• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: জুলাই ১৫, ২০১৯, ১০:৫৪ এএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৫, ২০১৯, ১০:৫৪ এএম

বন্ড মার্কেট উন্নয়নে নতুন পদক্ষেপ

বন্ড খেলাপিদের ঋণখেলাপিতে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ 

বন্ড খেলাপিদের ঋণখেলাপিতে তালিকাভুক্ত করার সুপারিশ 


দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজারের উন্নয়নে বন্ডের প্রতি জোর দিয়েছে এ সম্পর্কে গঠিত কমিটি। আর বন্ড ইস্যুকারী টাকা পরিশোধে ব্যর্থ হলে ঋণ খেলাপি হিসেবে বাংলাদেশ ব্যাংকের ক্রেডিট ইনফর্মেশন ব্যুরোতে (সিআইবি) চিহ্নিত করার সুপারিশ করেছে কমিটি। 

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ সূত্রে এ তথ্য জানা যায়। সূত্র জানায়, সম্প্রতি দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে করণীয় নিয়ে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ করেছে। এতে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ এবং মূলধন যোগানের জন্য বন্ড ইস্যুর প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। আর এ সুপারিশ বাস্তবায়নের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষকে (আইডিআরএ) চিঠি দিয়েছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ। আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের উপসচিব মুর্শেদা জামান স্বাক্ষরিত চিঠিতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে দীর্ঘমেয়াদি অর্থায়ন এবং মূলধন বাজার উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নের জন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ, অর্থ বিভাগ, বাংলাদেশ ব্যাংক,বিএসইসি, আইডিআরএ, এনবিআর,এফবিসিসিআই, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং এসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স এর সমন্বয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিবকে আহবায়ক করে একটি কমিটি গঠন করা হয়। 

কমিটি সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একাধিকবার মতবিনিময় সভা এবং কর্মশালা করে। আর স্টেকহোল্ডারদের মতামত পর্যালোচনা করে কমিটি ৯ দফা সুপারিশ প্রণয়ন করে। অর্থমন্ত্রীর অনুমতি নিয়ে এ ৯ দফা সুপারিশ দ্রুত বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য চিঠিতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আর তিন মাস পরপর ৯ দফা সুপারিশের বাস্তবায়নের অগ্রগতি নিয়ে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ পর্যালোচনা করবে বলে চিঠিতে জানানো হয়। কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, বন্ডের টাকা পরিশোধে ব্যর্থ ইস্যুকারীদের ঋণ খেলাপি হিসেবে চিহ্নিত করে বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইডি ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। যাতে তারা নতুন করে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে না পারে। বর্তমানে বন্ড এবং ডিবেঞ্চার খেলাপিরা কোনও বাধা ছাড়াই ব্যাংকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করছে। বিএসইসিকে সিআইবি ডাটাবেজে এক্সেস দেয়ার সুযোগ নিয়ে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে,বিএসইসি যেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সিআইবি ডাটাবেজে দ্রুত এক্সেস করে বন্ড ইস্যুকারীর বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রাপ্ত ঋণের রেকর্ড এবং ঋণ পরিশোধের ইতিহাস সহজেই যাচাই করতে পারে। এছাড়া কমিটির সুপারিশে আরো বলা হয়েছে, বন্ড অনুমোদন সহজীকরণ করার জন্য বিএসইসি থেকে অনুমোদন পাওয়ার পর বাংলাদেশ ব্যাংকের অনাপত্তির জন্য প্রেরণ করা হলে একই কার্যক্রমে দ্বৈত যাচাইকরণের দীর্ঘসূত্রিতা পরিহার করা। ব্যাংকের পুঁজিবাজারের এক্সপোজারের সংজ্ঞা পরিবর্তন করা অর্থাৎ বন্ডে বিনিয়োগ পুঁজিবাজারের এক্সপোজার গণনা থেকে বাদ দেয়া এবং ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের করপোরেট বন্ডের ক্ষেত্রে নতুন সিরিজ ইস্যুকরণের শর্ত হিসেবে আগের ইস্যু করার পদ্ধতি প্রয়োগের ক্ষেত্রে যুক্তি সঙ্গত পরিবর্তন আনা। 

সূত্র জানায়, বন্ডে বিনিয়োগকারীদের উত্সাহ বাড়াতে করহারে বিশেষ সুযোগ দিতে এনবিআরকে তিনটি সুপারিশ করেছে কমিটি। তাদের সুপারিশে বরা হয়েছে, স্ট্যাম্প শুল্ক বিনিয়োগকারীদের বন্ডে বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত করবে। ফলে বন্ড মার্কেট উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। সেক্ষেত্রে, অন্যান্য দেশের মতো একটি নির্দিষ্ট টাকার অংকে (থোক আকারে এক লাখ টাকা) নির্ধারণ করা যুক্তি সঙ্গত হবে। 

এই শুল্ক শুধুমাত্র কাগজ ভিত্তিক বন্ড ব্যবস্থায় প্রয়োগ করা উচিত অর্থাৎ ডিম্যাটেরিয়ালাইজড বন্ড এবং অন্যান্য সিকিউরিটিজে স্ট্যাম্প ডিউটি আরোপ পরিহার করা। বন্ড থেকে আয়ের ওপর কর আদায় এবং এটি প্রাপ্ত হওয়ার পর চার্জ করা যেতে পারে; এই প্রেক্ষাপটে অগ্রিম আয়কর বা উইথহোল্ডিং কর আদায়ের নিয়ম পরিবর্তন করে চূড়ান্ত পর্যায়ে আদায় করা যেতে পারে। 

অর্থাৎ সরকারি বন্ডের ক্ষেত্রে অর্জিত আয়ের উপর কর আদায়ের ব্যবস্থা নেয়া। এছাড়া শেয়ার ও বন্ড একই বিষয় নয় উল্লেখ করে কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, শেয়ার এবং বন্ড একই বিষয় নয়, তাই লেনদেনের ক্ষেত্রে ট্রানজেকশন কস্ট হিসেবে শেয়ারের উপর প্রযোজ্য ভলিউমের উপর শতকরা হারের পরিবর্তে বন্ডের ক্ষেত্রে প্রতি লেনদেনে নির্দিষ্ট হারে যৌক্তিক থোক পরিমাণ ধার্য করা যেতে পারে, ফলে মার্কেটে অধিকসংখ্যক বন্ড ট্রেড হবে যা বন্ড মার্কেট উন্নয়নে সহায়তা করবে। প্রসঙ্গত, ২০১৯-২০ অর্থবছরের বাজেট বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী বলেন, শিল্প বিনিয়োগে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহের আদর্শ মাধ্যম হচ্ছে পুঁজিবাজার। তবে বাংলাদেশে ব্যাংক খাত থেকে স্বল্পমেয়াদি আমানতের বিপরীতে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ প্রদানের প্রবণতা লক্ষ্যণীয়, যা পৃথিবীর অন্যান্য দেশে দেখা যায় না। এতে ভারসাম্যহীন অবস্থা তৈরি হয়। আর তাতে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং ঋণগ্রহীতারা। আমরা পুঁজিবাজার থেকে দীর্ঘমেয়াদি ঋণ সংগ্রহে ঋণগ্রহীতাদের উত্সাহ প্রদানে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। একটি গতিশীল বন্ড মার্কেটসহ অন্যান্য ইন্সট্রুমেন্ট যেমন ওয়েজ আর্নার্স বন্ড, ভেঞ্চার ক্যাপিটাল, ট্রেজারি বন্ড ইত্যাদির ব্যবহার উৎসাহিত করবো। 

এআই/আরআই
 

আরও পড়ুন