• ঢাকা
  • শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১
প্রকাশিত: আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০৯:২৭ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ১৭, ২০১৯, ০৯:২৭ পিএম

ত্রিপক্ষীয় সংকটে দেশের চামড়া শিল্প

ত্রিপক্ষীয় সংকটে দেশের চামড়া শিল্প

সরকার দাম নির্ধারণ করে দিলেও এবার ভয়াবহ দরপতন হয়েছে কোরবানির কাঁচা চামড়ার। এই দরপতন ঠেকাতে রপ্তানির ঘোষণা দেয় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এতে বাধ সাধে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ট্যানার্স এসোসিয়েশন। তবে এখন শুরু হয়েছে আরো নতুন জটিলতা। আড়তদাররা তাদের পাওনা না পেলে ট্যানারিতে চামড়া দেবেন না বলে শনিবার (১৭ আগস্ট) সংবাদ সম্মেলন করে জানিয়েছেন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি। এতে ত্রিপক্ষীয় সংকটে পড়েছে চামড়া শিল্প। আর এসব জটিলতা নিরসনে আগামীকাল রোববার (১৮ আগস্ট) বৈঠকে বসবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। 

আড়তদাররা বলছেন, ট্যানারি মালিকরা যদি তাদের পাওনা পরিশোধ না করেন তাহলে তারা চামড়া দেবেন না। আড়তদাররা মিলে বৈঠক করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আর ট্যানারি এসোসিয়েশনের নেতারা কাঁচা চামড়া রপ্তানি প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এদিকে শিল্প সচিব আজ শনিবার সাভারে অংশীজনদের আলোচনায় অংশ নিয়ে মৌসুমী ব্যবসায়ীদের দুষেছেন। এতে একে তো মৌসুমী ব্যবসায়ীদের আম-ছালা সবই গেল। পরিশেষে বদনামি হলেন সরকারের কাছে। 

এই অনুষ্ঠানে শিল্প সচিব মো. আব্দুল হালিম বলেন, চামড়া যথাযথভাবে সংরক্ষণ না করে মৌসুমী ব্যবসায়ীরা কাঁচা চামড়া নষ্ট করেছেন। তবে অন্যান্য স্থানে যথাযথভাবে চামড়া সংরক্ষণ করা হয়েছে। আর পুরো দেশের চিত্র ভিন্ন।

কাঁচা চামড়া আড়তদারদের সংগঠন বাংলাদেশ হাইড অ্যান্ড স্কিন মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিএইচএসএমএ) সভাপতি দেলোয়ার হোসেন বলেন, ট্যানারি মালিকদের কাছে আড়তদারদের প্রায় ৪০০ কোটি টাকা পাওনা রয়েছে। এ টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ট্যানারি মালিকদের কাছে চামড়া বিক্রি করব না। সভায় আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আগামীকাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে ট্যানারি মালিক, আড়তদার ও কাঁচা চামড়া সংশ্লিষ্টদের বৈঠক আছে। সেখানে আলোচনার পর আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব। আজ চামড়া বিক্রি করার কথা থাকলেও আমরা এখন থেকে আর বিক্রি করব না।

ট্যানারি মালিকদের কারণে চামড়ার দাম কমেছে- অভিযোগ করে আড়তদারদের এ নেতা বলেন, ট্যানারিগুলো বকেয়া টাকা না দেয়ায় এবার অর্থের অভাবে চামড়া কিনতে পারিনি। অন্যান্য বছর ঈদের আগেরদিন আড়তদারদের সঙ্গে আলোচনা করলেও এবার তারা কোনো কথা বলেনি। তারা যদি আমাদের আশ্বস্ত করত ন্যায্য দামে চামড়া কিনতে তাহলে এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো না। কিন্তু এটি না করে উল্টো মিডিয়ার কাছে নানা কথা বলেছেন। এ কারণে আরও দর কমেছে। তাই ট্যানারি মালিকরাই এ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছেন।

তবে পূর্বঘোষণা অনুযায়ী কোরবানির পশুর লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া কেনা শুরু করেন ট্যানারি মালিকরা। শনিবার সকালে বিষয়টি নিশ্চিত করেন বাংলাদেশ ট্যানার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও সালমা ট্যানারির মালিক সাখাওয়াত উল্লাহ। তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা ট্যানারি মালিকরা লবণযুক্ত কাঁচা চামড়া আজ থেকে কেনা শুরু করেছি। আমরা সরকার নির্ধারিত মূল্যে আগামী দুই মাস চামড়া সংগ্রহ করব। যেসব চামড়া ভালোভাবে সঠিক সময়ে লবণ দিয়েছে ওইসব চামড়া ভালো দামে কেনা হবে। এছাড়া কাল বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের বৈঠকের পর বিস্তারিত জানানো যাবে।

প্রসঙ্গত, এবার কোরবানির পশুর চামড়া নিয়ে চলছে নৈরাজ্য। পানির দামে চামড়া কেনেন ব্যবসায়ীরা। আবার অনেক চামড়া বিক্রি না হওয়ায় রাস্তায় পচেছে। এবারের কাঁচা চামড়া বিগত ৩০ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ দরপতন হয়। কোরবানির পশুর চামড়া রাস্তায় পচে নষ্ট হয়। বিনামূল্যেও নেয়নি। এ নিয়ে বিপাকে পড়েন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। সিন্ডিকেট করে ফায়দা লুটছে পোস্তার আড়তদার ও ট্যানারি মালিকরা। এ নিয়ে দু’পক্ষই পল্টাপাল্টি অভিযোগ করছে। এ জন্য দু’পক্ষকে নিয়ে রোববার বৈঠকে বসছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন ঊর্ধতন কর্মকর্তা বলেন, কাঁচা চামড়া রফতানির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করা হয়নি। তবে এটাও ঠিক ঢালাওভাবে কাঁচা চামড়া রফতানি করার অনুমোদন দিলে দেশে চামড়া শিল্প উন্নয়নে কিছু বাধাগ্রস্ত হবে। তাই আমরা চাই না একটা সম্ভাবনাময় খাত বাধাগ্রস্ত হোক। তবে আমরা এ-ও হতে দিতে পারি না যে, চামড়া বিক্রি হবে না। দাম না পেয়ে মানুষ চামড়া পুঁতে ফেলবে, নদীতে ফেলে দেবে। তাই আমরা ঢালাওভাবে না দিয়ে কেস টু কেস ভিত্তিতে কাঁচা চামড়া রফতানিতে অনুমোদনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।

এর আগে সাভারে ট্যানারি স্থানান্তর, রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়া ও অর্থ সংকটের কারণে এ বছর চামড়ার দাম কমানোর সুপারিশ করেছিলেন কাঁচা চামড়ার ব্যবসায়ী ও ট্যানারি মালিকরা। এসব বিবেচনায় সরকার দাম না বাড়িয়ে আগের মূল্য নির্ধারণ করে। এরই সুযোগ নিয়েছে কিছু সিন্ডিকেট বলেও অভিযোগ সংশ্লিষ্টদের।

এআই/ এফসি

আরও পড়ুন