• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ, ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ১৪, ২০১৯, ১১:০৬ এএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৪, ২০১৯, ১১:১৩ এএম

সারাদেশের চামড়ার স্তূপ পোস্তায়

কম দামে কেনার অপেক্ষায় আড়তদাররা

কম দামে কেনার অপেক্ষায় আড়তদাররা
সারাদেশে থেকে আসা চামড়ার স্তূপ দেয়া হয়েছে পোস্তায় -ছবি : কাশেম কারুন

ঈদের পরদিনই সারাদেশ থেকে আসা কাঁচা চামড়ার স্তূপ জমেছে পোস্তায়। কিন্তু আড়তদাররা দামই বলছেন না আবার যারা দর-দাম করছেন তারা কেনা দামের চাইতেও কম বলছেন। এতে চরম বিপাকে পড়ছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। না পারছেন চামড়া বিক্রি করতে না পারছেন ফেলে দিতে। এসব কারণে রাস্তার পাশে বা ট্রাকেই চামড়ার স্তূপ জমছে। মূলত কমদামে চামড়া কেনার সুযোগ খুঁজছেন আড়তদাররা। মৌসুমী ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট তৈরর অভিযোগ তুলেছেন।

পোস্তা ঘুরে জানা গেছে, কয়েকজন মৌসুমি ব্যবসায়ী চামড়া নিয়ে এলেও শত চেষ্টা করেও বিক্রি করতে পারছেন না। এ পরিস্থিতির জন্য ট্যানারি ও আড়তদাররা একে অপরকে দোষারোপ করছেন। একইসঙ্গে রয়েছে নানা অব্যবস্থাপনাসহ সিন্ডিকেটের অভিযোগ। এখানেই শেষ নয়, চামড়ার আড়তদার ও মৌসুমি ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে চামড়ার দাম কমে যাচ্ছে। ফলে চামড়ার বাজার সঙ্কটে পড়ছে বলে মনে করছেন ট্যানারি মালিকরা। কিন্তু এ অভিযোগ মানতে রাজি নন আড়তদাররা।

আড়তদারদের দাবি, চামড়ার বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই। ট্যানারি মালিকরা বাজারে এ সঙ্কট তৈরি করছেন। তারা বকেয়া পরিশোধ করে দিলে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো না। তাদের হাতে টাকা না থাকায় চামড়া কিনতে পারছেন না। ট্যানারি মালিকরা বকেয়া পরিশোধ করলেই সমস্যা থাকবে না। বাজারও আগের মতোই চাঙা হয়ে যাবে।

তবে পোস্তায় চামড়া নিয়ে আসা একাধিক মৌসুমি ব্যবসায়ী বলছেন, আড়তদারদের শক্তিশালী সিন্ডিকেটের জন্য পোস্তার চামড়া ব্যবসার আজ এ অবস্থা। তারা পানির দামে চামড়া কেনার আশায় এ সিন্ডিকেটে করে রেখেছেন।

কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেয়ার কাজ চলছে -ছবি : কাশেম হারুন

সরেজমিনে দেখা গেছে, কোনো কোনো আড়তে কাঁচা চামড়া সংরক্ষণে লবণ দেয়ার কাজ চলছে। আড়তে চামড়া লবণজাত অবস্থায় থাকবে ২০ থেকে ২৫ দিন। এরপর এখান থেকে চামড়া নেবেন ট্যানারি মালিকরা। পুঁজি না থাকায় পোস্তা এলাকার অধিকাংশ আড়তদার চামড়া কেনা বাদ দিয়ে অবসর সময় পার করছেন। তাদের মধ্যে কর্মচাঞ্চল্যতা নেই। নেই চামড়া কেনায় কোনো আগ্রহ। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ট্রাক ও পিকাআপে করে চামড়া এলেও সেগুলো সেখানে পড়ে থাকতে দেখা গেছে।

মৌসুমি ব্যবসায়ীরা বাসা-বাড়ি থেকে চামড়া কিনেছেন ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা দরে। কিন্তু মধ্যস্বত্ত্বভোগীদের কাছে বিক্রি করতে গিয়ে বিপর্যয়ের মুখে পড়েন তারা। আড়তদাররা চামড়া কেনার টাকার অভাব আর সংরক্ষণের কথা বলে বেকাদায় ফেলে দিচ্ছে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের। আর কম দামে কিনে মধ্যস্বত্ত্বভোগীরা মুনাফা রেখেই সেই চামড়া বিক্রি করেন আড়তদারদের কাছে। যা পরে আড়তদাররা লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে ট্যানারি মালিকদের কাছে সরকার নির্ধারিত দামে বিক্রি করবেন। এভাবেই চামড়ার বাজারে দরপতন হচ্ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে চামড়ার আড়তদার সমির আলী বলেন, গত ২০ থেকে ২৫ বছর ধরে চামড়া ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। কোরবানির ঈদের পর গত দুই ৩ বছর ধরে পোস্তা এলাকার যে চিত্র তা আগে কখনও দেখিনি। কোনো ব্যবসায়ীর হাতে টাকা নেই। ট্যানারির মালিকরা বেকেয়া ও চামড়া কেনার জন্য অগ্রিম ১০ শতাংশ টাকা দেয়ার কথা থাকলেও তা দিচ্ছেন না। পাশাপাশি ব্যাংক থেকেও ঋণ পাওয়া যায়নি। ফলে আড়তদারদের হাতে নগদ টাকা না থাকায় তারা চামড়া কিনতে পারছে না।

রাজশাহী থেকে পোস্তায় চামড়া নিয়ে আসা রাকিবুল ইসলাম দৈনিক জাগরণকে বলেন, লবণযুক্ত ১৭০টি গরুর চামড়া নিয়ে এসেছি। কিন্তু আড়তদাররা চামড়ার দাম বলছে না। যারা দাম বলছে, সে দামে বিক্রি করলে পুঁজি থাকবে না। আড়তদাররা সিন্ডিকেট করে চামড়া কিনছে না বলে মনে করেন তিনি।

কুমিল্লা থেকে পিকআপে করে ১৫০টি চামড়া নিয়ে এসেছেন বিল্লাল হোসেন। তিনি বলেন, গত ৩০ থেকে ৩৫ বছর ধরে বিভিন্ন স্থান থেকে চামড়া কিনে পোস্তায় নিয়ে আসি। কিন্তু এ বছরের মতো দরপতন কোনো দিন দেখনি। ট্যানারি মালিক ও আড়তদাররা মিলে এ ব্যবসায় একটি অদৃশ্য সিন্ডিকেট তৈরি করে নষ্ট করে দিয়েছে। 

তবে চামড়ার বাজারের সিন্ডিকেটের বিষয়টি সরাসরি অস্বীকার করেছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেলোয়ার হোসেন। 

তিনি বলেন, চামড়ার বাজারে কোনও সিন্ডিকেট হয় না। প্রতি বছর ট্যানারি মালিকরা সিন্ডিকেটের কথা বলেন। কিন্তু এটি সঠিক নয়। সমস্যা হয় তাদের কাছে পাওনা টাকা যখন আমরা পাই না তখনই। তারা প্রচুর টাকা বকেয়া রেখেছেন। তাদের কাছে ৩৫০ কোটি টাকার মতো পাওনাদার আড়তদাররা। কিন্তু আমরা একেবারেই চামড়া কিনছি না বিষয়টি তেমন নয়। কিন্তু আমরা যে পরিমাণ কিনতে চাচ্ছি তা পুঁজির অভাবে কিনতে পারছি না। সবার কাছে টাকা থাকলে বাজারে প্রতিযোগিতা থাকতো, ফলে চামড়ার এত দরপতন হতো না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদ বলেন, চামড়ার বাজার অস্থিতিশীল করছে পোস্তার ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, আমাদের কাছে ২৫০ কোটি টাকা পায়, এটি একদমই সত্য নয়। তারা আমাদের কাছে ১৫০ কোটি টাকার মতো পাওনা আছেন। অধিকাংশ ট্যানারি মালিকই তাদের টাকা পরিশোধ করেছেন।

তিনি বলেন, কাঁচা চামড়ার বাজারটা তারাই নিয়ন্ত্রণ করে, সেখানে আমাদের কোনো হাত নেই। মৌসুমি ব্যবসায়ীরা যখন পোস্তায় চামড়া বিক্রি করতে যান, তখন তারা সেটি ৩০০ কিংবা তার চেয়ে কিছু বেশি টাকা দিয়ে চামড়া কেনেন। কিন্তু আমাদের কাছে বিক্রির সময় তারা সরকার নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করেন। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। কিন্তু পোস্তার ব্যবসায়ীদের ক্ষতিগ্রস্ত হবার বিষয়টি সঠিক নয়। এখানে সিন্ডিকেটও কাজ করে।

 

এআই/একেএস

আরও পড়ুন