• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ১৭, ২০১৯, ১০:০৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ১৮, ২০১৯, ০৪:০৮ এএম

ঋণ খেলাপিদের বিশেষ সুবিধা

কার লাভ কার ক্ষতি

কার লাভ কার ক্ষতি

ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে নতুন করে সুবিধা দিয়েছে সরকার। এতে খেলাপিরা লাভবান হলেও ব্যাংক খাতের সমস্যা আরও জটিল আকার ধারণ করবে। আর আজকের সমাধান আগামী দিনের সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

তারা বলছেন, ব্যাংকিং কমিশন গঠন না করে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনতে যেসব সুবিধা দেয়া হচ্ছে। তাতে করে হিতে বিপরীত হতে পারে। আর আজ যেসব পদক্ষেপকে সমাধান হিসেবে দেখা হচ্ছে, পরবর্তীতে এই  সমাধানই একদিন সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। এছাড়া যারা ব্যাংকের ভালো ঋণগ্রহীতা তাদের কাছে একটি নেতিবাচক ম্যাসেজ যাবে। ব্যাংক খাতের সংস্কার না করে ঋণ খেলাপিদের এমন সুযোগ ব্যাংক খাতের সুশাসন নিশ্চিতের পথে অন্তরায়। এতে উল্টো লাভবান হবেন ঋণ খেলাপিরা। আর ঝুঁকির মধ্যে পড়বে দেশের অর্থনীতি।

এ বিষয়ে কথা হয় সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) বিশেষ ফেলো ড. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে। তিনি দৈনিক জাগরণকে বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া এই বিশেষ সুবিধার কারণে উল্টো লাভবান হবেন ঋণ খেলাপিরা। আর ক্ষতি হবে ব্যাংক খাতের। সেই সঙ্গে ঝুঁকিতে পড়বে দেশের অর্থনীতি। খেলাপিদের দেয়া বিশেষ এই সুবিধায় সাময়িক তারল্য সঙ্কট কাটলেও দীর্ঘ মেয়াদি সমস্যায় পড়বে ব্যাংক খাত। আজকের এই সমাধান আগামী দিনের সমস্যায় রূপ নেবে। 

সিপিডির এই সম্মানিত ফেলো আরও বলেন, আমরা সিপিডির পক্ষ থেকে ব্যাংকিং কমিশন গঠনের কথা বলেছি। যারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যাংকের অর্থ ফেরত দিচ্ছে না তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংককে এখন সিদ্ধান্ত নিতে কিসে ব্যাংক খাত ঠিকে থাকবে আর কি ধরনের পদক্ষেপে ব্যাংক খাতের ক্ষতি হবে।

বৃহস্পতিবার (১৬ মে) কেন্দ্রীয় ব্যাংক ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের মাধ্যমে ঋণখেলাপিদের নিয়মিত হওয়ার সুযোগ করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই ডাউন পেমেন্ট দিয়েই ঋণ পুনঃতফসিল করতে পারবেন খেলাপিরা। ঋণ পুনঃতফসিল হওয়া ঋণ পরিশোধে তার সময় পাবেন পরবর্তী ১০ বছর। এ ক্ষেত্রে প্রথম এক বছর কোনও কিস্তি দিতে হবে না গ্রাহকদের। 

সার্কুলারে বলা হয়, ‘‘বিভিন্ন নিয়ন্ত্রণ বহির্ভূত কারণে ব্যবসায়ী/শিল্প উদ্যোক্তাগণ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যাংকের ঋণ অনেক ক্ষেত্রেই নিয়মিতভাবে পরিশোধিত হচ্ছে না এবং সংশ্লিষ্ট ঋণ বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত হয়ে পড়ায় ঋণ বিতরণ ও আদায় কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে উৎপাদনশীল খাতসহ অন্যান্য খাতে স্বাভাবিক ঋণ প্রবাহ বজায় রাখাসহ ব্যাংকিং খাতের বিরূপভাবে শ্রেণিকৃত ঋণ নিয়মিতভাবে আদায়ের লক্ষ্যে কতিপয় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।’’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক তত্বাবাধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, ব্যাংক খাতের ক্ষতি হচ্ছে আর লাভ হচ্ছে ঋণ খেলাপিদের। ব্যাংক খাতের এই পদক্ষেপ কার্যকর হবে না। বরং ব্যাংক খাতে আরও সমস্যা সৃষ্টি করবে। খেলাপি ঋণের পরিমাণ আরও বাড়বে। আর এই পদক্ষেপের ফলে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের কাছে নেতিবাচক ম্যাসেজ যাবে বলে মন্তব্য করেন এই অর্থনীতিদ।

নাম প্রকাশে একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ঋণ খেলাপিরা অর্থ পরিশোধে সময়ও পাচ্ছেন এবং ঋণের সুদও কম দিতে হচ্ছে। আর যারা নিয়মিত ব্যাংকের ঋণ পরিশোধ করে আসছেন তাদের ব্যাংকের সুদও বেশি দিতে হচ্ছে সুবিধাও পাবেন কম। এতে ব্যাংকের অর্থ সময়মতো পরিশোধ করার চাইতে আটকে রাখাই ভালো। যারা ব্যাংকে খেলাপি হচ্ছেন তারাই ভালো আছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। এদিকে খেলাপি ঋণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে গবেষণার মাধ্যমে। কিন্তু তা না করে ব্যবসায়ীদের চাপে খেলাপি ঋণের সংজ্ঞা পরিবর্তন করাতে ব্যাংকিং খাতের ভবিষ্যৎ অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ার আশঙ্কা অর্থনীতিবিদের।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্বব্যাংকের বাংলাদেশ অফিসের প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন দৈনিক জাগরণকে বলেন, ঋণ খেলাপিদের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের দেয়া বিশেষ সুবিধার ফলে ভালো ঋণ গ্রহীতাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই সুবিধা দেয়ার ফলে সবচেয়ে বেশি লাভবান হবেন ঋণ খেলাপিরা।

এআই/টিএফ/এসএমএম