• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুন ১৩, ২০১৯, ১১:৫৯ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুন ১৩, ২০১৯, ১১:৫৯ এএম

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ

রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই বড় চ্যালেঞ্জ


চলতি বছরের রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রার ঘাটতি প্রায় ৫০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। তবুও এবারের বাজেটে লক্ষ্যমাত্রা আরো বাড়িয়ে ৩ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। শুধুমাত্র ভ্যাট আইনের উপর নির্ভর করে এত বড় লক্ষ্যমাত্রা অর্জনই সরকারের বড় চ্যালেঞ্জ বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরা।

অর্থনীতিবিদরা বলছেন, চলতি অর্থবছরের শুরু থেকেই এনবিআর রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য অর্জন করতে পারছে না। ফলে নতুন বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য প্রান্তিক পর্যায়ে রাজস্ব অফিস নিয়ে যেতে হবে।

তাদের মতে, রাজস্ব আহরণে সরকারের তিনটি বড় সমস্যা রয়েছে। রাজস্ব আহরণের আওতা বাড়াতে হবে। সবাইকে করের আওতায় আনতে হবে। ব্যাংক হিসাবে মানুষের টাকা জমছে। এই অর্থ করের আওতায় আনতে হবে। কর অবকাশে শৃঙ্খলা আনতে হবে। 

জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে আসছে বাজেটের মোট ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা, যা জিডিপির ১৮ দশমিক ১ শতাংশ। এবারের বাজেটে বড় আকারের ব্যয় মেটাতে মোট রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭৭ হাজার ৮১০ কোটি টাকা। এটি জিডিপির ১৩ দশমিক ১ শতাংশের সমান। বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য ছিলো ৩ লাখ ৩৯ হাজার ২৮০ কোটি টাকা। নতুন বাজেটে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৩৮ হাজার ৫৩০ কোটি টাকা বেশি ধরা হয়েছে। ফলে বড় আকারের বাজেট বাস্তবায়নে রাজস্ব আদায়ের ওপর জোর দেওয়া হলেও নতুন বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য পূরণই বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

এজন্য আসছে বাজেটে রাজস্ব ব্যবস্থাপনায় বড় সংস্কারে কথা উল্লেখ থাকবে বলে জানা গেছে। তবে করের পরিমাণ না বাড়িয়ে করের আওতা বাড়ানোর দিকে মনোযোগ দেবে সরকার।

এর অংশ হিসেবে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর করা হবে নতুন ভ্যাট আইন। রাজস্ব আদায় বাড়াতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) আরও শক্তিশালী করা হবে। আউটসোর্সিং করে বাড়ানো হবে এর জনবল।

রাজধানীর ভবন মালিকদের থেকে কর আদায় করার ঘোষণা থাকবে নতুন বাজেটে। ১০ হাজার বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীকে নিয়োগ দিয়ে ছয় মাসে নতুন ৮৫ লাখ করদাতা খুঁজে বের করা হবে। জনগণকে রাখা হবে ভ্যাট ও করের চাপমুক্ত। কর্পোরেট করসহ ক্ষেত্রবিশেষে কর হার কমানো হবে। তবে সাধারণ মানুষের করমুক্ত আয়ের সীমায় বড় পরিবর্তনের সম্ভাবনা নেই। অবশ্য আমদানি পর্যায়ে রাজস্ব আয় বাড়াতে দেশের সব বন্দরে বসানো হবে স্ক্যানার মেশিন।

এসব লক্ষ্য সামনে রেখেই নতুন অর্থবছরের বাজেটে এনবিআরকে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হচ্ছে। অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রতিবারই বাজেটের আয়-ব্যয়ের এই চিত্র দেখা গেলেও পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। রাজস্ব খাতে বড় ধরনের সংস্কার ছাড়া রাজস্ব আদায়ে বড় লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব নয়। আর উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তা না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাজেট ঘাটতির ওপর চাপ বাড়বে।

এনবিআর সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে এনবিআরকে ২ লাখ ৯৬ হাজার ২০১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়। অর্থবছরের প্রথম নয় মাসে সংস্থাটি রাজস্ব আয় করেছে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৪৭৭ কোটি টাকা। অর্থাৎ জুলাই থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়ে রাজস্ব ঘাটতি রয়েছে ৫০ হাজার ৩৬৭ কোটি টাকা। লক্ষ্যমাত্রা পূরণের আর কোনো আশা না থাকায় চলতি অর্থবছরের সংশোধিত বাজেটে এনবিআরের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্য কমিয়ে ২ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা করা হচ্ছে। এ অবস্থায় নতুন অর্থবছরে সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়েও ৪৫ হাজার ৬০০ টাকা বাড়তি লক্ষ্যমাত্রা দেওয়া হয়েছে এনবিআরকে। ফলে নতুন বাজেটে রাজস্ব বাড়ানোর বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এজন্য প্রান্তিক পর্যায়ে রাজস্ব অফিস নিয়ে যাওয়া হবে।

এ প্রসঙ্গে পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের (পিআরআই) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, এই বাজেটের আকার বড়, কিন্তু মানে ছোট। এই বাজেটে জিডিপির ১৯ শতাংশ পূরণ হওয়ার কথা থাকলেও ১৭ শতাংশও পূরণ হবে না। বছর শেষে আমরা দেখবো, ৩ লাখ ৭৭ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আদায় হওয়ার কথা থাকলেও ২ লাখ ৫০ হাজার কোটি টাকাও আদায় হবে না। এটাই হচ্ছে বাস্তবতা।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আসছে বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) নিয়ন্ত্রিত করের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ২৫ হাজার ৬০০ কোটি টাকা। এনবিআর বহির্ভূত করের পরিমাণ ধরা হচ্ছে ১৪ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। আর কর ছাড়া প্রাপ্তি ধরা হচ্ছে ৩৭ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। এছাড়া বৈদেশিক অনুদান ধরা হচ্ছে চার হাজার ১৬৮ কোটি টাকা। বাজেটে পরিচালন ব্যয় ধরা হচ্ছে ৩ লাখ ১০ হাজার ২৬২ কোটি টাকা। উন্নয়ন ব্যয় ধরা হচ্ছে দুই লাখ ১১ হাজার ৬৮৩ কোটি টাকা। এর মধ্যে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) আকার দুই লাখ দুই হাজার ৭২১ কোটি টাকা। এডিপি এরই মধ্যে অনুমোদন করা হয়েছে।

সূত্র বলছে, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকিং খাত, পুঁজিবাজার, সঞ্চয়পত্রে সংস্কারের প্রস্তাব করা হলেও প্রতিবারই কিছু পরিবর্তন করা হয়। সেই ধারাবাহিকতায় এবারও কিছু পরিবর্তন করা হচ্ছে। এছাড়া বাজেটে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী পালনের প্রতিফলন থাকবে।

এআই/আরআই