হয়েছে। কমছে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। আমদানি ব্যয় বেড়ে এখন মূল্যস্ফীতির ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। 

এআই/এসএমএম