• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল, ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৪, ২০১৯, ০৮:২৭ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৪, ২০১৯, ১০:১৭ এএম

অনিয়মে ডুবছে পানগাঁও পর্ব-১

কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানিতে রাজস্ব আদায় অর্ধেক

কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানিতে রাজস্ব আদায় অর্ধেক
পানগাঁও বন্দর- ফাইল ছবি

অত্যাধুনিক সরঞ্জাম ও অবকাঠামো সুবিধা থাকার পরও লাভজনক হচ্ছে না পানগাঁও বন্দর। ঢাকায় সহজে নৌপথে পণ্য পরিবহনের লক্ষ্যে কেরানীগঞ্জের টার্মিনালটি নির্মাণ করা হলেও নানা অনিয়মের কারণে লাভজনক হচ্ছে না। গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের চেয়ে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে শুল্ক আদায় হয়েছে ৩০০ কোটি টাকা কম। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের দেয়া শুল্ক আদায়ের টার্গেট বাস্তবায়ন হয়েছে ৩৪ শতাংশ। প্রায় ৭০০ কোটি টাকার বন্দরটি মুখ থুবড়ে পড়েছে।

শুল্ক আদায় কম হওয়ার কারণ সম্পর্কে সংশ্লিষ্টরা জানান, এই টার্মিনালে আমদানিকৃত পণ্যের নাম, বিবরণ, গুণগতমান, মূল্য, এইচ এস কোড ইত্যাদিতে মিথ্যা ঘোষণা দেয়ার ঘটনা ঘটছে অহরহ। এক্ষেত্রে সহযোগিতা করছেন শুল্ক কর্মকর্তারা। কর্মকর্তারা সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টদের কাছ থেকে বাড়তি আর্থিক সুবিধা আদায় করে বেশি শুল্কের পণ্যকে কম শুল্কের পণ্য দেখিয়ে শুল্কায়ন করছে। এক্ষেত্রে যেসকল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে শুল্ক কর্মকর্তাদের বোঝাপড়া হচ্ছে না তাদের পণ্য খালাসে অতিরিক্ত সময়ক্ষেপন করা হচ্ছে। ফলে তাদের পোর্টের ভাড়া বাবদ অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় এবং ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে।

পাঁনগাও আইসিডির এসব অনিয়ম ও কন্টেইনার আটকের অভিযোগ পুরনো। দীর্ঘদিন ধরে পোর্টে প্রায় ৩০০ কন্টেইনার শুল্কায়নের জন্য আটকে আছে এমন অভিযোগের তদন্তের জন্য দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সম্প্রতি জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-কে নির্দেশনা দেয়। এর তদন্ত প্রতিবেদন ১৫ দিনের মধ্যে দুদকের কাছে পাঠাতে অনুরোধ করা হয়। 

অভিযোগ রয়েছে, কিছু কাস্টমস কর্মকর্তার হয়রানির কারণে বছর বছর এই অত্যাধুনিক এই টার্মিনালে পণ্য খালাস ও কন্টেইনার আমদানির পরিমাণ কমেছে।

জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, এক অর্থবছরের ব্যবধানে কন্টেইনার আমদানি কমেছে ২৯৯টি। যেখানে ২০১৬-১৭ অর্থবছরের পানগাঁও পোর্টে কন্টেইনার এসেছে ১ হাজার ২২৩টি আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এসেছে মাত্র ৯২৪ কন্টেইনার পণ্য। আর এই কারণে রাজস্ব আদায়ে দেখা দিয়েছে চরম বিপর্যয়। এদিকে, ২০১৭-১৮ অর্থবছরের এনবিআরের বেঁধে দেয়া লক্ষ্যমাত্রা ৯৮০ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে ৮৬০ কোটি টাকা। আর সদ্যবিদায়ী অর্থবছর অর্থাৎ ২০১৮-১৯ অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১ হাজার ১০২ কোটি টাকার মধ্যে আদায় হয়েছে মাত্র ৫৬০ কোটি টাকা। কাস্টমস কর্মকর্তাদের হয়রানির কারণে রাজস্ব আদায় অর্ধেকে নেমে এসেছে।

পাঁনগাও টার্মিনাল সূত্র জানায়, গত বছর ব্যাটারি আমদানিকারক একটি প্রতিষ্ঠানের ফাইল আটকে রেখে পানগাওঁ কাস্টমসের উপ-কমিশনার সোনিয়া আক্তার ৩০ লাখ টাকা দাবি করেন। ফাইল আটকে থাকলে মালপত্র বন্দরে পড়ে থাকবে, আর তাতে তার আর্থিক ক্ষতি হবে- এই চিন্তা করে ওই কর্মকর্তাকে ২ লাখ এবং পরে আরও ৮ লাখ টাকা দেন ঐ ব্যবসায়ী। এর পরও তিনি ফাইল না ছাড়ায় ওই ব্যবসায়ী কাস্টমস কমিশনারের কাছে যান। কাগজপত্র যাচাই করে তার চালান ছেড়ে দেন কমিশনার। এ পর্যায়ে সোনিয়া আক্তারের কাছে গিয়ে ঘুষের টাকা ফেরত চান ঐ ব্যবসায়ী। উত্তপ্ত আলোচনার পর টাকা ফেরত দিতে সম্মত হন কর্মকর্তা। পরে তিনি সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তার মাধ্যমে ৫০ হাজার টাকা ফেরত দেন। এ ঘটনার ভিডিও সেসময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপর ঐ সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে কর্মস্থল থেকে বদলি করলেও বহাল তবিয়তে রয়েছেন সোনিয়া আক্তার। ভিডিওসহ দুর্নীতি দমন কমিশনে এ বিষয়ে একটি অভিযোগ দায়ের হলেও সোনিয়া আক্তারকে গত সপ্তাহে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

নতুন দায়িত্ব গ্রহণের পর পানগাঁও আইসিটি বন্দর সচলে প্রতিবন্ধতা দূরীকরণে পদক্ষেপ নেন নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। মন্ত্রণালয়ের সভাকে স্টেক হোল্ডারদের নিয়ে এক সভায় মিলিত হন তিনি। সমাধানের উপায় হিসেবে বন্দরের গতি ফেরাতে একচ্ছত্রভাবে তুলা আমদানি সহায়ক হতে পারে বলে সভায় সিদ্ধান্ত হয়। এছাড়া বন্দরের কার্যক্রমকে নিরবচ্ছিন্ন রাখতে তাৎণিক চট্টগ্রাম বন্দর থেকে একটি অপারেটরসহ স্ক্যানার এই বন্দরে হস্তান্তরের সিদ্ধান্ত হয়। মন্ত্রীর এমন পদক্ষেপের পরেও পূর্ণভাবে সচল হচ্ছে না এই বন্দরটি। 

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে পানগাঁও কাস্টমস হাউজের কমিশনার ইসমাঈল হোসেন সিরাজীর সঙ্গে তার দপ্তরে গেলেও তাকে পাওয়া যায়নি। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ক্ষুদে বার্তা পাঠালেও এর কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।

এআই/ এফসি