• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৭:৫৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : জুলাই ১৮, ২০১৯, ০৭:৫৭ পিএম

ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টের ভ্যাট ফাঁকি ১২৪ কোটি টাকা

ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টের ভ্যাট ফাঁকি ১২৪ কোটি টাকা

ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস লিমিটেডের বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৯৮ টাকা মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট ফাঁকি দেয়ার প্রমাণ পেয়েছে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর। আগস্ট ২০১১ থেকে এপ্রিল ২০১৪ মেয়াদের সম্পাদিত পুন:নিরীক্ষায় এ ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত অধিদপ্তর। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। 

সূত্র জানায়, ২০১৪ সালের ৪ মার্চ ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের নিরীক্ষা কার্যক্রম সম্পন্ন করার জন্য নিরীক্ষা দল গঠন করা হয়। দলটি ২০১৫ সালের ২ আগস্ট নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দেয়। সেখানে তারা ৫২ লাখ ৭৩ হাজার ১৯৬ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করেছিল। আর এ টাকা যথা সময়ে পরিশোধ না করায় প্রাথমিক হিসাবে ১১ লাখ ৪২ হাজার ৯৮০ টাকা সুদ নির্ধারণ করা হয়। প্রতিষ্ঠানটি প্রাথমিক তদন্তে উদঘাটিত বকেয়া ভ্যাট পরিশোধ করে। তবে প্রথম নিরীক্ষা প্রতিবেদনটি যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়নি এমন গোপন সংবাদ থাকায় এবং ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টসের বিরুদ্ধে বিপুল পরিমান ভ্যাট ফাঁকির সুস্পষ্ট প্রমাণ থাকায় ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা এবং তদন্ত অধিদপ্তরকে পুন:নিরীক্ষা করার জন্য নির্দেশ দেয় এনবিআর। আর পুন:নিরীক্ষায় ভ্যাট তদন্ত অধিদপ্তর কোম্পানিটির বিরুদ্ধে মোট ৫৭ কোটি ৫০ লাখ ৮৫ হাজার ৩৬৪ টাকা ভ্যাট ফাঁকির তথ্য উদঘাটন করে। এ টাকার সুদ ৬৭ কোটি ৬৭ লাখ ৫৫ হাজার ৩০ টাকাসহ মোট ১২৫ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার ৩৯৪ টাকা ভ্যাট কোম্পানিটি ফাঁকি দিয়েছে বলে উল্লেখ করে তদন্ত অধিদপ্তর।

তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে প্রথম নিরীক্ষায় যোগানদার সেবা খাতে উৎসে ভ্যাট কর্তনের হিসাব নিরুপনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য সকল খাত আমলে নেয়া হয়নি, যথাযথ সেবা কোড ব্যবহার করা হয়নি, ভ্যাট রেয়াত গ্রহণ করার বিষয়টি যাচাই করে বাতিলের বা সমন্বয়ের সুপারিশ করা হয়নি এবং নিরীক্ষা ফার্ম কর্তৃক নিরীক্ষা প্রতিবেদনের বিক্রয় মূল্য আমলে নেয়া হয়নি। 

সূত্র জানায়, প্রথম নিরীক্ষায় উদঘাটিত সুদসহ ফাঁকি দেয়া ভ্যাটের পরিমাণ ৬৪ লাখ ১৬ হাজার ১৭৬ টাকা। আর এ টাকার দাবি চূড়ান্ত না করা সত্ত্বেও কোম্পানিটির ফাঁকি দেয়া ৫২ লাখ ৭৩ হাজার ১৯৬ টাকা ভ্যাট পরিশোধ করে দেয়। তাই পুন:নিরীক্ষায় এ টাকা বাদ দিয়ে সুদসহ মোট ফাঁকির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ১২৪ কোটি ৬৫ লাখ ৬৭ হাজার ১৯৮ টাকা। আর এ টাকা আদায়ের জন্য সংশ্লিষ্ট অঞ্চলের কমিশনারের কাছে চিঠি দিয়েছে ভ্যাট নিরীক্ষা,গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ভ্যাট নিরীক্ষা, গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এএফএম আব্দুল্লাহ খান দৈনিক জাগরণকে জানান,তদন্ত দল ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টের বিরুদ্ধে ১২৪ কোটি টাকার ভ্যাট ফাঁকির প্রমাণ পেয়েছে। আর এই তদন্ত প্রতিবেদন সংশ্লিষ্ট দপ্তরে পাঠানো হয়েছে।


পুন:নিরীক্ষা প্রতিবেদনে আরো  বলা হয়েছে, কোম্পানির নিরীক্ষা মেয়াদে বিভিন্ন সময়ে অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল ক্রয় করে উৎপাদনে ব্যবহার করছে। তবে এনবিআরের বিভিন্ন এসআরও অনুযায়ী অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান থেকে কাঁচামাল ক্রয়ের বিপরীতে যোগানদার সেবায় নির্দিষ্ট হারে উৎস ভ্যাট কর্তনের বিধান থাকলেও ইফাদ মাল্টি প্রোডাক্টস তা পরিপালন করেনি। আর এ খাতে ৩৯ লাখ ২০ হাজার ৩৭৭ টাকা ভ্যাট ফাঁকি এবং এর উপর প্রতি মাসে ২ শতাংশ করে মোট সুদ ৩২ লাখ ৭৩ হাজার ৩৯৬ টাকা। অর্থাৎ সুদসহ মোট ভ্যাট ফাঁকি ৭১ লাখ ৯৩ হাজার ৭৭৩ টাকা। আইন অমান্য করে অতিরিক্ত ৭ লাখ ৯৯ হাজার ২৬৬ টাকা ভ্যাট রেয়াত নিয়েছে কোম্পানিটি। 

এদিকে নিরীক্ষা ফার্মের প্রতিবেদন পর্যালোচনায় তদন্ত দল দেখতে পায়, কোম্পানি কর্তৃপক্ষ বার্ষিক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখিত সরবরাহ মূল্যের চেয়ে ভ্যাট-১৯ এ মাসিক দাখিল পত্রে সরবরাহ মূল্য কম প্রদর্শন করেছে। ২০১১-১২ থেকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছর পর্যন্ত নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানিটি মোট ৫১৭ কোটি ২৩ লাখ ৩৯ হাজার ৬৫৬ টাকার পণ্য সরবরাহ করেছে। নিরীক্ষা প্রতিবেদনে ট্যারিফ মূল্যের বিক্রিত পণ্যের পরিমাণ ও মূল্য পৃথকভাবে দেখানো হয়নি। ফলে ন্যায় বিচারের স্বার্থে কোম্পানির কাছে বিক্রিত পণ্যের ট্যারিফ ও নন-ট্যারিফ মূল্য আলাদাভাবে দেয়ার জন্য চিঠি দেয়া হয়। এর প্রেক্ষিতে কোম্পানির পাঠানো তথ্য পর্যালোচনায় ট্যারিফ মূল্যে সরবরাহ করা পণ্যের মূল্য বাদ দিয়ে তদন্ত দল দেখতে পায় কোম্পানিটি ভ্যাট দাখিল পত্রে ৪৬৬ কোটি ৩৯ লাখ ২২ হাজার ৮৫৪ টাকার পণ্য সরবরাহের মূল্য কম দেখিয়েছে। এতে কোম্পানিটি ৫৬ কোটি ৪৮ লাখ ৮৭ হাজার ৪৫০ টাকা ভ্যাট ফাঁকি দিয়েছে। এর সুদ ৬৭ কোটি ৭৩ লাখ ৬৪ হাজার ৮৩৩ টাকাসহ মোট ভ্যাট ফাঁকি ১২৩ কোটি ২২ লাখ ৫২ হাজার ২৮৩ টাকা। এছাড়া নিরীক্ষা প্রতিবেদন অনুযায়ী উৎসে ভ্যাট বাবদ সুদসহ মোট ১ কোটি ২৩ লাখ ৯৪ হাজার ৩৩৮ টাকা ফাঁকি দিয়েছে কোম্পানিটি।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ইফাদ গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর আহমেদ দৈনিক জাগরণকে বলেন, আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে এই বিষয়ে জানতে পারিনি। ১২৪ কোটি টাকা ভ্যাট ফাঁকির বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ইফাদের পক্ষ থেকে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করতে পারব না বলে জানান তিনি।

এআই/বিএস