• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: মে ২১, ২০১৯, ০৬:৫৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : মে ২১, ২০১৯, ০৬:৫৫ পিএম

রূপালী ও বেসিক ব্যাংকে অডিট আপত্তি

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ

জড়িতদের আইনের আওতায় আনার সুপারিশ


অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীন রূপালী ব্যাংক ও বেসিক ব্যাংকে মাত্র এক অর্থ বছরেই প্রায় ২৩৯ কোটি টাকার অডিট আপত্তি ধরা পড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ১১৭ কোটি টাকা শর্তানুযায়ী মেয়াদী ঋণ ও ফোর্সড লোন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় কথা অডিট আপত্তিতে ওঠে এসেছে। এসব অডিট আপত্তির সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তাদের আইনের আওতায় আনার পাশাপাশি দ্রুত শেষ করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি।

মঙ্গলবার সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত সরকারি হিসাব সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির চতুর্থ বৈঠকে এই অডিট আপত্তির বিষয়ে আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী  বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন। বৈঠকে কমিটির সদস্য ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর, মো. শহীদুজ্জামান সরকার, জহিরুল হক ভূঁঞা মোহন, মনজুর হোসেন, আহসানুল ইসলাম (টিটু) , মুস্তফা লুৎফুল্লাহ, ওয়াসিকা আয়েশা খান এবং মো. জাহিদুর রহমান অংশ নেন।

বৈঠকে ২০১২-১৩ অর্থ বছরের হিসাব সম্পর্কিত মহা হিসাব-নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রকের  বার্ষিক অডিট রিপোর্ট ২০১৩-১৪ এর অডিট আপত্তির অনুচ্ছেদ ১,২,৩,৪,৫,১২ ও ১৪ নিয়ে আলোচনা হয় । 

কমিটির সভাপতি মো. রুস্তম আলী ফরাজী  বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের বলেন, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক দুটির অবস্থা কত নাজুক তা অডিট আপত্তি থেকে বোঝা যায়। এর সঙ্গে জড়িতদের সরকার বিচারের আওতায় আনতে পারে। এছাড়া অডিট আপত্তিগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করে কমিটিকে জানানোর সুপারিশ করা হয়েছে। 

জানা যায়, বৈঠকে সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘন করে কর্মকর্তা / কর্মচারীরা আয়কর ব্যাংকের তহবিল হতে পরিশোধ করায় ব্যাংকের আর্থিক ক্ষতি দুই কোটি ৩২ লাখ ৬৮ হাজার ৫১  টাকা। কমিটি এটাকে ব্যক্তিগত দায় হিসেবে চিহ্নিত করে এবং দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি অনধিক ৯০ দিনের মধ্যে অনাদায়ী টাকা আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে রপ্তানিতে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠান মেসার্স ডিভাইন নীট ওয়্যার লি. এর অনুকূলে সৃষ্ট ফোর্সড লোনের মেয়াদোত্তীর্ণ ২২ কোটি ৭৯ লাখ ৪ শত ৭৯  টাকা অনাদায়ী মর্মে উত্থাপিত অডিট আপত্তি ধরা পরে। কমিটি ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ প্রতিষ্ঠানকে ঋণ না দিয়ে প্রতিষ্ঠানের সাথে জড়িত ব্যক্তির নামে ঋণ প্রদানকে চরম অন্যায় হিসেবে আখ্যায়িত করে। যারা এ ঋণ  প্রদানের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ দায়েরকৃত মামলা তদারকি করার সুপারিশ করা হয়।

চূড়ান্ত অনুমোদন গ্রহণ ব্যতিত আর্থিক ক্ষমতা বহির্ভূতভাবে প্রকল্প মেয়াদী ঋণ বিতরণ ও কিস্তি অনাদায়ী, সিসি (হাইপো) ও এলটিআর ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ্  হওয়ায় কূ-ঋণে পরিণত এবং মেয়াদোত্তীর্ণ পিসি, এলসি, বিটুবি বিল ও ফোরসড লোনসহ ৫৮ কোটি ৪ লাখ টাকা আদায় অনিশ্চিত হওয়ায় ক্ষতি হয়েছে বলে বৈঠকে জানানো হয়। কমিটি পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করাকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সাথে জড়িত তাদের সকলকে দায়ী রাখার বিধান চালু করার পাশাপাশি বকেয়া ঋণের উপর ৯% হারে সুদ আরোপ করে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে ক্রয়কৃত রপ্তানি বিল ও জামানত বিহীন ব্যাংক ওডি ঋণ মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার দীর্ঘদিন পরও আদায় না হওয়ায় ব্যাংকের ২৬ কোটি ৫৮ লক্ষ ৬১ হাজার ৪শত ৫৯ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। 

সীমাতিরিক্ত চলতি মূলধন সিসি হাইপো ঋণবিতরণ, ডাউন পেমেন্ট ব্যতিত পুনঃতফসিলিকরণ এবং মঞ্জুরীপত্রের শর্তানুয়ায়ী মেয়াদী ঋণ ও ফোর্সড লোন আদায়ে ব্যর্থ হওয়ায় ব্যাংক ১১৭ কোটি ৩৭ লাখ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। 

এ অডিট আপত্তির প্রেক্ষিতে কমিটি পর্যাপ্ত সহায়ক জামানত গ্রহণ না করাকে অনিয়ম হিসেবে চিহ্নিত করে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সাথে জড়িত তাদের সকলকে দায়ী রাখার বিধান চালু করার পাশাপাশি বকেয়া ঋণের উপর ৯% হারে সুদ আরোপ এবং দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহার করে ঋণ পুনঃতফসিলকরণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে আরো জানানো হয়, সঠিক ঋণ গ্রহীতা নির্বাচন না করে টিওডি ঋণ বিতরণ করায় অনাদায়ী অর্থ কু-ঋণে পরিণত হওয়ায় ব্যাংকের ক্ষতি ১ কোটি ৯৮ লক্ষ ৪৯ হাজার ১শত ৬৩ টাকা। 

এ অনাদায়ী টাকা অনধিক দুই মাসের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে কমিটি।

বৈঠকে মেসার্স সিলেট প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজকে জামানতের দ্বিগুণ পরিমাণ ঋণ বিতরণ করায় মঞ্জুরকৃত ঋণের অর্থ পরিশোধ না করায় ব্যাংকের ১০ কোটি ১৭ লাখ ২১ হাজার ৯৫ টাকা ক্ষতি হয়েছে বলে অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়। 

কমিটি দায়েরকৃত মামলার তদারকি জোরদার, ব্যাংকের যারা ঋণ প্রদানের সাথে জড়িত তাদের সকলকে দায়ী রাখার বিধান চালু করার পাশাপাশি অনাদায়ী টাকা অনধিক দুই মাসের মধ্যে আদায়ের ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে।

বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, সংশ্লিষ্ট ব্যাংক, অডিট অফিস এবং বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

এইচএস/আরআই