• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ১০:৩২ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ১২:০১ পিএম

আতঙ্ক ব্যবসায়ীদের মাঝে

৫৮ কোটি টাকা পাওনা, উধাও চিনি ব্যবসায়ী

৫৮ কোটি টাকা পাওনা, উধাও চিনি ব্যবসায়ী


দীর্ঘদিন ধরে যৌথ ব্যবসা পরিচালনা করে আসলেও হঠাৎ করে নিখোঁজ চিনি ব্যবসায়ী দেলোয়ার হোসেন। এসএম টেডার্স নামে রাজধানী মৌলভীবাজারে ব্যবসা করতেন তিনি। আর এই প্রতিষ্ঠানের কাছে ব্যাংকসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের পাওনা ৫৮ কোটি টাকা। এ জন্য মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিতে প্রায় প্রতিদিনই ধর্ণা দিচ্ছেন পাওনাদাররা। এদের মধ্যে রয়েছেন মেঘনা গ্রুপ, বিসমিল্লাহ গ্রুপ থেকে দেশের অনেক চিনি ও তেল ব্যবসায়ীরা।

মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতি সূত্রে জানা গেছে, ব্যবসায়ী, উৎপাদক প্রতিষ্ঠান ও আমদানিকারকদের এখন এসএম ট্রেডার্সের কাছে ৪৪ কোটি ২৯ লাখ ৫৯ হাজার টাকা পাওনা। এছাড়া ব্যাংকের কাছে ঋণ আছে ১৪ কোটি টাকার বেশি। সবগুলো লেনদেনই হয়েছে দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষরের মাধ্যমে। পণ্য ক্রয়ের বিপরীতে যেসব চেক প্রদান করা হয়েছে সেগুলোর সবগুলোতেই রয়েছে দেলোয়ার হোসেনের স্বাক্ষর। আর এস এম ট্রেডার্সের পাওনাদারদের মধ্যে মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রির ১২ কোটি টাকা, বিসমিল্লাহ্ গ্রুপের ১০ কোটি ৪৩ লাখ টাকা, আনিকা ট্রেডার্সের ৩ কোটি ৮৩ লাখ টাকা, মেক্সিমকো ট্রেডিংয়ের ৩ কোটি ১ লাখ, মেসার্স মনির আহমেদ সওদাগরের ২ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, এস বি চৌধুরীর ২ কোটি ৪৬ লাখ, রহমত এন্টারপ্রাইজের ১ কোটি ৯৬ লাখ, এ এফ ট্রেডার্সের ১ কোটি ৫৪ লাখ, সোহেল এন্টারপ্রাইজের ১ কোটি ২৪ লাখ টাকা, চিটাগং ট্রেডিং এর ৬৫ লাখ টাকা, মেসার্স রশিদ ট্রেডার্সের ৬২ লাখ টাকা, মেসার্স শ্যামল স্টোরের প্রায় ৬২ লাখ টাকা, মেসার্স আর এম এন্টারপ্রাইজের প্রায় ৬২ লাখ টাকা, মো. এছহাক আলী মোল্লার ৫৯ লাখ টাকা, মেসার্স সুনীল শুরেখরের ৫৭ লাখ টাকা, মেসার্স শুম্ভু নাথ সাহার ৫৪ লাখ টাকা, মেসার্স বশির ট্রেডার্সের ৩৫ লাখ টাকা, মো. হারুনের ২৩ লাখ টাকা এবং মেসার্স ঐশী এন্টারপ্রাইজের ২৩ লাখ টাকা পাওনা। 

সমিতি সূত্রে জানা গেছে, এসএম ট্রেডার্সের ব্যানারে আলহাজ্ব শের মোহাম্মদ এবং দেলোয়ার হোসেন যৌথভাবে তেল চিনির ব্যবসা করতেন। দুজন অংশীদার হলেও দেলোয়ার হোসেনই ব্যবসার লেনদেনের বিষয়গুলো দেখভাল করতেন। যাকে গত ৩ মার্চ থেকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। পাওনাদারদের দাবি তিনি নিজে নিজে আত্মগোপনে গেছেন। পাওনা টাকা না দিতেই তিনি এ পন্থা বেছে নিয়েছেন বলেও দাবি উঠেছে। ৩০ বছর ধরে বিশ্বাসের সঙ্গে ব্যবসা করে দেলোয়ার হোসেনের টাকা মেরে দেওয়ায় ঘটনায় ব্যবসায়ীদের মধ্যেও আতঙ্ক তৈরি হয়েছে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতির ট্রেজারার মোহাম্মদ আলী বলেন, আমরা জানতে পেরেছি দেলোয়ার হোসেন আত্মগোপনে রয়েছেন। তার কোন সমস্যা হয়নি। টাকাগুলো মেরে দেয়ার পাঁয়তারা করছেন তিনি। 

জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেন নিখোঁজের প্রায় ৪ মাস পার হয়ে গেলেও দেলোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি। তাকে পাওয়া না গেলেও পাওনাদার ও ব্যবসায়ী সমিতি থেকে বিভিন্ন প্রকারে চাপ প্রয়োগ করা হয় তার অন্য ব্যবসায়িক অংশীদার আলহাজ্ব শের মোহাম্মদের উপর। জানা গেছে, দেলোয়ার হোসেনের পরিবার তার নিখোঁজের বিষয়ে থানায় কোন জিডি করেনি। তবে শের মোহাম্মদ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছেন। দেলোয়ার হোসেনের ব্যবসায়িক অংশীদার শের মোহাম্মদ বলেন, ৩০ বছরের বেশি সময়ের ব্যবসা। এখন তো সব শেষ। আমার ব্যবসা প্রায় বন্ধই। সে কেন এই ঘটনা ঘটালো তা আমিও বুঝতে পারছি না। বিশ্বাসটা নষ্ট হয়ে গেল। তার পরিবার থানায় যায়নি, আমিই পরে জিডি করেছি।

জানা গেছে, এসএম ট্রেডার্স বিভিন্ন ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে তার বিপরীতে চেক প্রদান করেন। অনেক প্রতিষ্ঠান থেকেই বাকিতে পণ্য নেয়া হয়েছিল। যাদেরকে কোন প্রকার চেক বা নগদ টাকাও দেওয়া হয়নি। কিন্তু এস এম ট্রেডার্সের কাছে পণ্য নিয়ে যারা চেক নিয়েছেন তারা ব্যাংকে গিয়ে দেখেন চেকের বিপরীতে ব্যাংকে টাকা নেই। বাকিতে যারা পণ্য বিক্রি করেছিল তারা অফিসে যোগাযোগ করে প্রথমে ভেবেছিল সাময়িক কোন সমস্যা হয়েছে। কিন্তু যখন অনেকদিন ধরেই মোবাইল ফোনে বা বাসায় গিয়েও দেলোয়ার হোসেনের কোন হদিস মিলছিল না তখন সবাই ব্যবসায়ী সমিতিতে লিখিত অভিযোগ জানাতে শুরু করে। এক পর্যায়ে সমিতির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যবসায়ী নেতারা মিলে এসএম ট্রেডার্সে তালাও লাগিয়ে দিয়েছিলেন। যদিও পরে আবার তা খুলে দেয়া হয়েছে। এসএম ট্রেডার্সের কাছে যারা টাকা পাওনা রয়েছে তাদের অনেকেই মামলা করেছেন। আবার অনেকে বিষয়টি সুরাহার জন্য মৌলভীবাজার ব্যবসায়ী সমিতিতে আবেদন করেছেন। 

সমিতির কাছে মেঘনা গ্রুপের করা আবেদনে বলা হয়েছে, তেল ও চিনি বাবদ প্রতিষ্ঠানটির ১২ কোটি টাকা পাওনা। এই পাওনার বিপরীতে চেক রয়েছে। যা ব্যাংক থেকে ফেরত দিয়ে দিয়েছে। এই টাকা উদ্ধারে সমিতির সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। মেঘনা গ্রুপের ট্রেডিং বিভাগের ডিজিএম মো. নাসির উদ্দিন বলেন, আমাদের চেক দিয়েছে। কিন্তু ব্যাংকে পর্যাপ্ত টাকা পাওয়া যায়নি। আমরা বিষয়টি নিয়ে মামলা করেছি। এ ঘটনায় দীর্ঘদিনের একটা বিশ্বাসের ব্যবসায়িক সম্পর্ক নষ্ট হলো এবং এখন থেকে ব্যবসার সময় আরো বেশি সতর্ক থাকার চিন্তা করতে হবে।

এআই/আরআই