• ঢাকা
  • বুধবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ৭, ২০১৯, ০৯:৪৯ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ৭, ২০১৯, ০৯:৪৯ পিএম

এনবিআরের বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি

২ বছরে রাজস্ব আদায় আড়াই হাজার কোটি টাকা

২ বছরে রাজস্ব আদায় আড়াই হাজার কোটি টাকা
নিষ্পত্তি ৩৪৫ মামলা

কর মামলার দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বিকল্প বিরোধ নিষ্পত্তি (এডিআর) প্রক্রিয়া ২০১২ সালে চালু করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় সাড়া না পেলেও গত দুই অর্থবছরে এডিআর পদ্ধতিতে ৩৪৫টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। আর এনবিআরের রাজস্ব আদায় হয়েছে ২ হাজার ৪১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা। এনবিআর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

সূত্র জানায়, ২০১৭-১৮ ও ২০১৮-১৯ অর্থবছরে চারজন মধ্যস্থতাকারীর মাধ্যমে এডিআর পদ্ধতিতে ২ হাজার ৪১২ কোটি ৬৩ লাখ টাকা আদায় হয়েছে। এর মধ্যে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা মো. তারিক হায়দারের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি ১ হাজার ৫১৬ কোটি ৭ লাখ ১৯ হাজার টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। তিনি মোট ১৩৯টি মামলা নিষ্পত্তি করেছেন। ফি হিসেবে তিনি নিয়েছেন ৫৩ লাখ টাকা। এছাড়া নিরীক্ষক মো. হুমায়ুন কবিরের মধ্যস্থতায় এসেছে ৭১৪ কোটি ৯৭ লাখ ৭৩ হাজার টাকা, এনবিআরের সাবেক কর্মকর্তা সৈয়দ মো. আমিনুল করিমের মধ্যস্থতায় ১৪৯ কোটি ৮৮ লাখ ৫৪ হাজার টাকা এবং মো. আলাউদ্দীনের মাধ্যমে ৩১ কোটি ৭০ লাখ টাকার রাজস্ব আদায় হয়েছে।

আইন অনুযায়ী, এডিআর পদ্ধতি হচ্ছে আদালতের বাইরে একজন মধ্যস্ততাকারী বা সহায়তাকারীর মাধ্যমে করদাতা ও এনবিআরের মধ্যকার মামলা আলোচনা ও সমঝোতার ভিত্তিতে নিষ্পত্তি করা হয়। এখানে মধ্যস্থতাকারী আইন অনুযায়ী জড়িত রাজস্বের উপর নির্ধারিত হারে ফি পাবেন। আর এ ফির ৫০ শতাংশ এনবিআর এবং ৫০ শতাংশ সংশ্লিষ্ট করদাতা বহন করবে। আইনটি ২০১২ সালের ২৩ ফেব্রুয়ারি গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে এনবিআর সদস্য (ট্যাক্স লিগ্যাল ও এনফোর্সমেন্ট) হাফিজ আহমেদ মুর্শেদ বলেন, আইন অনুযায়ী করদাতাদের এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করতে হয়। এমন সহজ সুযোগ দেয়ার পরও তারা না এলে আমাদের কিছু করার থাকে না। যারা রাজস্ব ফাঁকি দিচ্ছেন তারা আদালতে নিষ্পত্তি করতে বেশি উৎসাহী। যারা আদালতে সুবিধা করতে পারেন না তারাই এডিআর পদ্ধতিতে আসছেন। এডিআর পদ্ধতিতে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে।

সূত্র আরো জানায়, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিকল্প প্রক্রিয়ায় নিষ্পত্তি করার জন্য এনবিআর ২০০টি মামলার আবেদনের লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করে। আবেদন পড়ে ২৩১টি। এতে জড়িত মোট রাজস্বের পরিমাণ ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। এর মধ্যে পূর্ণ নিষ্পত্তি হয়েছে ১২৪টি মামলা। আর আংশিক নিষ্পত্তি হয়েছে ১৮টি। ৪৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়নি এবং ৪১টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এনবিআরের লক্ষমাত্রা ছিল ১৯০টি মামলা আবেদনের। আবেদন এসেছিল ৩৬০টি। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্বের পরিমাণ ২ হাজার ৭০১ এক কোটি টাকা। এর মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে ২২১টির, আংশিক নিষ্পত্তি ৮টি এবং ১৩১টি মামলা নিষ্পত্তি হয়নি। তবে লক্ষমাত্রা বাড়লেও এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির আবেদনের সংখ্যা কমছে। এর সঙ্গে জড়িত রাজস্ব আদায়ের পরিমাণও কমছে।

প্রসঙ্গত, আয়কর, মূল্য সংযোজন কর (মূসক) ও শুল্ক খাতে প্রায় ৩২ হাজার মামলায় ৫০ হাজার কোটি টাকার বেশি রাজস্ব বকেয়া পড়ে আছে এনবিআরের। আদালতের দীর্ঘসূত্রতার কারণে বছরের পর বছর অতিক্রান্ত হলেও মামলা নিষ্পত্তি না হওয়ায় রাজস্ব আহরণ করতে পারছে না সংস্থাটি। তাই আদালতের বাইরে গিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মামলা নিষ্পত্তি করতে ২০১২ সালে এডিআর গঠন করে এনবিআর।

এডিআর পদ্ধতিতে মামলা নিষ্পত্তির আবেদন করেছে এমন প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য- চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ, এশিয়ান পেইন্টস (বাংলাদেশ) লিমিটেড, ল্যাবএইড মেডিক্যাল সেন্টার গুলশান লিমিটেড, ইটাফিল (বাংলাদেশ) লিমিটেড, মাইডাস ফাইন্যান্সিং লিমিটেড, ইটাফিল এক্সেসরিজ লিমিটেড, এইচ পি ক্যামিকেলস লিমিটেড ও মৌসুমী ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড। 

এডিআরের দায়িত্বে থাকা এক কর্মকর্তা দৈনিক জাগরণকে বলেন, আদালতের বাইরে গিয়ে মামলা নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেয়া হলেও ব্যবসায়ীদের আগ্রহ না থাকায় তা খুব বেশি কার্যকর হয়নি। এটি সচল করতে এনবিআর অনেক উদ্যোগ নিয়েছে। সাবেক একজন সদস্যকে নিয়ে নিরপেক্ষ সেল গঠন করা হয়েছে।

এআই/ এফসি

আরও পড়ুন