• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৯ মার্চ, ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০
প্রকাশিত: আগস্ট ২১, ২০১৯, ০১:০৫ পিএম
সর্বশেষ আপডেট : আগস্ট ২১, ২০১৯, ০১:০৫ পিএম

খোলা আকাশে নিচে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা ইউরিয়া সার

খোলা আকাশে নিচে নষ্ট হচ্ছে আমদানি করা ইউরিয়া সার

যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে দেশের বৃহত্তম ইউরিয়া উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান যমুনা সার কারখানার উৎপাদন বন্ধ রয়েছে প্রায় ১ বছর ধরে। ফলে সার কারখানার সাথে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত কয়েক হাজার শ্রমিক কর্মচারী কর্মহীন হয়ে মানবেতর দিন কাটাচ্ছে। কারখানায় উৎপাদন বন্ধ থাকায় বিদেশ থেকে আমদানি করা কোটি কোটি টাকার ইউরিয়া সার খোলা আকাশের নিচে রাখায় জমাট বেঁধে নষ্ট হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ বলছে ডিসেম্বরে যমুনা সার কারখানা চালু হবে। 

জানা গেছে, গেল বছরের ২৭ নভেম্বর সরিষাবাড়ী উপজেলার তারাকান্দি যমুনা সার কারখানার এ্যামোনিয়া প্লান্টের সিনথেসিস সেকশনের স্টার্টার হিটারের হাইড্রোজেন গ্যাস পাইপ লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইউরিয়া উৎপাদন বন্ধ হয়। যমুনা সার কারখানায় প্রতিদিন ১ হাজার ৭শ মেট্রিক টন দানাদার ইউরিয়া সার উৎপাদন হত। উৎপাদিত এসব সার জামালপুর, শেরপুর, টাঙ্গাইল এবং উত্তরবঙ্গের ১৬ জেলায় ডিলারের মাধ্যমে কৃষকের কাছে সরবরাহ করা হতো। যমুনা সার কারখানার হিসেব মতে ২০১৭-২০১৮, ২০১৮-২০১৯ ও ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে সৌদি আরব, চায়না, কাতার, মিশর ও আরব আমিরাত থেকে ৩ লাখ ৫৫ হাজার ৮ দশমিক ৮৫ মেট্রিক টন ইউরিয়া সার আমদানি করা হয়েছে। বর্তমানে এই কারখানার নিজস্ব উৎপাদিত ১শ ২৭ মেট্রিক টন ও বিদেশ থেকে আমদানি করা ৩৯ হাজার ৯শ ৫৪ মেট্রিক টন ই্উরিয়া সারসহ কারখানাটিতে মোট ৪০ হাজার ৮১ মেট্রিক টন সার মজুত রয়েছে। আমদানি করা ৫০ কেজির প্রতি বস্তা ইউরিয়া সার ৭শ টাকা দামে ডিলারের মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। তবে আমদানি করা ইউরিয়া সারগুলো খোলা আকাশে নিচে স্তুপ করে রাখায় বৃষ্টিতে ভিজে নষ্ট হয়ে জমাট বেঁধে ওজনে কমে যাওয়াসহ সারের গুনগত মান কমে যাচ্ছে বলে অভিযোগ করেছে ডিলাররা। 

কারখানা সূত্র জানায়, যমুনা সার কারখানার দুটি ব্যাগ গুদামের ধারণ ক্ষমতা ১২ হাজার মেট্রিক টন। আমদানি করা সারের মধ্যে ১২ হাজার মেট্রিক টন ব্যাগ গুদামে রাখার পর অবশিষ্ট ২৮ হাজার মেট্রিক টন ইউরিয়া সার কারখানার ভেতরে বিভিন্ন ইয়ার্ডে রাখা হয়েছে। ইয়ার্ডে রাখা সারগুলো পলিথিন দিয়ে ঢেকে রাখা হয়েছে।

সরেজমিনে যমুনা সার কারখানায় গিয়ে দেখা গেছে, কারখানার বিভিন্ন রাস্তার উপর স্তুপ করে রাখা হয়েছে আমদানি করা সার। উপরে পলিথিন দেয়া হলেও নিচ দিয়ে পানি ঢোকে অনেক সার নষ্ট হয়েছে। অনেক বস্তা জমাট বেঁধেছে, আবার অনেক বস্তা গলে গেছে। জমাট বাঁধা এসব সার ডিলারদের মাঝে সরবরাহ করা হচ্ছে। ছেড়া ফাটা এসব সার পরিবহন করতে বিপাকে পরছে পরিবহন চালকরা। পরিবহন চালকদের সাথে ডিলারদের ঝগড়া বিবাদ হচ্ছে ছেড়া ফাটা ওজনে কম থাকা সারের বস্তা নিয়ে।  

তারাকান্দি ট্রাক ও ট্যাঙ্কলড়ি মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আশরাফুল আলম মানিক জানান, আমদানি করা সার যথাযতভাবে সংরক্ষণ না করায় রোদে-বৃষ্টিতে সার নষ্ট হচ্ছে। এসব সার পরিবহনে নানা সমস্যা হচ্ছে। কারখানার ভেতরে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রাখা সারগুলো জমাট বেঁধেছে। বস্তাগুলো ফেটে ও পচে গলে গেছে। এতে সারের গুণগত মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। কারখানার ভেতরে দুটি গুদামের চাল নষ্ট হওয়ায় ভেতরে বৃষ্টির পানি ঢোকছে। পাশাপাশি কারখানা বন্ধ থাকায় ট্রাক মালিকরা তাদের ঋণের কিস্তিও দিতে পারছেন না। ফলে অনেক মালিক তাদের ট্রাক বিক্রি করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। ট্রাক না চলায় চালক ও শ্রমিকের পরিবারগুলো মানবেতর জীবন যাপন করছে। মানববেতর জীবন যাপন করছে কারখানা সংশ্লিষ্ট শ্রমিকরা। তিনি যমুনা সার কারখানা দ্রুত চালু এবং সার যথাযথ সংরক্ষণ করতে নতুন গুদাম তৈরির দাবি জানান।
  
জামালপুর জেলা সার ও বীজ মনিটরিং কমিটির সদস্য সার ব্যবসায়ী ইকরামুল হক নবীন জানান, যমুনা সার কারখানা থেকে সরবরাহ করা জমাট বাঁধা সার নিয়ে চরম বিপাকে রয়েছেন সার ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়াও অনেক বস্তা ছেড়া ফাটা ও ওজনে কম থাকে। জমাট বাঁধা সার কৃষকরা নিতে চান না। এসব সমস্যা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানিয়েও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন তিনি।

সার ব্যবসায়ী আবুল হোসেন জানান, খোলা আকাশের নিচে সার ফেলে রেখে নষ্ট করা হচ্ছে। এসব সার সংরক্ষণ করতে দ্রুত গুদাম নির্মাণ করা প্রয়োজন। পাশাপাশি কারখানাটি দ্রুত চালুর দাবিও জানান তিনি।

যমুনা সার কারখানার ব্যবস্থাপনা পরিচালক খান জাবেদ আনোয়ার বলেন, কারখানাটি চালু করতে কাজ করা হচ্ছে। জাপানের মিতসুবিশি কোম্পানির সাথে কথা হয়েছে। চলতি বছরের ডিসেম্বরে কারখানাটি চালু করা যাবে বলে তিনি আশা করেন। তবে অন্যান্য বিষয়ে তিনি কোন কথা বলতে রাজি হননি। বিসিআইসির পাবলিক রিলেশন অফিসারের সাথে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি।

কেএসটি

আরও পড়ুন